Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে ৬১০টি সাপের দংশনের ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬১০টি সাপের দংশনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) আসা তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৬১০টি সর্পদংশনের তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে রাজশাহীতে।

তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে চলতি বছরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সাপের দংশনে মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়, তার মধ্যে ‘বিষধর’ ৭৩টি এবং ১৮টি চন্দ্রবোড়া সাপ ছিল। সাপের দংশনে আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১১ জন রোগী মারা যান, এর মধ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের কারণে মারা যায় ৫ জন।

তিনি আরও বলেন, দেশে সাপের দংশনে নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ লাখের অধিক মানুষ সাপের দংশনের শিকার হয়। যার মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপের বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান ‘বিষধর’ সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট, চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্য আছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেল’স ভাইপার নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য গুজব কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪ লাখের অধিক মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন যা মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ্), চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।

চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষাক্ত সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে, প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে চন্দ্রবোড়ার বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্পদংশন নিয়ে কাজের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০০০ সালে জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। এর আওতায় চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল; সীমিত স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে স্বাস্থ্যব্যবস্থা জুড়ে সর্পদংশনের ব্যবস্থাসমূহ পরিচালনা করা হয়েছে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ ও পর্যবেক্ষণ, প্রতি মাসেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা স্নেকভাইট সাপোর্ট গ্রুফ পরিচালনা করা হচ্ছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে প্রতিনিয়ত গবেষণাধর্মী কার্যক্রম এবং দেশব্যাপী প্রচার প্রকাশনা এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।

এছাড়াও বাংলাদেশে সর্পদংশনে কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

দেশে ৬১০টি সাপের দংশনের ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬১০টি সাপের দংশনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) আসা তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৬১০টি সর্পদংশনের তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে রাজশাহীতে।

তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে চলতি বছরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সাপের দংশনে মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়, তার মধ্যে ‘বিষধর’ ৭৩টি এবং ১৮টি চন্দ্রবোড়া সাপ ছিল। সাপের দংশনে আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১১ জন রোগী মারা যান, এর মধ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের কারণে মারা যায় ৫ জন।

তিনি আরও বলেন, দেশে সাপের দংশনে নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ লাখের অধিক মানুষ সাপের দংশনের শিকার হয়। যার মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপের বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান ‘বিষধর’ সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট, চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্য আছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেল’স ভাইপার নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য গুজব কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪ লাখের অধিক মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন যা মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ্), চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।

চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষাক্ত সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে, প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে চন্দ্রবোড়ার বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্পদংশন নিয়ে কাজের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০০০ সালে জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। এর আওতায় চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল; সীমিত স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে স্বাস্থ্যব্যবস্থা জুড়ে সর্পদংশনের ব্যবস্থাসমূহ পরিচালনা করা হয়েছে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ ও পর্যবেক্ষণ, প্রতি মাসেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা স্নেকভাইট সাপোর্ট গ্রুফ পরিচালনা করা হচ্ছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে প্রতিনিয়ত গবেষণাধর্মী কার্যক্রম এবং দেশব্যাপী প্রচার প্রকাশনা এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।

এছাড়াও বাংলাদেশে সর্পদংশনে কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা করা হয়।