নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোরবানির ঈদের বাকি আর কয়েকদিন। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার ও খামারিরা ইতিমধ্যে রাজধানীর অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায়নি। এ কারণে এখনো কোরবানির হাট জমে ওঠেনি। হাটে কোরবানির গরু-ছাগল উঠলেও ক্রেতারা এখনই কিনছেন না। ক্রেতা আসলেই দাম হাঁকাচ্ছেন তারা। তাঁরা দেখে দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। ফলে বেচাকেনা কম হচ্ছে।
বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেপারীরা এখন বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। ধীরে ধীরে বাজারের অবস্থা দেখে পশু কিনবেন তারা। কারণ শেষদিকে এসে অনেক সময় দাম কমে যায়। এজন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
আবার বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা এখনো পশু কেনা শুরু না করায় বাজারের প্রকৃত অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না। কোরবানির দিন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই বেচাকেনা জমে উঠতে থাকবে।
রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
বিক্রেতারা জানান, ঠিক গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ওই হাটে গত বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর (৩ থেকে ৫ মণ) মণপ্রতি দাম ছিল ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা এবং বড় গরু (৫ মণের উপরে) মণপ্রতি ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু মণপ্রতি ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায়। যদিও অধিকাংশ বেপারী প্রথমে দাম হাঁকছেন আরও বেশি।
ব্যাপারীরা আরও জানিয়েছেন, দামের কারণে এ বছর ছোট গরুর চাহিদা বেশি। এখন যারা হাটে আসছেন, তারা ছোট গরু কিনছেন। এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরুর চাহিদা বেশি। ছোটগুলোর মধ্যে আবার দেশি জাতের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর বড় গরুর ক্রেতা তুলনামূলক অনেক কম।
পাবনার খামারি জামাল মিয়া বলেন, গত বছর ১৬টি গরু বিক্রি হলেও আশানুরূপ দাম পাইনি। এ বছর সেই তুলনায় খরচ অনেক বেড়েছে। দাম বাড়িয়ে চাইলে ক্রেতাদের খুব একটা সাড়া মিলছে না।
তিনি বলেন, এ বছর ৩০টি গরু এনেছি হাটে। ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। সেগুলো সব ছোট গরু। লাভ কম। বড়গুলোর ক্রেতা নাই। কিন্তু আমার বেশিরভাগ বড় গরু। শেষ পর্যন্ত দাম কমে বিক্রি করতে হলে লোকসানে পড়তে হবে। তার খামারে বেশিভাগ ৪০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি ওজনের গরু ছিল। প্রায় এক বছর লালন-পালন করতে প্রতিটি গরুতে শুধু খাবার খরচ হয়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। সব গরু তিনি এখনও হাটে নেননি। পরিস্থিতি বুঝে বাকিগুলো হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম বছরজুড়ে বেশি ছিল। এতে খামারিদের লাভ হয়নি। পশু পালনে খরচ কমেনি।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা খামারি তৈয়ব আলী বলেন, প্রায় প্রতি বছরই রাজধানীর এই হাটে গরু নিয়ে আসেন তিনি। ঘরোয়া পরিবেশে নিজের একটি ছোট খামার রয়েছে। এ বছর মাঝারি আকারের ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে একটি গরু বিক্রি হয়েছে। আশা করছেন চাঁদ রাতের মধ্যে সবকটি গরু বিক্রি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন।ছঁৎনধহরএ বছর গরুর দাম বেশি— ক্রেতাদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম তো বেশি হবেই। সবকিছুর দামই তো বেশি। ১ কেজি ভুষির দাম ৬০-৭০ টাকা, এক মণ বিচুলির দাম ৩শ টাকা। যে ভুষি ১১০০-১২০০ টাকাই কিনতাম তা এখন ২২০০ টাকারও বেশি দিয়ে কিনতে হয়। ফলে দাম তো বাড়বেই। গত বছর যে গরু ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এ বছর তা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম।
নাটোর থেকে আসা ইউনুস মিয়া বলেন, আমি ১০টা গরু নিয়ে এসেছি। দুইদিন হলো হাটে এসেছি, কোনোটাই বিক্রি হয়নি। আজ (রোববার) বিকেল থেকে হয়তো জমবে। গরুর দামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাম হাটের উপর নির্ভর করে। একেক হাটে একেক দাম। তবে দামটা কিছুটা বেশি যাবে বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ সবকিছুর মতো গরুর খাবারের দামও অনেক বেড়েছে।
ঝিনাইদহ থেকে ১০টি গরু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন পান্না মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে গরু নিয়ে এসেছি। সকাল থেকে কয়েকজন ক্রেতা এসেছেন। অবশ্য দাম জিজ্ঞাসা করেই তারা চলে যাচ্ছেন। অনেকে শুধুই দেখতে আসেন। এ বছর গরুর দাম বেশি হওয়াতে অনেকেই বাজার যাচাই করে গরু কিনবেন।
পান্না বলেন, যার আয় যেমন তিনি তেমন গরু কিনবেন। কিন্তু এখনতো মানুষের আয় কম। তাই গরু কিনতেও হিমশিম খাবে অনেকে। যেহেতু এখনো বিক্রি শুরু হয়নি সেহেতু পরিস্থিতি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। পুরোদমে বিক্রি শুরু হলে কেমন গরুতে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি সেটা বোঝা যাবে।
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানা থেকে বড় দুইটি গরু বিক্রি করতে কমলাপুর হাটে এসেছেন ইমরান আলী। তিনি বলেন, আমি দুইটা বড় গরু এনেছি। এর মাঝে একটি সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে। অনেক ক্রেতা গরুগুলো দেখছে। তবে দরদাম করে চলে যাচ্ছে।
ইমরান বলেন, হলু নামের এই গরুটির ওজন হবে প্রায় ১২ মনের বেশি। গরুটিকে সাধারণত খুদ, ভুসি, গম ও ভাতের জাউ খাওয়ানো হয়েছে। গরুটির বয়স প্রায় সাড় ৩ বছর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মোশারফ মিয়া বলেন, মানুষজন এখনো গরু কিনছে না। সবাই দেখে আর চলে যায়। এত আগে অবশ্য গরু বিক্রিও হয় না। আমি ৫টি গাড়িতে ১২৫টি মাঝারি সাইজের গরু নিয়ে এসেছি। প্রতি বছর এই হাটেই আসি। আগে থেকেই দেখে আসছি মানুষের মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে।
এদিকে সিরাজগঞ্জে ভাই ভাই অ্যাগ্রোফার্ম থেকে ৩৫টি গরু এনেছেন মো. নুর ইসলাম। তিনি বলেন, আমি সবসময় বড় গরু নিয়ে আসি। আমার প্রতিটি গরু ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি। চার বছর ধরে এই হাটেই আসছি। প্রতি বছরই আমি বড় গরু নিয়ে আসি।
কোরবানির গরু কিনতে আসা ইয়াহিয়া ইসলাম বলেন, এ বছর পশুর দাম অনেক। নির্ধারিত বাজেট নিয়ে হাটে এলেও কেনা সম্ভব হচ্ছে না। গতবার যে গরু ১ লাখ টাকায় কিনেছি, এ বছর সেই ধরনের গরু প্রায় ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দাম চাচ্ছে। হাটে অনেকক্ষণ ঘুরলাম। দেখি সুবিধাজনক মনে হলে একটি গরু কিনে ফেলব।