কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ও তার আত্মীয় স্বজন মিলে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। ব্যাংকের টাকা লোপাট করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। মানবিক দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নিজ দলের ঠিকাদার নিয়োগ করে আমি আর মামু মিলে দেশটাকে পুটলা করেছে হাসিনা পরিবার।
জামায়াতের আমির বলেন, সবক্ষেত্রে আমরা ন্যায় বিচার চাই বৈষম্য চাই না। সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষ মিলেমিশে সমান অধিকারের ভিত্তিতে বসবাস করবে। সর্বক্ষেত্রে দেশাত্মবোধের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করতে সচেষ্ট থাকবে।
তিনি বলেন, জনগণ একটি পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছে। অথচ সমাজ বৈষম্যে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বিগত ১৭ বছরের জঞ্জালের একটিও এখনো যায়নি। কিন্তু কেন? স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কেন মুক্ত হতে পারলাম না। এর জবাব ১৮ কোটি মানুষের সামনে আছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ৩৫ হাজারের মতো সন্তান জীবনের তরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে, ৫শ’ ওপরে দুটি চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছে। মায়ের মুখটা সন্তানের মুখ কিংবা প্রিয়তম স্ত্রীর মুখটাও আর চােখে দেখতে পারবে না। অনেকের পিঠে গুলি রেখে কয়েক’শ সন্তানের মেরুদণ্ড অকেজো হয়ে গেছে। কয়েক হাজার হয় হাত নয়তোবা পা হারিয়েছে। এতোগুলো মানুষের লাল সঙ্গে রক্তের গাদ্দারী করা চলবে না। এ রক্তের আমানত রক্ষা করতে হবে এবং সম্মান দেখাতে হবে।
দেশের পরবর্তী প্রজন্ম ও ছাত্রসমাজের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা ছাত্র সমাজকে কথা দিচ্ছি এমন শিক্ষা ব্যবস্থা হবে, তোমাদের কাগজের ট্কুরো নিয়ে দৌঁড়াতে হবে না। লেখাপড়া শেষ করেই নিশ্চিত কর্মে যোগদানের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রত্যেকটি যুবক-যুবতীদের হাতকে আমরা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এরকম একটা জাতি যখন গড়ে উঠবে তখন এদেশের মানুষ আর বিশ্বের অন্য দেশে চাকরির জন্য যাবে না। যেভাবে ১৭৫৭ সালের আগে বিশ্বের অন্য দেশ থেকে চাকরির জন্য এদেশে আসতো রুটি রোজগারের জন্য, এদেশটা আবার সেই গৌরব ফিরে পাবে ইনশাল্লাহ।
আমাদের দল দখলবাজি-চাঁদাবাজি করে না উল্লেখ করে জামায়োতের এই আমির বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া হবে। দেশে দখলবাজি ও চাঁদাবাজি চলবে না। দখলবাজ, চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে নেতা-কর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। আমাদের দল দখলবাজি-চাঁদাবাজি করে না।
জামায়াতে আমির বলেন, নারী-পুরুষের ব্যবধান এনে আমাদেরকে বলে- জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে এদেশের মানুষ বিপদে পড়বে। মহিলারা মায়ের জাতি, আমরা তাদেরকে মায়ের মতো সম্মান করি। যারা সন্তুষ্টির সঙ্গে বোরকা পরতে চাইবেন, তারা পরবেন। অন্যান্য ধর্মের মায়েদের আমি কীভাবে বোরকা পরাবো? ইসলাম কি আমাদের এই দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছে? কোনোটাই দেয়নি।
তিনি বলেন, তারা যা পছন্দ করবেন, তাই পরবেন। পোশাকের ব্যাপারে জোর খাটানো যাবে না। নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আল্লাহর আইন সবার জন্য সমান। আমরা সেই আইনের জন্য লড়াই করছি। আমি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিব। যদি প্রত্যেকটা মানুষ মানুষকে সম্মান দেয়, ভালোবাসে। তাহলে এই দেশ জান্নাতের টুকরোয় পরিণত হবে।
শফিকুর রহমান বলেন, এই রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সম্পদ, ইজ্জত ও জীবন সম্পূর্ণ নিরাপদ। এদেশের সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে ও নিরাপত্তার সঙ্গে পালন করতে পারবে। ধর্ম পালনে কোথাও বাধার সম্মুখীন হবে না।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দেব, যাতে এ দেশের যুবক-যুবতীদের সার্টিফিকেট নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে না ঘুরতে হয়। কাগজের টুকরো নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে না। পড়াশোনা শেষে চাকরি বা কাজ পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। যুবক-যুবতীদের প্রতিটি হাতকে দেশ গড়ার কারিগরের হাত হিসেবে তৈরি করতে চাই। এ দেশের মানুষ আর বিশ্বে চাকরির জন্য যাবে না। এর আগে বিশ্ব থেকে এদেশে চাকরি করতে আসতো। সেই গৌরব ফিরে পাব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, যারা ধর্মের বিভাজন তৈরি করে মেজোরিটি মাইনোরিটি দিয়ে তারাই ৫৩ বছর আপনাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। আমাদের দলের কেউই এসব অপকর্মে জড়িত নাই। অথচ দোষ দেন আমাদের ঘাড়ে।
শফিকুর রহমান বলেন, যেই সমাজে চাঁদাবাজি-ঘুষখোর থাকবে না, যেই সমাজে দখল বাণিজ্য চলবে না, মানুষে-মানুষে ধর্মে-ধর্মে বৈষম্য থাকবে না। সেই সমাজ গড়ার জন্য লড়াই করতে হবে। আমর সেই লড়াই চালিয়ে যাব।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজাউদ্দিন জোয়ার্দারের সঞ্চালনায় এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যশোর অঞ্চল পরিচালক মো. মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আল্লামা শামীম সাঈদী, জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।