Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দোকানের জমি দখল নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি : 

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা পৌরশহরের একটি দোকানের জায়গা দখল নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কেন্দুয়া পৌরশহরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহত ব্যক্তিরা কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুটি পক্ষই জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর অনুসারী।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে কেন্দুয়া শহরের সোহেল আমিন নামের এক ব্যক্তির দোকান ঘরের জায়গা দখল করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের বড় ভাই আল আমিন খন্দকার ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার। এ সময় তাঁরা দোকানটিতে তালা লাগিয়ে দেন।

একই সময়ে সোহেল আমিনের পক্ষ নিয়ে ওই দোকান ও জায়গা উদ্ধারে যান উপজেলা বিএনপি সভাপতি জয়নাল ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ তাঁদের লোকজন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে যুবদল নেতা নাসির খন্দকারের পক্ষে পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের লোকজন এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার পক্ষে উপজেলার চিরাং ইউনিয়নে চকবাট্টা গ্রামের লোকজন রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে জড়িত হয়। তাতে উভয় পক্ষের অর্ধশত লোক আহত হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বলেন, কিশোরগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর দোকান ও জায়গা কয়েক বছর আগে ভাড়া নিয়ে জাল দলিল করে দখল করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় আল-আমিন খন্দকার। কিন্তু স্থানীয় সালিস ও প্রশাসন কোথাও তারা পাত্তা পায়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাতে আল আমিন ও তার ভাই পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকারসহ তাদের লোকজন ওই দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে সালিস করায় জাল-জালিয়াতির বিষয়টা আমরা জানি। অনৈতিক এ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তারা হামলা চালায়। একপর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে গুলি করেছে উজ্জ্বল। গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

তবে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, নিজেদের কেনা দোকানের দখল বুঝে নেওয়া হয়েছে। এখানে দখলের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন লোকজন নিয়ে এসে দোকানের তালা ভেঙেছে। তাঁর অনুসারী অগণিত লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাদের রক্ষা করেছে।’ গুলির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় কেউ গুলি করেনি।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, জাল দলিলে দোকান দখলকারী আল আমিন খন্দকার আসলে আওয়ামী লীগের লোক। তার চাচাতো ভাই যুবদল নেতা উজ্জ্বল খন্দকারকে ম্যানেজ করে দোকানটি দখলের জন্য তালা দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য সবাই জানে দীর্ঘদিন ধরে আলামিন জায়গা ও দোকান জাল দলিলে দখল করতে চাইছে। গতকাল বুধবার রাতে দোকানে তালা দেওয়ার ঘটনায় বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তাতে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকে আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনুপ কুমার সরকার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, কেন্দুয়া পৌর শহরের মধ্যবাজারে একটি দোকানঘর দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

দোকানের জমি দখল নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

প্রকাশের সময় : ০৪:০১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি : 

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা পৌরশহরের একটি দোকানের জায়গা দখল নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কেন্দুয়া পৌরশহরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহত ব্যক্তিরা কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুটি পক্ষই জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর অনুসারী।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে কেন্দুয়া শহরের সোহেল আমিন নামের এক ব্যক্তির দোকান ঘরের জায়গা দখল করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের বড় ভাই আল আমিন খন্দকার ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার। এ সময় তাঁরা দোকানটিতে তালা লাগিয়ে দেন।

একই সময়ে সোহেল আমিনের পক্ষ নিয়ে ওই দোকান ও জায়গা উদ্ধারে যান উপজেলা বিএনপি সভাপতি জয়নাল ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ তাঁদের লোকজন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে যুবদল নেতা নাসির খন্দকারের পক্ষে পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের লোকজন এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার পক্ষে উপজেলার চিরাং ইউনিয়নে চকবাট্টা গ্রামের লোকজন রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে জড়িত হয়। তাতে উভয় পক্ষের অর্ধশত লোক আহত হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বলেন, কিশোরগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর দোকান ও জায়গা কয়েক বছর আগে ভাড়া নিয়ে জাল দলিল করে দখল করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় আল-আমিন খন্দকার। কিন্তু স্থানীয় সালিস ও প্রশাসন কোথাও তারা পাত্তা পায়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাতে আল আমিন ও তার ভাই পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকারসহ তাদের লোকজন ওই দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে সালিস করায় জাল-জালিয়াতির বিষয়টা আমরা জানি। অনৈতিক এ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তারা হামলা চালায়। একপর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে গুলি করেছে উজ্জ্বল। গুলিতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

তবে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, নিজেদের কেনা দোকানের দখল বুঝে নেওয়া হয়েছে। এখানে দখলের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন লোকজন নিয়ে এসে দোকানের তালা ভেঙেছে। তাঁর অনুসারী অগণিত লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে আমাদের রক্ষা করেছে।’ গুলির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় কেউ গুলি করেনি।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, জাল দলিলে দোকান দখলকারী আল আমিন খন্দকার আসলে আওয়ামী লীগের লোক। তার চাচাতো ভাই যুবদল নেতা উজ্জ্বল খন্দকারকে ম্যানেজ করে দোকানটি দখলের জন্য তালা দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য সবাই জানে দীর্ঘদিন ধরে আলামিন জায়গা ও দোকান জাল দলিলে দখল করতে চাইছে। গতকাল বুধবার রাতে দোকানে তালা দেওয়ার ঘটনায় বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তাতে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকে আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনুপ কুমার সরকার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, কেন্দুয়া পৌর শহরের মধ্যবাজারে একটি দোকানঘর দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।