Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না : জ্বালানি উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব একটা নেই। কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল। সেটাও ফুরিয়ে আসছে। এমনকি দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে আমরা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ব্যয়ও বাড়ে। এসব থামাতে হবে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে নগরের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে সুইচ টিপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদের কথা মাথায় রেখে অপচয়, দুর্নীতি কমাতে হবে। উন্নয়নের আরেকটি বড় সমস্যা আমাদের প্রকল্প ব্যয় বেশি। আপনি যেকোনো ইনডিকেটর নেন, আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশি। আরও বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। এই (পাইপলাইন) প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে নিয়ে ২০২০ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটলে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ইকুইপমেন্টর দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হবে। রাষ্ট্রের এ প্রকল্প প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। মডার্ন বিশ্বের ভিত্তি টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস। মনে রাখতে হবে আমাদের কিন্তু খুব একটা সম্পদ নেই। আমাদের কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল সেটা এখন ফুরিয়ে আসছে। মানবসম্পদ ছাড়া আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ আর নেই। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের সম্পদ এমনিতে কম, যা আছে সেটারও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছিনা দুটি কারণে। একটি দুর্নীতি, আরেকটি অপচয়। যদি আমরা দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে পারি, টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস করতে পারি তাহলে বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রোথ এচিভমেন্ট সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, আগে পেট্রোলিয়াম প্রডাক্ট আমদানি খাতে চার-পাঁচজন বিড করতে পারত। আমরা এটা পরিবর্তন করেছি, ফলে এখন ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান বিড করে। আমরা বছরে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকা সেভ করতে সক্ষম হয়েছি। এভাবে আমি যে তিনটি মন্ত্রণালয় দেখি সেখানে আমরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।

ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দিত করতে চাই, দুরূহ প্রকল্পটি সমাপ্ত করেছে। আমি আশা করব, সামনের প্রকল্পগুলোতে তারা প্রকল্প ব্যয় সাশ্রয়ী হবে এবং দ্রুততম সময়ে করবেন। দ্রুততম সময়ে করলেই কিন্তু ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। যেমন বলা হয়, কান টানলে মাথা আসে। এ প্রকল্পেরও তিনবার রিভিশন হয়েছে। এমন এমন প্রকল্প আছে ১৭ বছর, ১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এ ধরনের প্রকল্প আর টেনে নেওয়া সম্ভব না। আমাদের যেকোনো প্রকল্পে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন খুব কম। সামনের দিনে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। দেখুন আমাদের কত ইঞ্জিনিয়ার বেকার। নয়তো এমন কাজ করছে যেটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ নয়। এসব জিনিস নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অন্য দেশের ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্রুত সমাধান করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পগুলোয় নিজস্ব ভ্যালু যুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে নেগোসিয়েশন (দর–কষাকষি) হলো। সেখানেও ভ্যালু যুক্ত করা নিয়ে কথা হয়েছে। সামনের দিনে ভ্যালু বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আমাদের অসংখ্য প্রকৌশলী বেকার। এমনকি বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলীকেও বেকার থাকতে হচ্ছে। অন্য দেশের ঠিকাদারের ওপর আমরা অতি নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ (প্রধান প্রকৌশলী) মেজর জেনারেল মু. ঘাসান-উজ-জামান।

প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ২৪৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত পাইপের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা ১০ ইঞ্চি। ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন গেছে নদীর ১৮ মিটার নিচ দিয়ে। প্রতি ঘণ্টায় ডিজেল যাবে ৪ লাখ লিটার। ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৭৮ দশমিক ৩ একর।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না : জ্বালানি উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৪:০২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব একটা নেই। কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল। সেটাও ফুরিয়ে আসছে। এমনকি দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে আমরা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ব্যয়ও বাড়ে। এসব থামাতে হবে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে নগরের পতেঙ্গায় ডেসপাস টার্মিনালে সুইচ টিপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদের কথা মাথায় রেখে অপচয়, দুর্নীতি কমাতে হবে। উন্নয়নের আরেকটি বড় সমস্যা আমাদের প্রকল্প ব্যয় বেশি। আপনি যেকোনো ইনডিকেটর নেন, আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশি। আরও বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। এই (পাইপলাইন) প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে নিয়ে ২০২০ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটলে অবশ্যই ব্যয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ইকুইপমেন্টর দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হবে। রাষ্ট্রের এ প্রকল্প প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। মডার্ন বিশ্বের ভিত্তি টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস। মনে রাখতে হবে আমাদের কিন্তু খুব একটা সম্পদ নেই। আমাদের কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল সেটা এখন ফুরিয়ে আসছে। মানবসম্পদ ছাড়া আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ আর নেই। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের সম্পদ এমনিতে কম, যা আছে সেটারও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছিনা দুটি কারণে। একটি দুর্নীতি, আরেকটি অপচয়। যদি আমরা দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে পারি, টেকনোলজিক্যাল প্রগ্রেস করতে পারি তাহলে বিপুল জনসংখ্যার জন্য গ্রোথ এচিভমেন্ট সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, আগে পেট্রোলিয়াম প্রডাক্ট আমদানি খাতে চার-পাঁচজন বিড করতে পারত। আমরা এটা পরিবর্তন করেছি, ফলে এখন ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান বিড করে। আমরা বছরে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকা সেভ করতে সক্ষম হয়েছি। এভাবে আমি যে তিনটি মন্ত্রণালয় দেখি সেখানে আমরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।

ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দিত করতে চাই, দুরূহ প্রকল্পটি সমাপ্ত করেছে। আমি আশা করব, সামনের প্রকল্পগুলোতে তারা প্রকল্প ব্যয় সাশ্রয়ী হবে এবং দ্রুততম সময়ে করবেন। দ্রুততম সময়ে করলেই কিন্তু ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। যেমন বলা হয়, কান টানলে মাথা আসে। এ প্রকল্পেরও তিনবার রিভিশন হয়েছে। এমন এমন প্রকল্প আছে ১৭ বছর, ১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এ ধরনের প্রকল্প আর টেনে নেওয়া সম্ভব না। আমাদের যেকোনো প্রকল্পে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন খুব কম। সামনের দিনে নিজস্ব ভ্যালু এডিশন বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। দেখুন আমাদের কত ইঞ্জিনিয়ার বেকার। নয়তো এমন কাজ করছে যেটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ নয়। এসব জিনিস নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অন্য দেশের ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্রুত সমাধান করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পগুলোয় নিজস্ব ভ্যালু যুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে নেগোসিয়েশন (দর–কষাকষি) হলো। সেখানেও ভ্যালু যুক্ত করা নিয়ে কথা হয়েছে। সামনের দিনে ভ্যালু বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আমাদের অসংখ্য প্রকৌশলী বেকার। এমনকি বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলীকেও বেকার থাকতে হচ্ছে। অন্য দেশের ঠিকাদারের ওপর আমরা অতি নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ (প্রধান প্রকৌশলী) মেজর জেনারেল মু. ঘাসান-উজ-জামান।

প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ২৪৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত পাইপের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা ১০ ইঞ্চি। ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন গেছে নদীর ১৮ মিটার নিচ দিয়ে। প্রতি ঘণ্টায় ডিজেল যাবে ৪ লাখ লিটার। ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৭৮ দশমিক ৩ একর।