Dhaka রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন সংবিধান ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি : আখতার হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৯৭২ সালে তৈরি হওয়া সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হবে তার মাধ্যমে এদেশের মানুষ একটা নতুন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পাবে। এই আকাঙ্ক্ষা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো মানে থাকে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা তার আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ধরনটা কী রকম হবে, সেটা জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আমি যদি বিদ্যমান সংবিধানকে বহাল তবিয়তে রেখে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে ওই সংবিধানের মধ্য দিয়ে এদেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই আমাদের দাবি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। নতুন সংবিধানের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি সামনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে এনসিপি যেকোনো সময় সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত।

‘যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, সেগুলো কেবল সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে। সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো পরের সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণেই আমরা নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছে। সরকার একটা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে একটা নতুন সংবিধান উপহার দিতে পারে।’

এনসিপি সদস্য বলেন, যেভাবে জুলাই সনদের অঙ্গীকার খসড়ার মধ্যে বলা হয়েছে, তাতে করে এ বিষয়গুলোকে পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা খেয়াল করা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবনার ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে না। যেসব বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়গুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার কোনো বিকল্প নেই।

আখতার হোসেন বলেন, একটা সংবিধানের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোতো আমূল পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তনগুলোকে টেকসই করতে হলে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। নতুন সংবিধান- যে সংবিধানকে তার ভিত্তিমূল নিয়ে হাই কোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভবপর হবে না। কিন্তু এখানে যেভাবে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, যে সংশোধনী ও প্রস্তাবনাগুলো সংবিধানের উপরে প্রাধান্য পাবে; কিন্তু বাস্তবতা শুধু মূল সংবিধানকে প্রশ্ন করা যায় না।

তিনি বলেন, মূল সংবিধান ব্যতিরেকে যত সংশোধনী নিয়ে আসা হোক, যত প্রস্তাবনা নিয়ে আসা হোক, সেগুলোকে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যায়, সুপ্রিম কোর্টে সেটার ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাখ্যাগুলো দিতে পারে। এ সম্ভাবনার জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে।

একমত হওয়া বিষয়গুলো যে দলিলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে, তার নাম ‘জুলাই সনদ’ হওয়ার কথা ছিল মন্তব্য করে এনসিপি নেতা আখতার বলেন, কিন্তু আমরা হঠাৎই খেয়াল করছি, আমাদের সামনে কমিশন যখন খসড়া উপস্থাপন করেছেন, তখন জুলাই সনদকে জুলাই জাতীয় সনদ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছেন। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষেরা নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর কথা ভেবেছে, সেই ডকুমেন্টের শুরুর নাম জুলাই সনদ হিসেবেই নামকরণ করা প্রয়োজন। জুলাই জাতীয় সনদ এ কথার মধ্য দিয়ে মানুষের জুলাই আন্দোলনের অবদানকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও একমত হওয়া বিষয়গুলোকে গাইডেন্স প্রিস্নিপাল হিসেবে গ্রহণ করে নতুন সংবিধানে সেগুলো যুক্ত করতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ কমিশনে যে নীতিগত বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি, সে বিষয়গুলো টেক্সট কীভাবে হবে তা ঐক্যমত কমিশনে আলোচনা হয় নাই। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে জনপ্রতিনিধিরা আসবেন তারা সে টেক্সটগুলো রেডি করবেন।

জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধানের ৬০ থেকে ৭০টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আসবে মন্তব্য করে আখতার বলেন, এত বৃহৎ পরিবর্তন, সেটা সংবিধান পুনর্লিখন করারই সমান। যখন সংবিধানকে নতুন করে লিখতেই আমাদের হচ্ছে, সেখানে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধানের প্রণয়ন করার অনেকে কেন বাধা দেখেন সে বিষয়টি আমাদের কাছে ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি করেছে।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্যসচিব সাঈদ মোস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সেনাবাহিনীর সমর্থন না থাকলে এই সরকার টিকবে না : ফরহাদ মজহার

নতুন সংবিধান ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি : আখতার হোসেন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৯৭২ সালে তৈরি হওয়া সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হবে তার মাধ্যমে এদেশের মানুষ একটা নতুন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পাবে। এই আকাঙ্ক্ষা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো মানে থাকে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা তার আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ধরনটা কী রকম হবে, সেটা জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আমি যদি বিদ্যমান সংবিধানকে বহাল তবিয়তে রেখে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে ওই সংবিধানের মধ্য দিয়ে এদেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই আমাদের দাবি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। নতুন সংবিধানের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি সামনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে এনসিপি যেকোনো সময় সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত।

‘যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, সেগুলো কেবল সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে। সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো পরের সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণেই আমরা নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছে। সরকার একটা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে একটা নতুন সংবিধান উপহার দিতে পারে।’

এনসিপি সদস্য বলেন, যেভাবে জুলাই সনদের অঙ্গীকার খসড়ার মধ্যে বলা হয়েছে, তাতে করে এ বিষয়গুলোকে পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা খেয়াল করা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবনার ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে না। যেসব বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়গুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার কোনো বিকল্প নেই।

আখতার হোসেন বলেন, একটা সংবিধানের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোতো আমূল পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তনগুলোকে টেকসই করতে হলে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। নতুন সংবিধান- যে সংবিধানকে তার ভিত্তিমূল নিয়ে হাই কোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভবপর হবে না। কিন্তু এখানে যেভাবে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, যে সংশোধনী ও প্রস্তাবনাগুলো সংবিধানের উপরে প্রাধান্য পাবে; কিন্তু বাস্তবতা শুধু মূল সংবিধানকে প্রশ্ন করা যায় না।

তিনি বলেন, মূল সংবিধান ব্যতিরেকে যত সংশোধনী নিয়ে আসা হোক, যত প্রস্তাবনা নিয়ে আসা হোক, সেগুলোকে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যায়, সুপ্রিম কোর্টে সেটার ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাখ্যাগুলো দিতে পারে। এ সম্ভাবনার জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে।

একমত হওয়া বিষয়গুলো যে দলিলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে, তার নাম ‘জুলাই সনদ’ হওয়ার কথা ছিল মন্তব্য করে এনসিপি নেতা আখতার বলেন, কিন্তু আমরা হঠাৎই খেয়াল করছি, আমাদের সামনে কমিশন যখন খসড়া উপস্থাপন করেছেন, তখন জুলাই সনদকে জুলাই জাতীয় সনদ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছেন। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষেরা নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর কথা ভেবেছে, সেই ডকুমেন্টের শুরুর নাম জুলাই সনদ হিসেবেই নামকরণ করা প্রয়োজন। জুলাই জাতীয় সনদ এ কথার মধ্য দিয়ে মানুষের জুলাই আন্দোলনের অবদানকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও একমত হওয়া বিষয়গুলোকে গাইডেন্স প্রিস্নিপাল হিসেবে গ্রহণ করে নতুন সংবিধানে সেগুলো যুক্ত করতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ কমিশনে যে নীতিগত বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি, সে বিষয়গুলো টেক্সট কীভাবে হবে তা ঐক্যমত কমিশনে আলোচনা হয় নাই। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে জনপ্রতিনিধিরা আসবেন তারা সে টেক্সটগুলো রেডি করবেন।

জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধানের ৬০ থেকে ৭০টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আসবে মন্তব্য করে আখতার বলেন, এত বৃহৎ পরিবর্তন, সেটা সংবিধান পুনর্লিখন করারই সমান। যখন সংবিধানকে নতুন করে লিখতেই আমাদের হচ্ছে, সেখানে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধানের প্রণয়ন করার অনেকে কেন বাধা দেখেন সে বিষয়টি আমাদের কাছে ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি করেছে।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্যসচিব সাঈদ মোস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।