যশোর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, একজন থ্রি-ফোর পাস করা নারীর কাছে আওয়ামী লীগ ফেল করেছে। আসলেই এই নির্বাচন সরকারের ভেলকিবাজি ছাড়া কিছুই নয়। ৫৪ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে সরকার নির্বাচনের টোপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
শনিবার (২৭ মে) বিকালে যশোর শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু ভোট হলে আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসবে। এটা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন নিয়ে তিনি সংবিধান দেখান। সংবিধান কি বড় পাথর যে সংবিধান সংশোধন করা যায় না। জনগণের জন্যই তো সংবিধান।
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, আমরা তো হাসিনার আমলে আছি। এই আমলে বাড়ি আর কারাগারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পুলিশ রাতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে, নির্বিঘ্নে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা সবসময় পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। মুক্ত পরিবেশে বাইরে থাকলেও আমরা চার দেওয়ালের মধ্যে কারাগারেই বন্দি আছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন এবং এখনো রাজত্ব করে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা এক সময় চেয়ে-চিন্তে খেত তারা এখন বড় বড় শিল্প কলকারখানার মালিক। কীভাবে তারা আজ এতোকিছুর মালিক হলো? পুনরায় বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে বিএনপি নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন করারও আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী আরো বলেন, দেশের জনগণ শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই জেলায় জেলায় আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগ শুনতে পায় না। কারণ তাদের কানে শীর্ষা ঢোকানো। আন্দোলনে প্রশাসনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলা করছে। তারা জানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারলে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে রয়েছে। তারা জুলুম করে শাসন করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ গুণ্ডা-সন্ত্রাসী দিয়ে এ দেশ শাসনের সঙ্গে সব অপকর্মও করে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী দল না হটানো পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবোই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অটুট থাকবো।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আলোর গতির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকার একের পর এক দেশ ভিজিট (সফর) করছে; দেশে ফিরে এসে উন্নয়নের গল্প শোনান। ৯০০ টাকায় গরুর মাংস খেতে হচ্ছে, চিনি তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বাংলাদেশে চিনি বিদেশিনী গানের মতো হয়ে গেছে। যেখানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না সেখানে এত উন্নয়নের গল্প কিসের। সরকার উন্নয়নের নামে দেশের মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।
এ সময় আরও যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল, জেলা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক, মোহাম্মদ মুসা, আব্দুস সালাম আজাদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ বক্তব্য দেন।