নিজস্ব প্রতিবেদক :
বর্তমানে দেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার যা মোট জনসংখ্যার (১৬ কোটি ৯৮ লাখ) অর্ধেকের কাছাকাছি। এই শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার এবং মহিলা ২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার জন।
মঙ্গলবার (২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩-এর প্রথম কোয়ার্টারের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর ফল সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়ন্ত্রণাধীন ‘শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজার তথ্যের উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতাধীন ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩) ফলাফল সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এনইসি সম্মেলন কক্ষে (পরিকল্পনা কমিশন চত্বর, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা) এ সংবাদ সম্মেলন অনু্ষ্িঠত হয়।
এতে প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান জানান, কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বর্তমানে ৭ কোটি ১১ লাখ যার মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার।
তিনি জানান, প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফল অনুযায়ী, বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার যার মধ্যে পুরুষ ১৭ লাখ ১০ হাজার, মহিলা ৮ লাখ ৮০ হাজার।
শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থিত জনগোষ্ঠী ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার (পুরুষ ১ কোটি ১৯ লাখ এবং নারী ৩ কোটি ৫২ লাখ)। এছাড়া শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬১. ৩৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার, শিল্পখাতে ১ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার এবং সেবায় ২ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর প্রথম ত্রৈমাসিক যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার যার মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার এবং নারী ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার।
প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান বলেন, শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য সংগ্রহের জন্য পুরো বাংলাদেশে ১ হাজার ২৮৪টি পিএসইউ এবং প্রতিটি পিএসইউতে ২৪টি খানা দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এভাবে এক বছরে তিন মাস ধরে চারটি কোয়ার্টার সম্পন্ন করা হবে। জরিপের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর (১ জানুয়ারি-৩১ মার্চ প্রথম ত্রৈমাসিক, ১ ফেব্রুয়ারি-৩০ জুন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক, ১ জুলাই- ৩০ সেপ্টেম্বর তুতীয় কোয়ার্টার এবং ১ অক্টোবর- ৩১ ডিসেম্বর-২০২৩ পর্যন্ত চতুর্থ কোয়ার্টার চলমান থাকবে। এ জরিপের প্রাপ্ত উপাত্ত হতে জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
বিবিএস এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে পরিচালিত জরিপগুলোর মধ্যে শ্রমশক্তি জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। সর্বশেষ ২০২২ সালে এ জরিপটি পরিচালিত হয় যার প্রভিশনাল রিপোর্ট এরইমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে ২০২৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপ দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে।
এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এবং পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিউর রহমান।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (এনএসইউ) হিসেবে সরকারি পরিসংখ্যান প্রণয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএস কর্তৃক পরিচালিত জরিপগুলোর মধ্যে শ্রমশক্তি জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এই জরিপটি ১৯৮০ সালে বিবিএস কর্তৃক প্রথম পরিচালিত হয় এবং সেই থেকে ৪-৫ বছরের ব্যবধানে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১৫-১৬ সাল হতে এটি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে এ জরিপটি অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে সিএপিআই (কম্পিউটার এসিস্টেট ইন্টারভিউং) পদ্ধতিতে এ জরিপ কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়।
শ্রমশক্তি জরিপ-এ ১৫ ও তদুর্ধ্ব বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশব্যাপী ১২৮৪ টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৪টি করে সর্বমোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানায় (বছরে ১২৩,২৬৪টি খানায়) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ৬৪টি জেলায় ১০৭ জন (মহিলা ৬৬ জন এবং পুরুষ ৪১ জন) প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারীগণ কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে। এ জরিপের প্রাপ্ত উপাত্ত হতে শ্রমশক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকসমূহের অগ্রগতি, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতি নির্ণয়ক সূচক এবং সর্বোপরি জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। শ্রমশক্তি জরিপ এর মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থান, বেকারত্ব, শ্রম অভিবাসন ব্যয়, খাত এবং পেশাভেদে শ্রমশক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, কর্মঘণ্টা এবং মজুরি সংক্রান্ত পরিসংখ প্রস্তুত করা হয়। এ জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজারের মৌসুমভিত্তিক তারতম্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পাওয়া যায়।