Dhaka শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রামের ওপর নির্ভরশীল : গভর্নর

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, চট্টগ্রামের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়াতে সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি জোরদার করতে হবে। সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চল সম্ভাবনাময় হলেও সেই সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হলে আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা।

তিনি জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এসএমই ও কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের আরও আন্তরিক হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে অব্যবহৃত অর্থ চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকের মধ্যে দ্রুত বিতরণের নির্দেশনা দেন তিনি।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান গভর্নর। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেন। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দ্রুত আরটিজিএস চালুর কথাও জানান তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে হবে। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন। কনসেপ্ট পেপারে ব্লু-ইকোনমি, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই শিল্পনগর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কৃষি, সিএমএসএমই ও রপ্তানি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, কৃষি ও মৎস্য অধিদপ্তর, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রামের ওপর নির্ভরশীল : গভর্নর

দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রামের ওপর নির্ভরশীল : গভর্নর

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, চট্টগ্রামের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়াতে সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি জোরদার করতে হবে। সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চল সম্ভাবনাময় হলেও সেই সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হলে আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা।

তিনি জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এসএমই ও কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের আরও আন্তরিক হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে অব্যবহৃত অর্থ চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকের মধ্যে দ্রুত বিতরণের নির্দেশনা দেন তিনি।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান গভর্নর। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেন। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দ্রুত আরটিজিএস চালুর কথাও জানান তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে হবে। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন। কনসেপ্ট পেপারে ব্লু-ইকোনমি, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই শিল্পনগর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কৃষি, সিএমএসএমই ও রপ্তানি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, কৃষি ও মৎস্য অধিদপ্তর, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।