Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সতর্ক থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি যে কোনও ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। অনেকেই এমন গতিতে একটি দেশের অগ্রগতি চায় না। তাই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

সারা দেশের জেলা শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর পরিশ্রমের কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অতি-দরিদ্রের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকার দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্যের হার আরও দুই বা তিন শতাংশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে কোনো অতি-দরিদ্র্য থাকবে না। তার সরকার বিনা খরচে বাড়ি প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং দেশবাসীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ সবকিছুই করছে। তার দল ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।

জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে জনগণের কল্যাণে আরও সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই আওয়ামী লীগের সংগঠন আরও শক্তিশালী হোক।

12-04-23-PM_Ganabhaban-1

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। কারণ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছিল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো দল মাটি ও মানুষের দল নয়।

গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পেলেও বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বলে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনাদের কঠোর সমালোচনা করেন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পেলেও বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনারা বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা কোনও উন্নয়ন দেখছে না। তারা প্রতিদিনই এমনকি রমজানের দিনেও উচ্চকণ্ঠে মিথ্যা কথা বলছে। কেন তারা এমন করছে, আমি তা বুঝতে পারছি না।

তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। এ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২৯ আসন। বিএনপি এখনও তাদের আগের অবস্থানে অটল রয়েছে। অথচ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করে আওয়ামী লীগ তার অবস্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজকে আমরা এটাই শুকরিয়া আদায় করি।

12-04-23-PM_Ganabhaban-6

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের জন্য কাজ করেছে আর এ কারণেই জনগণ তার দলকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনও ভোট কারচুপির প্রয়োজন নেই। কারণ তারা সবসময় জনগণের সেবা করে তাদের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আসে না।

তিনি বলেন, যারা নির্বাচনের কথা বলছে, তারা বন্দুকের মুখে ক্ষমতায় এসেছে। তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে বাবা-মা, ভাইসহ সর্বস্ব হারানোর পর তিনি দেশবাসীকে নিজের কাছের মানুষ ভেবে তাদের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। আমি যা কিছু করেছি-তা মানুষের জন্য করেছি।

সবকিছু হারিয়ে দেশে ফিরে আসার পর আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা (দলের লোকজন) আমার পাশে থাকলে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক, অনেকে এটা চায় না। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে। কারণ একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক, অনেকে তো এটা চায় না। কাজেই তারা তাদের দিক থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেই যাচ্ছে। ’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি এসব দল, এরা তো আর মাটি-মানুষ থেকে উঠে আসে নাই। এক মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে তার পকেট থেকে একটা দল বের করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে তারা চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, রোজা রমজানের দিন এত মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে কেন? আমি তাও বুঝতে পারছি না। একটু তো রয়ে সয়ে বলা উচিত। কোনো উন্নতিই নাকি তারা দেখে না চোখে।

12-04-23-PM_Ganabhaban-8

দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। আর আমি যেটুকু করি বাংলাদেশের মানুষের জন্যই করি। আপনজন সব হারানোর পর এদেশের মানুষই কিন্তু আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, তারা পাশে ছিল বলেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। আপনারা আছেন বলেই কাজ করতে পারছি।

আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষ আমাদের ভোট দেয়। সেটা হচ্ছে বাস্তব কথা। কাজেই এখানে আমাদের ভোট চুরি করা লাগে না, ভোটে কোনো কিছু করাও লাগে না।

তিনি বলেন, জনগণের সেবা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কিন্তু অন্যভাবে কখনো ক্ষমতায় আসে নাই। সব সময় ভোটের মাধ্যমে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা (বিএনপি) এখন মাইক লাগিয়ে সারাদিন বসে কথা বলে সত্য মিথ্যা দিয়ে। তাদের তো ক্ষমতায় আসাই হচ্ছে বন্দুকের নলে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এজন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। ’

দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষ কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) একনেকে আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সারা বাংলাদেশে সার্ভে রিপোর্ট পেশ করলেন। সেখানে বললেন, আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২০০৬ সালে ৪১ ভাগ ছিল, আজকে সেটা ১৮ ভাগে নেমে এসেছে। তো আমি বললাম আরও ২/৩ ভাগ যাতে তাড়াতাড়ি কমাতে পারি, সেটা আমরা চেষ্টা করবো। আর অতি দরিদ্রের হার যেটা প্রায় ২৫ ভাগ ছিল সেটা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। এটা মাথায় রেখে আমাদের আরও সামনে কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য। যে একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।

ভূমিহীন মানুষকে খুঁজে পেতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের অঞ্চলে আপনারাও খোঁজ করবেন কোন পরিবার নিস্ব আছে কি না, ভূমিহীন আছে কিনা। কেউ ভূমিহীন থাকবে না এই দেশে।

 

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সতর্ক থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:১০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি যে কোনও ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। অনেকেই এমন গতিতে একটি দেশের অগ্রগতি চায় না। তাই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

সারা দেশের জেলা শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর পরিশ্রমের কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অতি-দরিদ্রের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকার দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্যের হার আরও দুই বা তিন শতাংশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে কোনো অতি-দরিদ্র্য থাকবে না। তার সরকার বিনা খরচে বাড়ি প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং দেশবাসীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ সবকিছুই করছে। তার দল ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।

জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে জনগণের কল্যাণে আরও সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই আওয়ামী লীগের সংগঠন আরও শক্তিশালী হোক।

12-04-23-PM_Ganabhaban-1

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। কারণ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছিল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো দল মাটি ও মানুষের দল নয়।

গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পেলেও বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বলে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনাদের কঠোর সমালোচনা করেন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পেলেও বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনারা বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা কোনও উন্নয়ন দেখছে না। তারা প্রতিদিনই এমনকি রমজানের দিনেও উচ্চকণ্ঠে মিথ্যা কথা বলছে। কেন তারা এমন করছে, আমি তা বুঝতে পারছি না।

তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। এ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২৯ আসন। বিএনপি এখনও তাদের আগের অবস্থানে অটল রয়েছে। অথচ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করে আওয়ামী লীগ তার অবস্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজকে আমরা এটাই শুকরিয়া আদায় করি।

12-04-23-PM_Ganabhaban-6

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের জন্য কাজ করেছে আর এ কারণেই জনগণ তার দলকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনও ভোট কারচুপির প্রয়োজন নেই। কারণ তারা সবসময় জনগণের সেবা করে তাদের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আসে না।

তিনি বলেন, যারা নির্বাচনের কথা বলছে, তারা বন্দুকের মুখে ক্ষমতায় এসেছে। তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে বাবা-মা, ভাইসহ সর্বস্ব হারানোর পর তিনি দেশবাসীকে নিজের কাছের মানুষ ভেবে তাদের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। আমি যা কিছু করেছি-তা মানুষের জন্য করেছি।

সবকিছু হারিয়ে দেশে ফিরে আসার পর আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা (দলের লোকজন) আমার পাশে থাকলে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক, অনেকে এটা চায় না। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে। কারণ একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক, অনেকে তো এটা চায় না। কাজেই তারা তাদের দিক থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেই যাচ্ছে। ’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি এসব দল, এরা তো আর মাটি-মানুষ থেকে উঠে আসে নাই। এক মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে তার পকেট থেকে একটা দল বের করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে তারা চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, রোজা রমজানের দিন এত মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে কেন? আমি তাও বুঝতে পারছি না। একটু তো রয়ে সয়ে বলা উচিত। কোনো উন্নতিই নাকি তারা দেখে না চোখে।

12-04-23-PM_Ganabhaban-8

দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। আর আমি যেটুকু করি বাংলাদেশের মানুষের জন্যই করি। আপনজন সব হারানোর পর এদেশের মানুষই কিন্তু আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, তারা পাশে ছিল বলেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। আপনারা আছেন বলেই কাজ করতে পারছি।

আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষ আমাদের ভোট দেয়। সেটা হচ্ছে বাস্তব কথা। কাজেই এখানে আমাদের ভোট চুরি করা লাগে না, ভোটে কোনো কিছু করাও লাগে না।

তিনি বলেন, জনগণের সেবা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কিন্তু অন্যভাবে কখনো ক্ষমতায় আসে নাই। সব সময় ভোটের মাধ্যমে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা (বিএনপি) এখন মাইক লাগিয়ে সারাদিন বসে কথা বলে সত্য মিথ্যা দিয়ে। তাদের তো ক্ষমতায় আসাই হচ্ছে বন্দুকের নলে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এজন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। ’

দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষ কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) একনেকে আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সারা বাংলাদেশে সার্ভে রিপোর্ট পেশ করলেন। সেখানে বললেন, আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২০০৬ সালে ৪১ ভাগ ছিল, আজকে সেটা ১৮ ভাগে নেমে এসেছে। তো আমি বললাম আরও ২/৩ ভাগ যাতে তাড়াতাড়ি কমাতে পারি, সেটা আমরা চেষ্টা করবো। আর অতি দরিদ্রের হার যেটা প্রায় ২৫ ভাগ ছিল সেটা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। এটা মাথায় রেখে আমাদের আরও সামনে কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য। যে একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।

ভূমিহীন মানুষকে খুঁজে পেতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের অঞ্চলে আপনারাও খোঁজ করবেন কোন পরিবার নিস্ব আছে কি না, ভূমিহীন আছে কিনা। কেউ ভূমিহীন থাকবে না এই দেশে।