স্পোর্টস ডেস্ক :
শারজাহে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিরিজ খেলছে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের ঐতিহাসিক সিরিজে প্রথম ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের ৬ উইকেটে নিয়ে দুর্দান্ত শুরু করে আফগানরা। দাপট ধরে রেখে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেও জিতে নিয়েছে তারা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) শারজাহতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে খেলতে নেমে ৩৪ ওভার ২ বলে ১৩৪ রানে থামে প্রোটিয়ারা। ১৭৭ রানের বিশাল এই জয়ের ফের ইতিহাস গড়েছে রশিদ খানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি তাদের প্রথম সিরিজ জয় তো বটেই, আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচটি দলের মধ্যে থাকা প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও এটি আফগানদের প্রথম সিরিজ জয়।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান তোলে ৫০ ওভারে ৩১১ রান। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১০ বলে ১০৫ রান করেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। সপ্তম সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নেন এই ওপেনার। ৮৪ ইনিংসে ছয় সেঞ্চুরিতে আগের রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ শাহজাদের। গুরবাজ তাকে ছাড়িয়ে গেলেন অর্ধেক (৪২) ইনিংস খেলেই।
তিনে নেমে ফিফটি করেন রেহমাত শাহ। পরে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় কেবল ১৩৪ রানেই।
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৪ রানের জয়কে পেছনে ফেলে আফগানদের সবচেয়ে বড় জয় এখন এটিই।
১৯ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করেন রাশিদ। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে জন্মদিনে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন আফগান জাদুকর।
ওয়ানডেতে তার পঞ্চম পাঁচ উইকেট এটি। তবে এবারেরটি এলো ছয় বছরের বিরতির পর। ২০১৭ সালে তিনি দুবার নিয়েছিলেন ম্যাচে পাঁচ উইকেট, ২০১৮ সালে দুবার। আলাদা করে বলতে হবে নানগেলিয়া খারোটের কথাও। ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনারের প্রাপ্তি ২৬ রানে চার উইকেট। তিন ওয়ানডে খেলেই দুবার চার উইকেট পেয়ে গেলেন প্রতিভাবান এই স্পিনার।
টস জিতে আফগানরা যখন ব্যাটিংয়ে নামে, শারজাহতে তাপমাত্র তখন ৩৮ ডিগ্রি। তবে অনুভূত হচ্ছিল ৪৮ ডিগ্রির মতো। সেই গরমে প্রোটিয়া বোলাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
উদ্বোধনী জুটিতে গুরবাজ ও রিয়াজ হাসান তোলেন ৮৮ রান। ৪৫ বলে ২৯ রান করে আউট হন রিয়াজ। দ্বিতীয় উইকেটে গুরবাজ ও রেহমাত যোগ করেন ১০১ রান।
দারুণ খেলতে থাকা গুরবাজ একটু থমকে যান শতরানের কাছে গিয়ে। নব্বইয়ে ১৭ বল আটকে থাকেন তিনি, ৯৯ রানে খেলেন সাত বল। সেই চাপ কাটিয়ে তিন অঙ্কে পা রাখেন ঠিকই। তবে এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি।
৬৩ বলে ফিফটি করা রেহমাত আউট হয়ে যান আর কোনো রান না করেই। তাকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত লেগ স্পিনার নাবাইয়োমজি পিটার। এরপর ওমারজাইয়ের ঝড়। ফিফটি করেন তিনি ৩২ বলে। আরেকপ্রান্তে মোহাম্মদ নাবি (১৯ বলে ১৩) ও রাশিদ খান (১২ বল ৬) দ্রুত রান তুলতে পারেননি। তবে ওমারজাইয়ের সৌজন্যে ঠিকই শেষ ১০ ওভারে ৯৩ রান তোলে আফগানিস্তান।
পাঁচটি চার ও ছয় ছক্কায় ৫০ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন ওমারজাই।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন টেম্বা বাভুমা ও টনি ডি জর্জি। ৭৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুজন। ওমারজাইয়ের বলে পুল করার চেষ্টায় বাভুমার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। আগের ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে না পারা প্রোটিয়া অধিনায়ক ফেরেন ৩৮ রান করে। ডি জর্জিকে ৩১ রানে বিদায় করে শিকার শুরু করেন রাশিদ। রিজা হেনড্রিকসকে ১৭ রানে বোল্ড করে প্রথম উইকেট পান খারোটে।
এরপর এই দুই স্পিনারের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং। চারে নেমে অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা এইডেন মার্করামকে (২১) বোল্ড করে রাশিদ পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।
অবিশ্বাস্যভাবে, দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ সাত ব্যাটসম্যানের কেউ পাঁচ রানের বেশি করতে পারেননি! ৬৩ রানের মধ্যে ১০ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের ম্যাচে তারা ৩৩.২ ওভার খেলে ১০৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। এবার তাদের ইনিংস শেষ ৩৪.২ ওভারে।
আফগানিস্তানের স্মরণীয় এই জয়ের দিনে বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছেন রশিদ খান। ওয়ানডেতে প্রথম বোলার হিসেবে নিজের জন্মদিনে ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি। দারুণ এই জয়ের পর তিনি বলেন, ‘হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট ছিল। কিন্তু মাঠে থাকতে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছি এবং দলকে জেতাতে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ছিল আমাদের জন্য। এ কারণে মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকতে হয়েছে।’
ম্যাচ শেষে আফগান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদির উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া, আমরা এখানে খুশি, দেশে গোটা জাতি খুশি। সবাইকে অভিনন্দন। আর প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা ম্রিয়মান কণ্ঠে বললেন, মোটেও ভালো খেলতে পারিনি আমরা। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে যতটা সম্ভব ইতিবাচক থাকতে হবে।
সিরিজের শেষ ম্যাচ রোববার।