নিজস্ব প্রতিবেদক :
নতুন প্রজন্মের দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে অবস্থিত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, এই দেশ নতুন প্রজন্মের দেশ। আমরা নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছি। ভবিষ্যতে তারা দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করবে। তারা লেখাপড়া শেষ করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। যারা এখনো পড়াশোনা শেষ করেননি, তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে। দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নেবে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।
মঈন খান বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার কখনো থেমে থাকে না। আগে সংস্কার পরে নির্বাচন- এটা অর্থবহ কথা নয়। নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার, প্রশাসন সংস্কার, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ অত্যবশীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করতে হবে। বিগত তিন টার্ম নতুন প্রজন্ম ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। তারা ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করি, সমন্বয়ের মাধ্যমে অতিদ্রুত শেষ করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে, অনেকে বলেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আমরা বলি মানুষের মুক্তির যে আন্দোলন, জুলাই-আগস্টের সে আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা কাপুরুষের মত দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের যে এই ইতিহাস, সেই ইতিহাস কিন্তু আজকের নতুন কোন ইতিহাস নয়। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে তখনকার পাকিস্তান গভর্নর জেনারেলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
নতুন বছরের প্রত্যাশা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদেরও বলেন, এইকথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দেশ কিন্তু নতুন প্রজন্মের দেশ। তারা এই দেশের নেতৃত্ব ভবিষ্যতে গ্রহণ করবে এটা কিন্তু কারো বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম, একজন যাবে, আরেকজন আসবে। এই আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের ওপর একটি স্বৈরাচারী শাসন চেপে বসেছিল। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র হরণ করেছিল তারা। বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করেছিল। বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছে।
কোটা আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে মুক্তির আন্দোলনে রূপান্তিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা কাপুরুষের মত দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আগস্টে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, সেটা ছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকরের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন। এটি শুধু গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, অর্থনৈতিক অধিকারের আন্দোলনও। সেই আন্দোলনে দেশের সাধারণ ছাত্রদের সাথে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ছিল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক পরিচয়ে যায়নি, ছাত্র পরিচয়ে গিয়েছিল।
মঈন খান আরো বলেন, ১৯ জুলাই নরসিংদীতে শেখ হাসিনার মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকা জনতা জেল ভেঙে বের হয়ে আসে। সেদিন ৩৪ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ২৪ জন ছাত্রের প্রত্যেকে ছিলো জাতীয়তাবাদী পরিবারের। তারা সেদিন বিএনপি পরিচয় যায়নি, ছাত্রের পরিচয় জীবন দিয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল। কী কারণে জীবন দিয়েছিল? বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে হবে, এখানে একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এ সময় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির এবং সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।