Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৮৯ জন দেখেছেন

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রংপুরের কাচারী বাজার রোডে জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ, এটাই তো আমার সংসার, এরাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই আমার বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, বোনের স্নেহ আপনাদের মাঝ থেকেই আমি পেয়েছি। কাজেই আপনাদের জন্য বাবার মতো যদি প্রয়োজন হয়, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত। সেই কথাটাও আপনাদের জানিয়ে দিয়ে যেতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো, বলেন?

রংপুরে সমাবেশ থেকে বেক্সিমকো পাওয়ার নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। এখন উন্নয়নশীল দেশ। এরপর উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। সব ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলে আজ বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। সেটাই আপনাদের কাছে চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হাত উঁচিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অনুরোধ করলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেন।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তাদের জিয়া জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন-ফখরুদ্দিন করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এ জন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।

বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় আনতে বা পরতে হয় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাপড় কেনার আর্থিক সচ্ছলতা এসে গেছে। আগে এক বেলা ভাত পেত না, এখন দুই বেলা, তিন বেলা খাবারের সুযোগ হয়ে গেছে। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। এদেশের কৃষক, এদেশের শ্রমিক, এদেশের মেহনতি মানুষ, প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন, দেশের মানুষ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোল করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমারা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করবো।

hasina-5

সরকারপ্রধান বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করে নাই। ওই খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই কাজ হয়। নৌকা মার্কা ছাড়া হয় না। নৌকা মার্কা ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কা ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে, আজকে হতদরিদ্র বলে নেই; মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেটুকুও থাকবে না। কোনো মানুষ হতদরিদ্র থাকবে না।’

সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কষ্ট করে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। হয়তো এই মাঠ ছোট, ধরছে না। আমি আসার সময় দেখলাম, রাস্তায় অনেক মানুষ। অনেক দূরে দূরে যারা অবস্থান করছেন, হয়তো চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে, আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। আমি হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। একটা মানুষ আপনজন হারালে শোক সইতে পারে না। আর আমি একই দিনে সব হারিয়েও শুধু একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি, এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন জোগাব, প্রতিটি মানুষের ঘর করে দেবো, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করব।

hasina-8

প্রাধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে আর মঙ্গা আসেনি। নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়, সেটা প্রমাণ করেছি। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কৃষকের আর সারের জন্য আন্দোলন করতে হয় না। অথচ খালেদা জিয়া সারের জন্য কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল।

তিনি বলেন, যখন ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখনো মঙ্গা ছিল না কিন্তু ২০০১ সালে যখন ওই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে, ২ হাতে টাকা-পয়সা লুট করে। সে, তার ছেলেরা মিলে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। তারপর থেকে আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তারপর থেকে এ দেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয় নাই।

রংপুরবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি। এর আগে এতগুলো প্রকল্প একসঙ্গে কেউ করে দিয়েছে কিনা জানি না। আমরা আপনাদের রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। ১০০ শয্যার রংপুর শিশু হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে, সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। কারণ গ্যাসের দাবি আপনাদের বহুদিনের।

তিনি আরও বলেন, আসামের নুমালীগড় থেকে পাইপ লাইনে ডিজেল এনে সৈয়দপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর ব্যবস্থা করেছি। এখানে কোনোদিন তেলের অভাব হবে না, ডিজেলের অভাব হবে না, সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি। সৈয়দপুরে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যায় আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এয়ার স্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সেখানে গবেষণা হবে। একদিন আমাদের দেশের মানুষ চাঁদেও যেতে পারবে, প্লেন বানাবে-এ ধরনের শিক্ষা সেখানে দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর অবহেলিত ছিল, সেটা আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি। এটা আঞ্চলিক বিমাবন্দর। এটা যাতে নেপাল, ভুটান মালদ্বীপ ও ভারত ব্যবহার করতে পারবে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। এসব দেশের সঙ্গে যাতে বাণিজ্য বিস্তার হয় তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।

তরুণরা আগামী দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো, বলেন?

মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা: দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, খায়রুজ্জামান লিটন, ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দলের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা: জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

Tag :
জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রংপুরের কাচারী বাজার রোডে জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ, এটাই তো আমার সংসার, এরাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই আমার বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, বোনের স্নেহ আপনাদের মাঝ থেকেই আমি পেয়েছি। কাজেই আপনাদের জন্য বাবার মতো যদি প্রয়োজন হয়, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত। সেই কথাটাও আপনাদের জানিয়ে দিয়ে যেতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো, বলেন?

রংপুরে সমাবেশ থেকে বেক্সিমকো পাওয়ার নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। এখন উন্নয়নশীল দেশ। এরপর উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। সব ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলে আজ বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। সেটাই আপনাদের কাছে চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হাত উঁচিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অনুরোধ করলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেন।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার কুপুত্র তাদের জিয়া জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন-ফখরুদ্দিন করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এ জন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।

বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় আনতে বা পরতে হয় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাপড় কেনার আর্থিক সচ্ছলতা এসে গেছে। আগে এক বেলা ভাত পেত না, এখন দুই বেলা, তিন বেলা খাবারের সুযোগ হয়ে গেছে। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। এদেশের কৃষক, এদেশের শ্রমিক, এদেশের মেহনতি মানুষ, প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন, দেশের মানুষ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোল করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমারা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করবো।

hasina-5

সরকারপ্রধান বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েকদিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করে নাই। ওই খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই কাজ হয়। নৌকা মার্কা ছাড়া হয় না। নৌকা মার্কা ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কা ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে, আজকে হতদরিদ্র বলে নেই; মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেটুকুও থাকবে না। কোনো মানুষ হতদরিদ্র থাকবে না।’

সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কষ্ট করে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। হয়তো এই মাঠ ছোট, ধরছে না। আমি আসার সময় দেখলাম, রাস্তায় অনেক মানুষ। অনেক দূরে দূরে যারা অবস্থান করছেন, হয়তো চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে, আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। আমি হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। একটা মানুষ আপনজন হারালে শোক সইতে পারে না। আর আমি একই দিনে সব হারিয়েও শুধু একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি, এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন জোগাব, প্রতিটি মানুষের ঘর করে দেবো, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করব।

hasina-8

প্রাধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে আর মঙ্গা আসেনি। নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়, সেটা প্রমাণ করেছি। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কৃষকের আর সারের জন্য আন্দোলন করতে হয় না। অথচ খালেদা জিয়া সারের জন্য কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল।

তিনি বলেন, যখন ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখনো মঙ্গা ছিল না কিন্তু ২০০১ সালে যখন ওই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে, ২ হাতে টাকা-পয়সা লুট করে। সে, তার ছেলেরা মিলে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। তারপর থেকে আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তারপর থেকে এ দেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয় নাই।

রংপুরবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি। এর আগে এতগুলো প্রকল্প একসঙ্গে কেউ করে দিয়েছে কিনা জানি না। আমরা আপনাদের রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। ১০০ শয্যার রংপুর শিশু হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে, সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। কারণ গ্যাসের দাবি আপনাদের বহুদিনের।

তিনি আরও বলেন, আসামের নুমালীগড় থেকে পাইপ লাইনে ডিজেল এনে সৈয়দপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর ব্যবস্থা করেছি। এখানে কোনোদিন তেলের অভাব হবে না, ডিজেলের অভাব হবে না, সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি। সৈয়দপুরে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যায় আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এয়ার স্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সেখানে গবেষণা হবে। একদিন আমাদের দেশের মানুষ চাঁদেও যেতে পারবে, প্লেন বানাবে-এ ধরনের শিক্ষা সেখানে দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর অবহেলিত ছিল, সেটা আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি। এটা আঞ্চলিক বিমাবন্দর। এটা যাতে নেপাল, ভুটান মালদ্বীপ ও ভারত ব্যবহার করতে পারবে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। এসব দেশের সঙ্গে যাতে বাণিজ্য বিস্তার হয় তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।

তরুণরা আগামী দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো, বলেন?

মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা: দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, খায়রুজ্জামান লিটন, ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দলের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা: জামাল উদ্দিন প্রমুখ।