নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ যা খুশি তাই করছে; দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় সরকার।
শুক্রবার (৫ মে) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তিনি।
অনির্বাচিত বলেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই দাবি করে ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা নেই। আর জবাবদিহিতা নেই বলেই ক্ষমতাসীনরা দেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো জোর করে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। এজন্য তারা যা খুশি তাই করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে টিকে থাকতে হলে গণতন্ত্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে তাদের লোকজনই নদীগুলো দখল করছে। আমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে, আমাদের প্রাণ যেগুলো নিয়ে বেঁচে আছি যেগুলোর সাথে, আমাদের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, সেগুলোকে আমরা নিজেরাই হত্যা করছি, ধ্বংস করে দিচ্ছি। আজকে এই সরকার উন্নয়নের ঢাক ঢোল পেটায় প্রতিনিয়ত। কিন্তু নদীকে পরিশুদ্ধ করার জন্য তাদের কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না এতটাই দুর্গন্ধ, নদীর উপর দিয়ে যাবেন তো দূরের কথা। এত রাত নদীটা মরে গেছে, এখন শুরু হয়েছে ধলেশ্বরী শীতলক্ষ্যা। আবার ধামরাইতে অনেক ছিল যেগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। যে কারণে তিনি খাল খনন শুরু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সময় পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যার ফলে ঢাকায় দূষণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এগুলো গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এখন ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে একটি। এখানে সরকারের কোনো লক্ষ্য নেই। জনগণের জীবন সুন্দর করার জন্য, জনগণের ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য, জীবন জীবিকার পথটা সুগম করার জন্য তাদের কোনো আগ্রহ নেই। কারণ জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা নির্বাচিত নয়, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। যে করে হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, সে কারণে এসব বিষয়ের ওপর কোনো গুরুত্ব নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, তুরাগ নদীর পাশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকের সহযোগিতায়, তাদের সমর্থনে বৃহৎ গ্রাম গড়ে তুলেছে। সেই গ্রামগুলো একেবারে নদীর উপরে গড়ে তুলেছে, নদী উপর গড়ে উঠেছে, নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে সমাধান করার খবর নেই, এই সরকারের সাথে যারা জড়িত তারাই এই কাজগুলো করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষকে যদি টিকে থাকতে হয়, ভবিষ্যৎ যদি সুন্দর করতে হয় এবং ভবিষ্যতকে সত্যিকার অর্থে যদি গণতন্ত্রমুখী করতে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আজকে গণতন্ত্র হয়ে বলেই কোনো জবাবদিহিতা নেই।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, লন্ডনে গেলে দেখবেন, তারা টেমস নদী কীভাবে পরিশুদ্ধ করেছে। ফলে এত বড় একটা শহর হওয়া সত্ত্বেও টেমস নদীর পানি এতটুকু দূষিত হয়নি। অথচ আমাদের বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্গন্ধের কারণে নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না। আর তুরাগে গেলে দেখা যায়, নদটি মরে গেছে প্রায়! এখন শুরু হয়েছে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা। এগুলোও মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে! এছাড়া সাভার ও ধামরাইয়ে ছোট ছোট যে নদীগুলো আছে, সেগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে যে বিষয়গুলোর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, সেগুলোকে আমরা নিজেরাই ধ্বংস করছি। তিস্তা নিয়ে সরকার ভারতের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। ফলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপান্তর হতে যাচ্ছে। সরকার আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করে না; বরং টিপাইমুখ নিয়ে প্রতিবাদ করায় হয়তো বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপি মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. এ কে এম এনামুল হক, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান, ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।