Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নড়াইলে পারাপারের একমাত্র ভরসা ঝুঁকি পূরণ বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুরের মরা চিত্রা খালের উপর ১০ ফুট পর পর ২টি করে বাঁশের খুঁটি। এভাবে ১৮টি বাঁশের খুঁটি দিয়ে বানানো হয়েছে একটি সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ। ওই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ৬টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে ৪টি হাটবাজার, একটি কলেজ, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষা এলে বাড়ে দুর্ভোগ। ঝড়বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাঁকো পারাপার। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েদেরও।

কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায়ও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বছরের পর বছর একটি ব্রিজের অপেক্ষা এলাকবাসীর। দুই পাশে লোকালয়, হাটবাজার ও স্কুল-কলেজ। মাঝখানে খাল। দু-এক দিন নয়, ৫২ বছর ধরে এ অবস্থা। চার ইউনিয়নে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি। এমন ১৮টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাঁশের সাঁকোটি। ধরার জন্য আড়াআড়িভাবে দুই পাশে দুটি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। মরা চিত্রা নামের এ খালের উৎপত্তি মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট মোড়ে কাজলা নদী থেকে। পরে সেটি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও শাহাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা ত্রিমোহনীতে গিয়ে চিত্রা নদীতে মিশেছে এ মরা চিত্রা।

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুর এলাকায় এই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে চারটি হাটবাজার, একটি কলেজ, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে।

যাতায়াতের জন্য এলাকাবাসী নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন খালের পশ্চিম পাড়ের চরবিলা গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেব মোল্যা এসময় আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, কত নেতারে বল্লাম। কতবার চেয়ারম্যানদের বলছি। এখানে একটা পাকা সেতু বানিয়ে দিলে আমাদের কষ্ট কমে যায়। তারা শুধু বলে দেখতিছি। বুঝার পর থেকে ৫২ বছর শুধু শুনেই গেলাম কিন্তু ব্রিজ আর হলো না।

দুই পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছেন। এ সময়ে খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে এলাকার চিত্র। বদলায়নি কেবল বাঁশের সাঁকোটি।

স্থানীয়রা জানায়, নড়বড়ে এই সাঁকো পার হতে অনেক সময়ই শিশুরা পা পিছলে পানিতে পড়ে যায়। স্কুলগামী শিশুদের কথা বিবেচনা করে হলেও খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার দাবি তাদের।

চরবিলা গ্রামের ইজিবাইক চালক বাসার জানান, প্রতিদিন হাজার-হাজার লোক পারাপার হয়। এই সাঁকোর কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সকাল-বিকাল ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা। বৃষ্টি হলে এই সাঁকো পার হতে গেলে অনেক সময় তারা পড়ে যায়। ওপার থেকে এপার কোনো পণ্য নিয়ে আসতে গেলে ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়।

নিয়মিত কাঁধে করে সাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হওয়া মো. মনির বলেন, প্রতিদিন তার ৪-৫ বার কষ্ট করে সাইকেল কাঁধে করে সাঁকো পার হতে হয়। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । অতি দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি তার।

ওই এলাকার শিক্ষার্থী মেহেদি মন্ডলসহ আরো কয়েকজন বলেন, ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে তারা আসা-যাওয়া করে। যখন-তখন ভেঙে যায়। তখন দুর্ভোগ আরো বাড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাঁকো পার হতে হয়। এখানে একটা ব্রিজ নির্মাণ হলে তাদের এই সীমাহীন কষ্ট দূর হবে।

এই খালের পূর্ব পাড়ে সরশপুর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানায়, তার বাড়ি খালের পশ্চিম পাড়ের আড়ংগাছা গ্রামে। স্কুলে আসার সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে।

নড়াইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহির মেহেদী হাসান বলেন, ওই যায়গায় একটি সেতু নির্মাণের কাজ খুব দ্রুত সময়ে শুরু হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

নড়াইলে পারাপারের একমাত্র ভরসা ঝুঁকি পূরণ বাঁশের সাঁকো

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুরের মরা চিত্রা খালের উপর ১০ ফুট পর পর ২টি করে বাঁশের খুঁটি। এভাবে ১৮টি বাঁশের খুঁটি দিয়ে বানানো হয়েছে একটি সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ। ওই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ৬টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে ৪টি হাটবাজার, একটি কলেজ, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষা এলে বাড়ে দুর্ভোগ। ঝড়বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাঁকো পারাপার। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েদেরও।

কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায়ও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বছরের পর বছর একটি ব্রিজের অপেক্ষা এলাকবাসীর। দুই পাশে লোকালয়, হাটবাজার ও স্কুল-কলেজ। মাঝখানে খাল। দু-এক দিন নয়, ৫২ বছর ধরে এ অবস্থা। চার ইউনিয়নে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি। এমন ১৮টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাঁশের সাঁকোটি। ধরার জন্য আড়াআড়িভাবে দুই পাশে দুটি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। মরা চিত্রা নামের এ খালের উৎপত্তি মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট মোড়ে কাজলা নদী থেকে। পরে সেটি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও শাহাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা ত্রিমোহনীতে গিয়ে চিত্রা নদীতে মিশেছে এ মরা চিত্রা।

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুর এলাকায় এই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে চারটি হাটবাজার, একটি কলেজ, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে।

যাতায়াতের জন্য এলাকাবাসী নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন খালের পশ্চিম পাড়ের চরবিলা গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেব মোল্যা এসময় আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, কত নেতারে বল্লাম। কতবার চেয়ারম্যানদের বলছি। এখানে একটা পাকা সেতু বানিয়ে দিলে আমাদের কষ্ট কমে যায়। তারা শুধু বলে দেখতিছি। বুঝার পর থেকে ৫২ বছর শুধু শুনেই গেলাম কিন্তু ব্রিজ আর হলো না।

দুই পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছেন। এ সময়ে খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে এলাকার চিত্র। বদলায়নি কেবল বাঁশের সাঁকোটি।

স্থানীয়রা জানায়, নড়বড়ে এই সাঁকো পার হতে অনেক সময়ই শিশুরা পা পিছলে পানিতে পড়ে যায়। স্কুলগামী শিশুদের কথা বিবেচনা করে হলেও খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার দাবি তাদের।

চরবিলা গ্রামের ইজিবাইক চালক বাসার জানান, প্রতিদিন হাজার-হাজার লোক পারাপার হয়। এই সাঁকোর কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সকাল-বিকাল ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা। বৃষ্টি হলে এই সাঁকো পার হতে গেলে অনেক সময় তারা পড়ে যায়। ওপার থেকে এপার কোনো পণ্য নিয়ে আসতে গেলে ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়।

নিয়মিত কাঁধে করে সাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হওয়া মো. মনির বলেন, প্রতিদিন তার ৪-৫ বার কষ্ট করে সাইকেল কাঁধে করে সাঁকো পার হতে হয়। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । অতি দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি তার।

ওই এলাকার শিক্ষার্থী মেহেদি মন্ডলসহ আরো কয়েকজন বলেন, ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে তারা আসা-যাওয়া করে। যখন-তখন ভেঙে যায়। তখন দুর্ভোগ আরো বাড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাঁকো পার হতে হয়। এখানে একটা ব্রিজ নির্মাণ হলে তাদের এই সীমাহীন কষ্ট দূর হবে।

এই খালের পূর্ব পাড়ে সরশপুর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানায়, তার বাড়ি খালের পশ্চিম পাড়ের আড়ংগাছা গ্রামে। স্কুলে আসার সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে।

নড়াইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহির মেহেদী হাসান বলেন, ওই যায়গায় একটি সেতু নির্মাণের কাজ খুব দ্রুত সময়ে শুরু হবে।