Dhaka বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে যেতে না দিতে হলে গণতন্ত্রে ফেরার বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে যেতে না দিতে হলে গণতন্ত্রে ফেরার বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন কি না, সাংবাদিক স্বাধীন কি না, আমাদের পার্লামেন্ট কার্যকর কি না, আইনের শাসন ও সুশাসন আছে কি না—এসব নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য বিএনপিসহ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের সবাইকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও সমান উদ্যমে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র শুধু ভোটের দিন নয়, প্রতিদিন রক্ষা করতে হয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র সংহত করতে সাংস্কৃতিক সহনশীলতা, ভিন্নমতকে সম্মান এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। শুধু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না; শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও সংসদকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ত্যাগের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন এবং বলেন, তাদের ত্যাগ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের পথে বড় প্রেরণা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে একটি বিশেষ মহল সচেতনভাবে ভিন্ন খাতে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রায় দেওয়া হচ্ছে, তখনই অন্যদিকে মবক্রেসি বা ভায়োলেন্স তৈরি করা হচ্ছে। এটা কীসের আলামত জানি না। আমার মনে হয়—ওই রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে বিশেষ একটা মহল ভিন্ন দিকে দৃষ্টি দিতে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

বিএনপি কোনো বিপ্লবী সংগঠন নয়, বরং একটি মুক্ত, স্বাধীনচেতা গণতান্ত্রিক দল—এ কথা পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বিধায় এই উদ্দেশ্য পূরণে সারাজীবন লড়াই করছে। দেশের মানুষও শত শত বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।

সংস্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, আজ যদি কেউ এককভাবে সংস্কারের দাবি করেন, সেটা সংকীর্ণতা ছাড়া কিছু না। আমরা বহু বছর আগে থেকেই ১০, ২৭ এবং ৩১ দফার মধ্যদিয়ে সংস্কারের কথা বলে আসছি। আজ একটি মহল বিএনপির সংস্কারগুলোকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, চারদিকে হতাশা দেখতে পাই। রায় যখন হচ্ছে, রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে ভিন্ন দিকে দৃষ্টি নিতে কোনো মহল সচেতনতার সঙ্গে চেষ্টা করছে কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায়কে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে একটি মহল সচেতনভাবে চেষ্টা করছে।

সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব জানান, তার দল সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কেউ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে তা মেনে নেয়া হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কারের কথা আজ যখন জোরেশোরে বলা হয়, ২০২২ সালেই আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম। ১০ আর ২৭-এর পরে সবশেষে ৩১ দফায় চূড়ান্ত হয়েছে। আজ যদি কেউ দাবি করেন এককভাবে সংস্কার উদ্যোগের কথা, সেটি সংকীর্ণতা ছাড়া কিছুই নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা সংস্কারের জন্য কমিটেড। আমাদেরকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করতে কেউ যদি চায়, সেটা আমরা মেনে নেব না।’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব আরোপ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা অন্যের মত সহ্য করতে পারি না। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাইলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন মানে সবকিছু নয়। এর অর্থ গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ওপর দায়িত্ব বর্তায় সবসময়ই। নির্বাচন এসেছে, এখন বিএনপির ওপর দায়িত্ব এসেছে গণতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলার।’

অনুষ্ঠানের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করবো, গত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসকে ডকুমেন্টারি হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ আরও বিস্তৃতভাবে গ্রহণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, ড. ওসমান ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার প্রমুখ অংশ নেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল দেড় লাখ জনসংখ্যার দেশ কুরাসাও

দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে যেতে না দিতে হলে গণতন্ত্রে ফেরার বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে যেতে না দিতে হলে গণতন্ত্রে ফেরার বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন কি না, সাংবাদিক স্বাধীন কি না, আমাদের পার্লামেন্ট কার্যকর কি না, আইনের শাসন ও সুশাসন আছে কি না—এসব নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য বিএনপিসহ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের সবাইকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও সমান উদ্যমে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র শুধু ভোটের দিন নয়, প্রতিদিন রক্ষা করতে হয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র সংহত করতে সাংস্কৃতিক সহনশীলতা, ভিন্নমতকে সম্মান এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। শুধু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না; শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও সংসদকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ত্যাগের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন এবং বলেন, তাদের ত্যাগ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের পথে বড় প্রেরণা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে একটি বিশেষ মহল সচেতনভাবে ভিন্ন খাতে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রায় দেওয়া হচ্ছে, তখনই অন্যদিকে মবক্রেসি বা ভায়োলেন্স তৈরি করা হচ্ছে। এটা কীসের আলামত জানি না। আমার মনে হয়—ওই রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে বিশেষ একটা মহল ভিন্ন দিকে দৃষ্টি দিতে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

বিএনপি কোনো বিপ্লবী সংগঠন নয়, বরং একটি মুক্ত, স্বাধীনচেতা গণতান্ত্রিক দল—এ কথা পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বিধায় এই উদ্দেশ্য পূরণে সারাজীবন লড়াই করছে। দেশের মানুষও শত শত বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।

সংস্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, আজ যদি কেউ এককভাবে সংস্কারের দাবি করেন, সেটা সংকীর্ণতা ছাড়া কিছু না। আমরা বহু বছর আগে থেকেই ১০, ২৭ এবং ৩১ দফার মধ্যদিয়ে সংস্কারের কথা বলে আসছি। আজ একটি মহল বিএনপির সংস্কারগুলোকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, চারদিকে হতাশা দেখতে পাই। রায় যখন হচ্ছে, রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে ভিন্ন দিকে দৃষ্টি নিতে কোনো মহল সচেতনতার সঙ্গে চেষ্টা করছে কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায়কে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে একটি মহল সচেতনভাবে চেষ্টা করছে।

সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব জানান, তার দল সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কেউ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে তা মেনে নেয়া হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কারের কথা আজ যখন জোরেশোরে বলা হয়, ২০২২ সালেই আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম। ১০ আর ২৭-এর পরে সবশেষে ৩১ দফায় চূড়ান্ত হয়েছে। আজ যদি কেউ দাবি করেন এককভাবে সংস্কার উদ্যোগের কথা, সেটি সংকীর্ণতা ছাড়া কিছুই নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা সংস্কারের জন্য কমিটেড। আমাদেরকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করতে কেউ যদি চায়, সেটা আমরা মেনে নেব না।’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব আরোপ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা অন্যের মত সহ্য করতে পারি না। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাইলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন মানে সবকিছু নয়। এর অর্থ গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ওপর দায়িত্ব বর্তায় সবসময়ই। নির্বাচন এসেছে, এখন বিএনপির ওপর দায়িত্ব এসেছে গণতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলার।’

অনুষ্ঠানের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করবো, গত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসকে ডকুমেন্টারি হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ আরও বিস্তৃতভাবে গ্রহণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, ড. ওসমান ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার প্রমুখ অংশ নেন।