Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নবাবগঞ্জে ২ যুগেও নির্মিত হয়নি সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজাপুর নয়াডাঙ্গী খালপাড়ের বর্ষা এলেই ডুবে যায় বাঁশের সাঁকো। আর তার ওপর ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১২ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজাপুর, নয়াডাঙ্গী, কেদারপুর, রায়পুর, ঘোষাইল, শ্যামপুর ও ধূলশুড়া গ্রামের লোকজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই পথে সাঁকো পার হয়ে ঘোষাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও ঘোষাইল বাজার, বারুয়াখালী বাজার, বান্দুরা বাজার, মসজিদ, ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জন প্রতিনিধিদের কাছে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানানো হয়েছে অনেক বার। কিন্ত কেউ কথা রাখছে না। তারা দেব-দিচ্ছি করে সময় পার করেছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া, সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে আনা-নেওয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ফলে কৃষি সমৃদ্ধ এই এলাকায় আজও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থেরও সাশ্রয়।

এলাকাবাসী জানান, শুকনো মৌসুমে তারা বাঁশ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি করেন। এই সাঁকো দিয়ে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষার শুরুতে চলাচলের একমাত্র সাঁকোটিও ডুবে যায়। কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় খালের পাড়। প্রায় সময় সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ ভাঙা ছিল সাঁকোটি। এলাকার যুবকরা মিলে সংস্কার কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেছে। প্রতি বছরই দুই পাড়ের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ খুটি। জনপ্রতিনিধিরা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। তাই অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রাজাপুর গ্রামের মোতালেব খান বলেন, কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। বর্ষাকালে সন্ধ্যায় নৌকা পাওয়া যায় না। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে যাওয়া দরকার এমন পরিস্থিতিতে পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার হোসেন বলেন, বর্ষা আসলেই ডুবে যায় সাঁকোটি। এই সময়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও অনেক উপকৃত হবে।

কলেজশিক্ষার্থী ইশিতা খান বলেন, আমাদের সারাবছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা এলে নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। সাঁকোটি ভেঙে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলেই আমাদের দুর্ভোগ শেষ হবে।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার বলেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন, তাই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তা না হলে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবো কিভাবে। উপজেলা থেকে তো একটা ফান্ড থাকতে হবে। আমরা যখন যেভাবে দিক নির্দেশনা পাই সেভাবেই কাজ করি।

এলজিইডির নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, সাঁকোটির ব্যাপারে আমার জানা নেই। আপনার কাছেই শুনলাম। কোনো জনপ্রতিনিধি এ নিয়ে কখনো কিছু বলে নাই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

নবাবগঞ্জে ২ যুগেও নির্মিত হয়নি সেতু

প্রকাশের সময় : ০৪:০৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজাপুর নয়াডাঙ্গী খালপাড়ের বর্ষা এলেই ডুবে যায় বাঁশের সাঁকো। আর তার ওপর ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১২ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজাপুর, নয়াডাঙ্গী, কেদারপুর, রায়পুর, ঘোষাইল, শ্যামপুর ও ধূলশুড়া গ্রামের লোকজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই পথে সাঁকো পার হয়ে ঘোষাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও ঘোষাইল বাজার, বারুয়াখালী বাজার, বান্দুরা বাজার, মসজিদ, ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জন প্রতিনিধিদের কাছে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানানো হয়েছে অনেক বার। কিন্ত কেউ কথা রাখছে না। তারা দেব-দিচ্ছি করে সময় পার করেছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া, সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে আনা-নেওয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ফলে কৃষি সমৃদ্ধ এই এলাকায় আজও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থেরও সাশ্রয়।

এলাকাবাসী জানান, শুকনো মৌসুমে তারা বাঁশ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি করেন। এই সাঁকো দিয়ে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষার শুরুতে চলাচলের একমাত্র সাঁকোটিও ডুবে যায়। কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় খালের পাড়। প্রায় সময় সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ ভাঙা ছিল সাঁকোটি। এলাকার যুবকরা মিলে সংস্কার কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেছে। প্রতি বছরই দুই পাড়ের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ খুটি। জনপ্রতিনিধিরা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। তাই অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রাজাপুর গ্রামের মোতালেব খান বলেন, কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। বর্ষাকালে সন্ধ্যায় নৌকা পাওয়া যায় না। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে যাওয়া দরকার এমন পরিস্থিতিতে পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার হোসেন বলেন, বর্ষা আসলেই ডুবে যায় সাঁকোটি। এই সময়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও অনেক উপকৃত হবে।

কলেজশিক্ষার্থী ইশিতা খান বলেন, আমাদের সারাবছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা এলে নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। সাঁকোটি ভেঙে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলেই আমাদের দুর্ভোগ শেষ হবে।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার বলেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন, তাই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তা না হলে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবো কিভাবে। উপজেলা থেকে তো একটা ফান্ড থাকতে হবে। আমরা যখন যেভাবে দিক নির্দেশনা পাই সেভাবেই কাজ করি।

এলজিইডির নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, সাঁকোটির ব্যাপারে আমার জানা নেই। আপনার কাছেই শুনলাম। কোনো জনপ্রতিনিধি এ নিয়ে কখনো কিছু বলে নাই।