ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
ধর্মকে ব্যবহার করে একটি পক্ষ নির্বাচন পিছিয়ে দেবার চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে নির্বাচন পিছিয়ে দেবার একটা চক্রান্ত চলছে। আজকে যদি নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া মানে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাওয়া। তাই অন্তবর্তকালীন সরকারে সন্মান জানিয়ে বলছি অতি দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। এটাই আমাদের চাওয়া।
সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ড আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র, একটি মহল যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, তাদের পরিবারকে হত্যা করেছিল; তাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছিল খান বাহিনীর হাতে, তাদের সঙ্গে কি এদেশের মানুষ আপস করতে পারে? পারে না। এজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের গর্জে উঠতে হবে তো।
তিনি বলেন, আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাইদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বিক্রি করে তারা ওই কাজ করতে চাচ্ছে। আমরা সেটা করতে দিতে পারি না। আজকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই চেতনাকে সামনে আনতে হবে। আমরা এদেশের মানুষ লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করেছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে যে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চলছে নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়ার, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার; সেই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া মানে আমাদের সর্বনাশ হওয়া। এদেশের সর্বনাশ হওয়া। কারণ এখন একটা নির্বাচিত সরকার খুব দরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে চেষ্টা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার, ৭১টা হয় নাই, আমরা কিছুই করি নাই; দেশটার জন্য আমরা কোনো অবদানই রাখি নাই। এখন ২৪টা যারা করছে, তারাই সব করছে। এ রকম একটা ধারণা দিচ্ছে না? ২৪ কি আমি ভুলতে পারব? ২৪ না হলে কি বাংলাদেশ হইতো? আজকে তোমার জন্ম হইছে বাবা এই দেশে। এই কথাগুলো কখনো ভুলবা না।
তিনি বলেন, এই কথাগুলো আমি সবসময় সব জায়গায় বলি- ৭১ কে ভুলে যাওয়া যাবে না। ওই ৭১ এ হাজার হাজার মানুষকে শহীদ করা হয়েছে, অন্যায়ভাবে গুলি করা হয়েছে। ওই ৭১ এ আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই ৭১ এ আমাদের মা-বোনদের তাদেরকে অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। এই কথাগুলো আমরা ভুলতে পারি না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ সালে ৯টা মাস আমরা দীর্ঘকাল যুদ্ধ করেছি, পরিবার-পরিজনের খবর নেওয়া হয়নি, কত মানুষ কোথায় চলে গেছে। সেই ৭১ কে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে কি সেটা ভোলা যাবে? আমি কি আমার জন্মটাকে ভুলতে পারি, এটা মাথার মধ্যে রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে দেবেন না। হিন্দু-মুসলমান ভাগ হতে দেবেন না। আমরা এখানে হিন্দু-মুসলমান ভাই-ভাই একসঙ্গে আছি। সারাজীবন ধরে আছি, যুদ্ধও করেছি একসঙ্গে। এটাকে যেন কেউ ভাগ করতে না পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। এই মাটি আমাদের। মানুষগুলো আমাদের, এই মানুষগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, টিকিয়ে রাখতে হবে। সমৃদ্ধির মধ্যে সামনে দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
এই সরকার তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা করবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- প্রফেসর ইউনূস অতি দ্রুত আর কোনো কাল বিলম্ব না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ব্যবস্থা করবেন। দেশে একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া মানে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনা। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম সভায় সভাপতিত্বে করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঈম জাহাঙ্গীর, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহম্মদ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলীসহ ঠাকুরগাঁও জেলার শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।
সভায় বক্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা, তাদের অধিকার সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি 



















