নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ডেমোক্র্যাটিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। । এ সময় বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস উপস্থিত ছিলেন।
আমীর খসরু বলেন, আজকের আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গারা মানবিক সংকটের মধ্যে জীবন যাপন করছে। তাদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। তাদের জন্য কি করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বিশেষভাবে ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসকে স্বীকৃতি জানান। আমীর খসরু বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় লুইস দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বর্তমানে তার কাজের মেয়াদ শেষ, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বৈঠকে দেশের বর্তমান পটভূমি, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের শাসন ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের যে প্রতিশ্রুতি, তা নিয়েও কথা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, এর বাইরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যত দিন প্রত্যাবাসন না হয়, তত দিন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতিসংঘ কাজ করতে সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের একটা কমিটমেন্ট রয়েছে। সেই অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত—সেসব নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, আজকের এই প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে জনগণের সবচেয়ে বড় চাহিদা হচ্ছে—গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। আর সেটা সম্ভব একমাত্র একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচনের আলোচনা চলছে, সেটাকে কীভাবে সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এবং তারা যে মানবেতর জীবনযাপন করছে, সেটিও আলোচনার একটি বড় অংশ ছিলো। রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগামী দিনে কীভাবে একযোগে কাজ করবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যতদিন তারা প্রত্যাবর্তন করতে না পারে, ততদিন তাদের বিষয়ে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন লুইস।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী সম্পর্কে তিনি বলেন, বিগত দিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে গোয়েন লুইসের অবদান আমরা স্বীকৃতি দিতে চাই। অত্যন্ত কঠিন সময়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। জাতিসংঘের চার্টার অনুযায়ী প্রতিটি দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।
গোয়েন লুইস বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। জাতিসংঘ নির্বাচন কমিশনকে সমর্থনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। প্রযুক্তিগত স্তরে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিশ্চিত করছে।
ঐকমত্যের প্রসঙ্গে কথা বলেন গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করেছে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, যাতে এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতির নিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, শরণার্থীদের প্রতি অবিশ্বাস্য আতিথেয়তা দেখানোয় বাংলাদেশকে তাঁরা সাধুবাদ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চেয়ারপারন পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।
																			
										
																নিজস্ব প্রতিবেদক								 






















