নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে না। ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের ১৭তম সভা শেষে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা ঘোষণা দেয় আগামী নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের জুনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে ইভিএম প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংলাপে দেশের নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি ১১টি। যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ যেসব দল ইভিএমে আগামী নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের চেয়ে বেশি বিপক্ষে বলেছেন। কেউ আবার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।
নির্বাচনের জন্য নতুন করে ইভিএম কেনার জন্য সরকারের কাছে প্রথমে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ চেয়ে পায়নি নির্বাচন কমিশন। পরে ইসির হাতে থাকা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রয়োজনীয় মেশিন মেরামতে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাইলেও অসম্মতি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবকে চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান জানায় অর্থ বিভাগ। ওই টাকা দিয়ে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম আগামী নির্বাচনের জন্য মেরামত করতে চেয়েছিল ইসি। তবে ইসির এমন চাহিদার বিপরীতে ৫০০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়। যে কারণে পরিকল্পনা ছিল স্বল্প পরিসরে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ১৭তম কমিশন সভায় পুরো ভোটেই ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন।
ভোটে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ইভিএম কেনা ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়ায়, রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমত না থাকায় কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাহাংগীর আলম জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে স্বচ্ছ ব্যালট পেপারে ভোট হবে।
আজকের কমিশনের সভায় ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসময় আরও পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোটের তারিখও নির্ধারণ করা হয়। এসব সিটি করপোরেশন হলো, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা। এছাড়া নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুমোদন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
ইসি সচিব বলেন, পাঁচ সিটির ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং সিসি ক্যামেরাও থাকছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। ভোটের আপডেট ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা ট্যাবের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
তিনি বলেন, সব সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশন ভোট শেষ করা হবে। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, রাজশাহী ও সিলেটে ২১ জুন, খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ১১ মার্চ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ মার্চ থেকে পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এই সিটির ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুন।
এদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৭ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর খুলনা সিটির সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। এই দুই সিটিতেই নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ৭ নভেম্বর।
এছাড়া, বরিশাল সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। আর নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ১৪ নভেম্বর।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভায় অন্য চার কমিশনারসহ ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।