Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন মন্ত্রীদের বহনে জন্য প্রায় ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য প্রায় ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিবহন পুলের (সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর) মাধ্যমে গাড়িগুলো প্রস্তুত রেখেছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হবে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সচিবিক কার্যক্রম করে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৫০টির মতো গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলেছে। আমরা প্রস্তুত রাখছি। ৫০ ড্রাইভার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকিও করছেন।

গাড়িগুলো পরিবহন পুলের দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে। গাড়িগুলোতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মনোগ্রাম লাগানো রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালের মধ্যে গাড়িগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বুঝে নেবে। এরপর সেগুলো নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাড়িতে তাদের আনতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। গাড়িগুলোতে করে তারা বঙ্গভবনে শপথ নেওয়ার জন্য যাবেন।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছি। বেশিরভাগ গাড়ি ক্যামব্রি ও ল্যান্সার ব্র্যান্ডের। ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখলেও এরমধ্যে থেকে তারা যতগুলো প্রয়োজন নেবে। ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখা মানে ৫০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। মন্ত্রিসভার যতজন সদস্য করা হবে, তার থেকে বেশি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়। অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী গাড়ি নিলেও কেউ-কেউ নেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভার শপথ উপলক্ষে কাছে গাড়ি চাওয়া হয়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতায় এবারও ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত থাকা গাড়িগুলো এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের কর্মকর্তারা এসে দেখে গেছেন। বুধবার বিকেলে বা বৃহস্পতিবার সকালে গাড়িগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, প্রস্তুতকৃত ৫০টি গাড়িতেই প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার মনোগ্রাম লাগিয়ে রাখা হয়েছে, সঙ্গে পতাকা টানানোর স্ট্যান্ডও রয়েছে। যেসব গাড়ি মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ হবে, তাদের গাড়ির পতাকা স্ট্যান্ডে পতাকা টানিয়ে প্রতিমন্ত্রী সম্বলিত স্টিকার খুলে ফেলা হবে। আর যেসব গাড়ি প্রতিমন্ত্রীরা বরাদ্দ পাবেন, তাদের গাড়িতে কোনো পরিবর্তন করতে হবে না। গাড়ির সঙ্গে ৫০ জন চালককেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অধীন ৫০টি গাড়ির জন্য ৫০ জন চালক নতুন মন্ত্রীদের জন্য অপেক্ষায় আছেন। চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা বর্তমান মন্ত্রীদের চালক হিসেবে কাজ করছেন, তাদের থেকেই বেশিরভাগ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব চালক নিজেরা যেতে চাচ্ছেন না বা মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি আছে, সেক্ষেত্রে নতুন চালককে ডিউটি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।

এখন গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের নয় ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

টেকনোক্র্যাট দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের পর এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মোট সদস্য ৪৪ জন। এরমধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠানটা বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। এ বছরও তাই হবে। প্রস্তুতির মধ্যে কী কী বিষয় আছে সাংবাদিকদের— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, যেখানে শপথ হয়, সেখানকার একটা প্রস্তুতি রয়েছে। ইনভাইটেশনের একটি তালিকা করতে হয়, সেই তালিকা করছি। ইনভাইটেশন কার্ড করতে হয়, সেটি আমরা করছি। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এটার জন্য কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, সেটা করছি। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ১৩০০ থেকে ১৪০০ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারবৃন্দ, সরকারের সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বিদেশি মিশন প্রধান, বিশিষ্ট নাগরিক, সিনিয়র সাংবাদিকসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অতিথির জন্য আমন্ত্রণপত্র তৈরি ও বিতরণ শুরু করেছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া নির্বাচনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী পরাজিত হয়েছেন।

কতজন মন্ত্রী এবারের সংসদে শপথ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তুতির ওই অংশে আমরা এখনো কাজে যাইনি। যখন আমরা নির্দেশনা পাব, তখনই কাজ শুরু করব। আমি সেই নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

সবশেষ সংসদে ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন। এবারও কমবেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৪০টি গাড়ি চাওয়ার মানে হচ্ছে নতুন ৪০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন। মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা যাই হোক, সব ধরনের সাপোর্ট দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত। অপর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট হয়। নওগাঁ-২ আসনের প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ওই আসনের নির্বাচনের জন্য নতুন করে শিডিউল দেয়া হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। আর সংঘর্ষের ঘটনায় ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচন এ মাসের ১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।

২৯৮ আসনের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২ আসন ও জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার বেশি। তারা ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে একটি করে আসন পেয়েছেন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমও কক্সবাজারের একটি আসন থেকে জয় পেয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিএনপি মব ভায়োলেন্সে বিশ্বাস করে না : এ জেড এম জাহিদ হোসেন

নতুন মন্ত্রীদের বহনে জন্য প্রায় ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত

প্রকাশের সময় : ০৩:৫০:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য প্রায় ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিবহন পুলের (সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর) মাধ্যমে গাড়িগুলো প্রস্তুত রেখেছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হবে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সচিবিক কার্যক্রম করে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৫০টির মতো গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলেছে। আমরা প্রস্তুত রাখছি। ৫০ ড্রাইভার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকিও করছেন।

গাড়িগুলো পরিবহন পুলের দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে। গাড়িগুলোতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মনোগ্রাম লাগানো রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালের মধ্যে গাড়িগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বুঝে নেবে। এরপর সেগুলো নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাড়িতে তাদের আনতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। গাড়িগুলোতে করে তারা বঙ্গভবনে শপথ নেওয়ার জন্য যাবেন।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছি। বেশিরভাগ গাড়ি ক্যামব্রি ও ল্যান্সার ব্র্যান্ডের। ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখলেও এরমধ্যে থেকে তারা যতগুলো প্রয়োজন নেবে। ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখা মানে ৫০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। মন্ত্রিসভার যতজন সদস্য করা হবে, তার থেকে বেশি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়। অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী গাড়ি নিলেও কেউ-কেউ নেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভার শপথ উপলক্ষে কাছে গাড়ি চাওয়া হয়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতায় এবারও ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত থাকা গাড়িগুলো এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের কর্মকর্তারা এসে দেখে গেছেন। বুধবার বিকেলে বা বৃহস্পতিবার সকালে গাড়িগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, প্রস্তুতকৃত ৫০টি গাড়িতেই প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার মনোগ্রাম লাগিয়ে রাখা হয়েছে, সঙ্গে পতাকা টানানোর স্ট্যান্ডও রয়েছে। যেসব গাড়ি মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ হবে, তাদের গাড়ির পতাকা স্ট্যান্ডে পতাকা টানিয়ে প্রতিমন্ত্রী সম্বলিত স্টিকার খুলে ফেলা হবে। আর যেসব গাড়ি প্রতিমন্ত্রীরা বরাদ্দ পাবেন, তাদের গাড়িতে কোনো পরিবর্তন করতে হবে না। গাড়ির সঙ্গে ৫০ জন চালককেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অধীন ৫০টি গাড়ির জন্য ৫০ জন চালক নতুন মন্ত্রীদের জন্য অপেক্ষায় আছেন। চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা বর্তমান মন্ত্রীদের চালক হিসেবে কাজ করছেন, তাদের থেকেই বেশিরভাগ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব চালক নিজেরা যেতে চাচ্ছেন না বা মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি আছে, সেক্ষেত্রে নতুন চালককে ডিউটি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।

এখন গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের নয় ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

টেকনোক্র্যাট দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের পর এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মোট সদস্য ৪৪ জন। এরমধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠানটা বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। এ বছরও তাই হবে। প্রস্তুতির মধ্যে কী কী বিষয় আছে সাংবাদিকদের— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, যেখানে শপথ হয়, সেখানকার একটা প্রস্তুতি রয়েছে। ইনভাইটেশনের একটি তালিকা করতে হয়, সেই তালিকা করছি। ইনভাইটেশন কার্ড করতে হয়, সেটি আমরা করছি। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এটার জন্য কিছু কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, সেটা করছি। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ১৩০০ থেকে ১৪০০ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারবৃন্দ, সরকারের সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বিদেশি মিশন প্রধান, বিশিষ্ট নাগরিক, সিনিয়র সাংবাদিকসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অতিথির জন্য আমন্ত্রণপত্র তৈরি ও বিতরণ শুরু করেছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া নির্বাচনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী পরাজিত হয়েছেন।

কতজন মন্ত্রী এবারের সংসদে শপথ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তুতির ওই অংশে আমরা এখনো কাজে যাইনি। যখন আমরা নির্দেশনা পাব, তখনই কাজ শুরু করব। আমি সেই নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

সবশেষ সংসদে ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন। এবারও কমবেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৪০টি গাড়ি চাওয়ার মানে হচ্ছে নতুন ৪০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন। মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা যাই হোক, সব ধরনের সাপোর্ট দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত। অপর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট হয়। নওগাঁ-২ আসনের প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ওই আসনের নির্বাচনের জন্য নতুন করে শিডিউল দেয়া হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। আর সংঘর্ষের ঘটনায় ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচন এ মাসের ১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।

২৯৮ আসনের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২ আসন ও জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার বেশি। তারা ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে একটি করে আসন পেয়েছেন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমও কক্সবাজারের একটি আসন থেকে জয় পেয়েছেন।