Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে, অত সহজ নয় : প্রধানমন্ত্রী

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা মনে করেছে দুইটা বাসে আগুন দিলেই, সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না। এটাই আমি বলতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারে আসায় জনগণের উন্নতি হয়েছে, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, আজকে সব জায়গায় বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করতে বলবে- এত সাহস কোথা থেকে পায়?

আগুন সন্ত্রাস প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে হাসিনা বলেন, আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, দু-চারটা গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলে দেওয়া যাবে না। নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। বরং আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পুড়ে যাবে।

বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজরা মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চায়। খুন, বোমাবাজি, খুন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেব, ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করে দেবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়। লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর কতগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে, আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিৎ।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। তারা লুটপাট, জনগণের ভোট চুরি এই চুরি করাটাই ছিলে তাদের কাজ। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনও কাজ করেনি। সেটা করলে অনেক আগেই বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে। দেশে ফিরে এসে আমি দেখেছি—কীভাবে ক্ষমতা ভোগ করে কুক্ষিগত করে রাখে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, আমি সব হারিয়েছি। কেবল এক বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই জনগণই আমার সব। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার নেপথ্য বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন। আমাদের ক্ষমতায় আসতে দিল না। কেন দিল না? দিল না এই কারণে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকার কম্পানিগুলো এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছি, আমি গ্যাস বেচব না। এই গ্যাস আমার জনগণের গ্যাস। এই গ্যাস জনগণের কাজে ব্যবহার হবে। আমি বিদ্যুৎ দেব, সার কারখানা করব, পেট্রো ক্যামিক্যালস করব। জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে, ৫০ বছর রিজার্ভ রেখে তার যদি অতিরিক্ত থাকে তাহলে দেব। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। অবশ্য আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসল বিএনপি-জামায়াত জোট। যে বিএনপিকে ’৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে। এই ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে ওই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত ভোট চোর, জনগণের সম্পদ চোর সেই বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় বসাল ভোট কারচুপির মধ্যে দিয়ে।

শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যে সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। ফলাফল কি? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলাম, খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না। আসলেও পায়নি। দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি সেই একই জায়গায় কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না এবার আমরা তেলও পেয়েছি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় জেনে-বুঝেই দেয়। এটা হলো বাস্তবতা। এটাই আল্লাহর কাজ। আল্লাহ জানেন ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে লাগবে।

শেখ হাসিনা চলমান আগুন সন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি আজ কি করছে? আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি তখন তাদের কাজ হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন দিয়ে মা-শিশু, মা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য কোলের মধ্যে ধরে রেখেছে সেই মা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে বাচ্চাসহ। আজকে সেই আগুন দিয়ে রেল পোড়াচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সাল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। তখন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল। সে নির্বাচন ঠেকানোর নামে এই বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ৫৮২টি স্কুল ঘর পুড়িয়ে দেয়, ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ভাঙে। ৬টি ভূমি অফিস ভাঙে। ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। যেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল, মানুষ এর ভেতরে পুড়ে কয়লা হয়। যাকে আগুন দেয় হেলপার সেখানে কয়লা হয়ে থাকে। ২৯টি রেল গাড়ি, দুটি লঞ্চ পুড়িয়েছে, সেই ২০১৩ থেকে ’১৫ পর্যন্ত তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও, ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। ৫০০-এর মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এখনো সে মানুষগুলো পোড়া ঘা নিয়ে কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অপর দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কি করেছে? ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা সরকারে এসেছি। ২০১৮ সাল। নির্বাচনে তারা আসল। কিন্তু তারা নির্বাচনে কি করল? ভোট চাইবে কী, লন্ডনে বসে নমিনেশন দেয় একটা, গুলশান অফিসে বসে আরেকটা, পল্টন অফিসে বসে আরেকটা। নমিনেশন বেচা, বাণিজ্য শুরু করে দিল। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে আপনারা জানেন। এই বাণিজ্য করে তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছি। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্যাংশনে পড়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। যদিও আমরা তা অনেক কমিয়ে এনেছি। তারপরেও আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি যাতে মানুষের খাদ্যের কষ্ট না হয়। ইনশাল্লাহ খাদ্যের কষ্ট কখনও হবে না, কারণ আমরা খাদ্যের উৎপাদন বাড়িয়েছি। যেখানে এক কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে আজ নয় কোটি মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদন করছি।

অনাবাদি জমি ফেলে না রাখার আহ্বান জানিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে ব্যাপকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের বলতে চাই, কোনও জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। আমাদের দেশে যেন খাদ্যের কোনও অভাব না হয়। তাই সবাই যার যতটুকু জমি আছে, যেভাবে পারেন আপনারা চাষ করুন। ফসল ফলান, উৎপাদন করুন। নিজের খাদ্যের ব্যবস্থা নিজেরা করেন, সেটাই আমরা চাই।’

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবেন। তাহলে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব দেশ, দক্ষ জনগণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন তৈরি করব। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলব।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন। নৌকা মার্কা। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে তখন বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকে তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আমরা যারা প্রার্থী দিয়েছি তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন এটাই আমার আহ্বান। আপনারা দেবেন, বলেন হাত তুলে ওয়াদা করেন।

সিলেটের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সিলটবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি বারবার সিলেটে এসেছি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সিলেটবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সুরমা নদীসহ সব নদী খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন রেলস্টেশন করে দিয়েছি। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-বাদাঘাট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় ও চার লেন হচ্ছে। ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আধুনিক সিলেট গড়ার কাজ চলছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একশ শয্যার বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেটের মানুষ সবসময় আমাদের পাশে রয়েছে। আমিও পাশে আছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতির জন্য আমরা লড়াই করছি।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১-এর একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওসমানী বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে, অত সহজ নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা মনে করেছে দুইটা বাসে আগুন দিলেই, সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না। এটাই আমি বলতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারে আসায় জনগণের উন্নতি হয়েছে, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, আজকে সব জায়গায় বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করতে বলবে- এত সাহস কোথা থেকে পায়?

আগুন সন্ত্রাস প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে হাসিনা বলেন, আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, দু-চারটা গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলে দেওয়া যাবে না। নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। বরং আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পুড়ে যাবে।

বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজরা মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চায়। খুন, বোমাবাজি, খুন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেব, ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করে দেবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়। লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর কতগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে, আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিৎ।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। তারা লুটপাট, জনগণের ভোট চুরি এই চুরি করাটাই ছিলে তাদের কাজ। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনও কাজ করেনি। সেটা করলে অনেক আগেই বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে। দেশে ফিরে এসে আমি দেখেছি—কীভাবে ক্ষমতা ভোগ করে কুক্ষিগত করে রাখে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, আমি সব হারিয়েছি। কেবল এক বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই জনগণই আমার সব। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার নেপথ্য বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন। আমাদের ক্ষমতায় আসতে দিল না। কেন দিল না? দিল না এই কারণে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকার কম্পানিগুলো এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছি, আমি গ্যাস বেচব না। এই গ্যাস আমার জনগণের গ্যাস। এই গ্যাস জনগণের কাজে ব্যবহার হবে। আমি বিদ্যুৎ দেব, সার কারখানা করব, পেট্রো ক্যামিক্যালস করব। জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে, ৫০ বছর রিজার্ভ রেখে তার যদি অতিরিক্ত থাকে তাহলে দেব। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। অবশ্য আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসল বিএনপি-জামায়াত জোট। যে বিএনপিকে ’৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে। এই ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে ওই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত ভোট চোর, জনগণের সম্পদ চোর সেই বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় বসাল ভোট কারচুপির মধ্যে দিয়ে।

শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যে সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। ফলাফল কি? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলাম, খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না। আসলেও পায়নি। দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি সেই একই জায়গায় কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না এবার আমরা তেলও পেয়েছি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় জেনে-বুঝেই দেয়। এটা হলো বাস্তবতা। এটাই আল্লাহর কাজ। আল্লাহ জানেন ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে লাগবে।

শেখ হাসিনা চলমান আগুন সন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি আজ কি করছে? আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি তখন তাদের কাজ হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন দিয়ে মা-শিশু, মা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য কোলের মধ্যে ধরে রেখেছে সেই মা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে বাচ্চাসহ। আজকে সেই আগুন দিয়ে রেল পোড়াচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সাল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। তখন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল। সে নির্বাচন ঠেকানোর নামে এই বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ৫৮২টি স্কুল ঘর পুড়িয়ে দেয়, ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ভাঙে। ৬টি ভূমি অফিস ভাঙে। ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। যেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল, মানুষ এর ভেতরে পুড়ে কয়লা হয়। যাকে আগুন দেয় হেলপার সেখানে কয়লা হয়ে থাকে। ২৯টি রেল গাড়ি, দুটি লঞ্চ পুড়িয়েছে, সেই ২০১৩ থেকে ’১৫ পর্যন্ত তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও, ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। ৫০০-এর মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এখনো সে মানুষগুলো পোড়া ঘা নিয়ে কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অপর দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কি করেছে? ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা সরকারে এসেছি। ২০১৮ সাল। নির্বাচনে তারা আসল। কিন্তু তারা নির্বাচনে কি করল? ভোট চাইবে কী, লন্ডনে বসে নমিনেশন দেয় একটা, গুলশান অফিসে বসে আরেকটা, পল্টন অফিসে বসে আরেকটা। নমিনেশন বেচা, বাণিজ্য শুরু করে দিল। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে আপনারা জানেন। এই বাণিজ্য করে তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছি। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্যাংশনে পড়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। যদিও আমরা তা অনেক কমিয়ে এনেছি। তারপরেও আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি যাতে মানুষের খাদ্যের কষ্ট না হয়। ইনশাল্লাহ খাদ্যের কষ্ট কখনও হবে না, কারণ আমরা খাদ্যের উৎপাদন বাড়িয়েছি। যেখানে এক কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে আজ নয় কোটি মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদন করছি।

অনাবাদি জমি ফেলে না রাখার আহ্বান জানিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে ব্যাপকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের বলতে চাই, কোনও জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। আমাদের দেশে যেন খাদ্যের কোনও অভাব না হয়। তাই সবাই যার যতটুকু জমি আছে, যেভাবে পারেন আপনারা চাষ করুন। ফসল ফলান, উৎপাদন করুন। নিজের খাদ্যের ব্যবস্থা নিজেরা করেন, সেটাই আমরা চাই।’

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবেন। তাহলে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব দেশ, দক্ষ জনগণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন তৈরি করব। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলব।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন। নৌকা মার্কা। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে তখন বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকে তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আমরা যারা প্রার্থী দিয়েছি তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন এটাই আমার আহ্বান। আপনারা দেবেন, বলেন হাত তুলে ওয়াদা করেন।

সিলেটের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সিলটবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি বারবার সিলেটে এসেছি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সিলেটবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সুরমা নদীসহ সব নদী খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন রেলস্টেশন করে দিয়েছি। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-বাদাঘাট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় ও চার লেন হচ্ছে। ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আধুনিক সিলেট গড়ার কাজ চলছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একশ শয্যার বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেটের মানুষ সবসময় আমাদের পাশে রয়েছে। আমিও পাশে আছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতির জন্য আমরা লড়াই করছি।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১-এর একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওসমানী বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।