চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন। আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটা ট্রেন দিয়ে ট্রায়াল রান করবো। এর আগে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে কালুরঘাট ব্রিজ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে দোহাজারী এলাকায় এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির সর্বশেষ অগ্রগতি দেখার জন্য এসেছি। আশা করছি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এই প্রকল্পটির অবশিষ্ট কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুয়েকটা স্টেশনের কাজ হয়ত বাকি থাকবে। তবে রেল চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। আমরা মোটর ট্রলি করে এখান থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাব। আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটা ট্রেন দিয়ে ট্রায়াল রান করব। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পূর্বে পরিপূর্ণভাবে তৈরি কি না তা নিশ্চিত হতে ট্রায়াল রান হবে।
তিনি বলেন, এখন মানুষ বিমানে-সড়ক পথে কক্সবাজার যায়। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে। সারা দেশের মানুষের এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সব সময় সাশ্রয়ী নিরাপদ ও আরামদায়ক।
পর্যটকদের জন্য পর্যটন ট্রেন বা কোচ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে উন্নত যাত্রীবাহী কোচ দেওয়ার উপযোগী করে কাজ করছি।
ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও ভাড়া নির্ধারণ হয়নি। আমরা যাচাই বাছাই করে এটা করব। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর জন্য ভাড়া যা যা আছে সেগুলো আমরা দেখব। এই রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনো রেল যোগাযোগই ছিল না। শুরুতে এটি ছিল দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।
ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ ধরে মাতারবাড়ীতে যে ডিপ সি পোর্ট করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সেটির সঙ্গে যুক্ত করব। কাজেই বহুবিধ ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথটি করা হচ্ছে।
এর আগে সকালে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তখন রেলমন্ত্রী বলেন, কালুরঘাট সেতু অনেক পুরোনো। এই সেতু মেরামতের কাজ চলছে, যাতে কক্সবাজার রুটের ট্রেন নিরাপদে চলতে পারে। সেতুর ওপর ১৫ টন মিটারগেজ ইঞ্জিনের ট্রেন আগামী ৩০ বছর ঝুঁকিমুক্তভাবেই চলতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে ইঞ্জিন সেটি ১২ টনের। আমরা জানি যে, এই সেতু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এটার সক্ষমতা যাতে বাড়ানো যায়, সে কারণে আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সংস্কারকাজ চলমান। এই ব্রিজটি বাদ দিয়ে নতুন একটি ব্রিজ কালুরঘাটে হবে। যেটি এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা আশা করছি, আগামী বছর নতুন সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ডাবল লেইন মিটারগেজ এবং ফোর লেইনের সড়ক থাকবে একই ব্রিজের ওপর। কাজেই সেটি না হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজটি যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেভাবেই এটি তৈরি করা হচ্ছে। ২ নভেম্বর আমরা এখানে আসব এবং ট্রায়াল রান করব। উদ্বোধনের পূর্বেই এই রেললাইনটি ভালোভাবে তৈরি হয়েছে কি না সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হতে চাই। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এই ব্রিজের কাজ শেষ হবে। তবে ছোটখাটো কিছু কাজ থাকতে পারে। একই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন যায়, যানবাহন চলাচল করে, মানুষও চলাচল করে। সেই পথচারীদের জন্য আমরা আলাদা করে একটা লেইন করে দিয়েছি। মূল ব্রিজের ভেতরে আসতে হবে না। এটি এর আগে ছিল না। আমরা আরও ৬ ফিট ওয়াকওয়ে করে দিয়েছি, সেটার কাজ শেষ হতে আরও এক-দুই মাস সময় লাগতে পারে। আগে মূল ব্রিজের কাজ শেষ হোক, এরপর ওয়াকওয়ের কাজ শুরু হবে। এটা নতুন একটা সংযোজন।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা ব্রডগেজের ট্রেন চালাতে পারছি না। ধীরে ধীরে এগুলোকে ব্রডগেজে রূপান্তর করব।