আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বাইরে একটি স্কুলবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ২৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষকও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাসটিতে মোট ৪৪ জন আরোহী ছিলেন। যার মধ্যে ৩৮ জন শিক্ষার্থী আর ছয়জন শিক্ষক।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দেশটির ওথাই থানি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের ওয়াত খাও ফরায়া শঙ্খরাম স্কুল থেকে শিশুদের নিয়ে তিনটি বাস ব্যাংককের উত্তরাঞ্চলে একটি বিজ্ঞান জাদুঘর দেখতে যাচ্ছিল। এই শিশুরা ছিল কিন্ডারগার্টেনের বয়সী থেকে ১৩-১৪ বছর বয়সী।
উদ্ধারকর্মীরা জানান, আজ স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংককের উত্তরাঞ্চলে এক শহরতলিতে মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় বাসটির একটি টায়ার ফেটে যায়। এরপর বাসটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলে এতে আগুন ধরে যায়।
দেশটির পরিবহনমন্ত্রী সুরিয়া জুয়াংরুংকিত বলেন, প্রাথমিক খবরে বলা হয়, বাসটিতে ৩৮ শিশু ও ৬ শিক্ষক ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, আগুনের হাত থেকে ২১ জন বেরিয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু ২৩ জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা মারা গেছে।
এ ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা হতাহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ওথাই থানি থেকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে আগুন লেগেছে বলে আমি জানতে পেরেছি…এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একজন মা হিসেবে আমি হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি।’
দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও স্কুলের ফেসবুক পেজে সফরকারী এই দলের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি থাইল্যান্ডের প্রাচীন রাজধানী আয়ুথায়াতে করা। সেখানে সবার পরনে ছিল কমলা রঙের উর্দি।
উদ্ধারকারী দলের প্রধান পিয়ালাক থিংকিয়েউ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার করা মরদেহগুলোর মধ্যে খুব অল্প বয়সের কয়েকজন রয়েছে। বাসের সামনের দিকে প্রথমে আগুন লাগে। শিশুরা আগুন থেকে বাঁচার জন্য বাসের পেছন দিকে চলে এসেছিল। কারণ, তাদের মরদেহগুলো সেখান থেকে উদ্ধার হয়। তবে মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করা কঠিন। আর যেসব শিশু আগুন থেকে বাঁচতে পেরেছে, তাদের মুখমণ্ডল, মুখ ও চোখ পুড়ে গেছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মীরা বলেন, বাসের আগুন নেভানো গেলেও মরদেহ উদ্ধারের জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ, বাসটি এতটায় উত্তপ্ত ছিল যে ভেতরে ঢোকা যাচ্ছিল না। তাই বাসটিকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য সময় দিতে হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, পরিবহনমন্ত্রী বলেন, বাসটি চলছিল সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি), যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয় অবশ্যই একটি পদক্ষেপ নেবে… সম্ভব হলে যাত্রীবাহী বাসগুলোয় এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি (সিএনজি) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।’
বিশ্বে যেসব দেশে সড়কের নিরাপত্তা সবচেয়ে বাজে, সেসব দেশের মধ্যে থাইল্যান্ড একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। অর্থাৎ প্রতিদিনের হিসাবে এ সংখ্যা ৫০ জনের বেশি।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদেরকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেন, একজন মা হিসেবে আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। নিহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় ও ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেবে সরকার।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পিয়ালাক থিঙ্কিয়ু বলেন, নিহতদের দেহ এত বেশি পুড়ে গেছে যে তাদের শনাক্ত করা কঠিন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বাসের সামনের দিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।