নিজস্ব প্রতিবেদক :
জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দোহায় অনুষ্ঠিত জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলন থেকে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কাতারের প্রতি আমাদের সমবেদনা শুধু নয়, তাদের প্রতি তা ব্যক্ত করা এবং অত্যন্ত গর্হিত যে কাজটি ইসরায়েল করেছে, তার নিন্দা করা। সেটাই আমরা করেছি।
তিনি বলেন, কাতারে খুবই অপ্রত্যাশিত এবং বেআইনিভাবে ইসরায়েল একটি হামলা চালিয়েছিল। সবচেয়ে অদ্ভুৎ ব্যাপার হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কিছু শর্তাবলির অধীনে কিন্তু হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটা বোঝাপড়ার মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। আলোচনা করতে যায় যারা, আলোচকদের মেরে ফেলতে চাওয়া এটা বড় অদ্ভুৎ বিষয়। যুদ্ধ শেষ করতে হলে তো আলোচনা করতেই হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, রোববার দোহায় মন্ত্রী পর্যায়ের এবং সোমবার সম্মেলন ছিল। এটার মূল উদ্দেশ্যে ছিল– ইসরায়েলি এই আক্রমণের নিন্দা করা এবং কাতারের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মীতা জানানো। আমরা সেটাই করেছি।
বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান বা আরব দেশগুলোর অবস্থান তো একই। আমরা নিন্দা জানিয়েছি এবং কাতারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছি।
কাতার সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগেই কিন্তু হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিছু শর্তের মাধ্যমে। এখন আলোচনা করতে যাওয়া, আলোচকদের মেরে ফেলার চেষ্টা করার বিষয়টি বড় অদ্ভুত। কারণ যেকোনও যুদ্ধ শেষ করতে হলে আলোচনা তো করতেই হবে। আলোচকদের যদি মেরে ফেলা হয়, কিংবা চেষ্টা করা হয়— তাহলে আলোচনা হবে কী করে। এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। কাতারে যে সভা হয়েছে, সেটার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই দুঃসময়ে কাতারের প্রতি আমাদের যে সমবেদনা শুধু নয়, তাদের সমর্থন ব্যক্ত করা এবং যে অত্যন্ত গর্হিত কাজ ইসরায়েল করেছে, সেটা উল্লেখ করা।
তিনি বলেন, কাতারে মন্ত্রী পর্যায়ে সভার কাজ ছিল খসড়া তৈরি করা, যেটা সামিটে বিবেচনা করা হবে। খসড়া তৈরি হয়েছে, সেটি সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনে উত্থাপিত হয়েছে এবং অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া ডেলিগেশন প্রধান বেশিরভাগই তাদের দেশের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের আক্রমণের নিন্দা করা, কাতারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা, এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
কাতারের সামিট প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছি এবং প্রয়োজনে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছি।
বন্ধুপ্রতিম দেশটির প্রতিদ্বন্ধিতার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক আগে এটার প্রতিযোগী দিয়েছি। আমাদের প্রতিযোগিতা ছিল সাইপ্রাসের সঙ্গে। কিন্তু ফিলিস্তিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে অনেক পরে এটাতে যোগ দিয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এটা চার বছর আগের সিদ্ধান্ত। এই সরকার সেটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা অনেক আগে এটার প্রতিযোগী হয়েছি এবং আমাদের প্রতিযোগিতা ছিল সাইপ্রাসের সঙ্গে। অনেক পরে ফিলিস্তিন এটাতে যোগ দিয়েছে এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। সাধারণত, যোগাযোগ করার বিষয়টি স্বাভাবিক।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই ঘোষণা চার বছরে আগের।
ঢাকার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, পত্রিকায় লেখা হয়েছে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মুখোমুখি। তবে হেডলাইন লেখা উচিত ছিল, ফিলিস্তিন বাংলাদেশের মুখোমুখি। কেননা চার বছর আগে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ছিলো সাইপ্রাসের। তবে ফিলিস্তিন অনেক পরে এতে যোগ দেয়। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। যোগাযোগ করাটা স্বাভাবিক ছিল।