নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এবং সুখী দেশের সূচকে আমাদের সাত ধাপ অগ্রগতি প্রমাণ করে যে দেশে গণতন্ত্র সংহত হয়েছে, সুশাসন রয়েছে।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ধারণাটি জননেত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। তিনিই প্রথম জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঘোষণা দেন যে, মাঝে মধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেয়ে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো উত্তম। তার সেই চিন্তা থেকেই প্রথমে কল্যাণ তহবিল গঠন ও তারপর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আজ সত্যিকার অর্থে দেশে যে সমস্ত সাংবাদিক কষ্টে থাকেন, দুর্ঘটনায় পতিত হন কিংবা নিহত হন, তাদের ও পরিবারের জন্য একটি ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও’র যাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৮ সালে ছিল ১০টি টেলিভিশন, এখন ৩৫টি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও ৭-৮টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। ৪শ দৈনিক পত্রিকা ছিল ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, এখন সাড়ে ১২শ দৈনিক পত্রিকা। সম্প্রচার হচ্ছে বেসরকারি এফএম ও কমিউনিটি রেডিও, প্রকাশিত হয় হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা। গণমাধ্যমের এই যুগান্তকারী বিকাশ জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গণমাধ্যমবান্ধব নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।
গণমাধ্যমের এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের বিকাশও ঘটেছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, প্রতিনিয়ত সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা বেলায় বিরোধী দল বিশেষ করে মির্জা ফখরুল সাহেবসহ তাদের নেতারা বলেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা তিন বেলা কথা বলেন আর বলেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। তাদের এই হাঁকডাক এবং ‘গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন’ মন্তব্যের মধ্যেই বাংলাদেশ গত বছর গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়ে ৭৫তম থেকে ৭৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
আর সুখী দেশ সূচকে আমরা ৭ ধাপ এগিয়েছি– উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, সুখী সূচকে ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আমাদের অবস্থান এখন ৯৪তম। ভারতের অবস্থান ১৩৬তম, পাকিস্তানের ১২১তম, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১২৭তম। আমাদের অবস্থান ৯৪তম। এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসনের প্রমাণ, গণতন্ত্রের অভিযাত্রার প্রমাণ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে গণমাধ্যম অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে, প্রয়োজন দায়িত্বশীলতার। আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেমন আছে, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতাও আছে। সেখানে একটি অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে ১৩০ বছর চলার পর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কয়েকদিন আগে বিবিসির মহাপরিচালককে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে টেলিভিশন এবং পত্রিকায় অসত্য বা ভুল সংবাদ বা কারো ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশের কারণে সেই গণমাধ্যমকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে কোনো পত্রিকা বন্ধ হয়নি, কোনো টেলিভিশনের পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়নি।
গণমাধ্যম অবাধ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের কাছে আমার একটি বিনীত নিবেদন, স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার দিকেও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই গণমাধ্যম গণতন্ত্র সংহত হবে, দেশ এগিয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশ পৌঁছাবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। সব সময় গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। কারণ, এতে আমরা নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি। গঠনমূলক সংবাদ সরকার চালাতে সাহায্য করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম অবশ্যই সরকারের সমালোচনা করবে এবং স্বাধীনতা ভোগ করবে, তবে তা যথাযথ দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার সাথে করা উচিত। আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর বাধাগ্রস্ত হবে না। স্বাধীনতা উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। তবে তাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা অবশ্যই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে আপনাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির খন্দকারও বক্তব্য দেন। এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারাসহ বিভিন্ন সংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অসুস্থ, অসচ্ছল এবং দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের ৬৫ জনের মাঝে ৬৯ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এতে স্বাগত বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪২ জন সাংবাদিকের অনুকূলে ট্রাস্ট থেকে ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ২ হাজার ২৯৮ জনকে প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন বিশেষ সহায়তা হিসেবে ২ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।