নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) উদ্দেশ্যমূলকভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল এবং এখনো আছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। আমি (বর্তমান) চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করব। একসময় বলবও আপনাকে, কারা তখনো আমাদের বিচলিত বা বিব্রত করার চেষ্টা করেছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশকে নানাভাবে বিব্রত করার চেষ্টাকে আমরা নানাভাবে প্রতিহত করেছি, ন্যায়ের সঙ্গে আইনের মাধ্যমে। দুদকের সব্কাই আমি সাধুবাদ জানাই। সত্য কথা বলতে গেলে সবাই একমত না। দুই-একজন এর মধ্যে বিট্রে করার চেষ্টা করেছে, যেটা আমি ধরেছি। এটা একটি সুদূরপ্রসারী কাজ। আমাদের তখনকার চেয়ারম্যান ধরতে পারেন নাই। কিন্তু আমি ধরেছি। যে এজাহারটি করা হয়েছে, সেটি ফ্যাক্টের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। তখন আমি এজাহার বদল করতে বলি।
২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে সরকারের উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন হয়নি। এটা সরকারের সাফল্য, সরকারের কর্মকর্তাদের সাফল্য। দুর্নীতি দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
দুর্নীতিকে প্রান্তিক উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরও গতি পাবে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতিবাজের পরিচয় কেবলই দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজদের আর কোনো পরিচয় নেই। ভুল পদক্ষেপে যেন কারও ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরি করতে কাজ করতে হবে। নৈতিকতা প্রদর্শন করে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানবিক, বৈষম্যহীন, দারিদ্রমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ। আমাদের পবিত্র সংবিধানও দুর্নীতিকে নিষিদ্ধ করেছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না”। সংবিধানের এ মর্মকে ধারণ করেই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন।
সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সব থেকে বড় বাধা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথ বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে গেছেন নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আবারো সেই পথ ধরে এগিয়ে চলছে দেশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ুষ্কাল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাস্তবায়িত হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী বহুমুখী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক, মোছা. আছিয়া খাতুন ও কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
এর আগে সকালে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে এই দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ২১তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ ’।
বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। একই সঙ্গে দেশে সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতি বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















