নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। প্রচণ্ড গরমে অসহনীয় যানজট মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। যানজট প্রধান সড়ক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অলিগলিতেও। ফলে তীব্র গরমে ও অসহনীয় যানজট জনজীবনের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
বুধবার (১০ মে) তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় যানজটে এ চিত্র দেখাগেছে রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, গুলিস্থান, পল্টন, বিজয়নগর, মৎস্য ভবন, শাহাবাগ, সাইন্সল্যাব মোড়, বাংলামটর, পান্থপথ, ফার্মগেট এবং বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন সড়কে।
সকাল সাড়ে নয়টায় মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। একই সময় রাজারবাগ মোড়, ফকিরাপুল, মতিঝিল এবং কমলাপুরের মতন এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা গেছে। মূলত অফিস সময় হওয়ায় তখন যাত্রী চাপটা কিছুটা বেশি ছিল। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ সামলাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিকদেরও অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। পাশাপাশি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু স্থানে থেমে থেমে যানজটের তীব্রতা বাড়তে দেখা গেছে। কিছু কিছু স্থানে জ্যাম ফ্লাইওভার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তা মিঠু রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে গুলশানের অফিসে সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করলেও মনিপুরিপাড়া, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীরকে টু বনানী এলাকায় তীব্র যানজটের কবলে পড়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বিজয় স্মরণী ফ্লাইওভার ব্যবহার করে গেলেও মহাখালী এবং তেজগাঁও লিংক রোডে যানজটে পড়তে হচ্ছে।
দিলকুশা শিল্প ভবন এর কর্মকর্তা ফারুক জানান, অফিসে যাওয়ার পথে জিগাতলা, ধানমন্ডি ২ নাম্বার রোড, সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, পল্টন সব রাস্তাতেই দীর্ঘসময় যানজটে বসে থাকতে হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি সময়মতো অফিসে যেতে পারেননি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্তী সরকার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ধানমন্ডি থেকে বনানীর অফিসে পোঁছতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। যানবাহন ও যাত্রী বেড়ে যাওয়ার সড়কের চাপ বেড়েছে। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগেই থাকে।বিজয় স্মরণী থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথেও যাত্রীদের যানজটে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে। এসব জায়গা দিয়ে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করে। তারপরে রোকেয়া সরণী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ, প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘসময় তীব্র যানজট দেখা যায়। মিরপুর থেকে মতিঝিল পোঁছতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। অফিসে আসা যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপরেও যানজটের সৃষ্টি হয়। উবার চালক রহমত বলেন, গত ৪/৫ দিন ধরে রাজধানী সব সড়কে যানজট বেড়েছে। যানজটের কারণে ট্রিপ কমে গেছে, দৈনিক ইনকাম কমেছে।
শিকড় পরিবহনের বাসের যাত্রী আকাশ বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে তাঁর মতিঝিল পৌঁছানোর কথা। কিন্তু যানজটের যা পরিস্থিতি, তাতে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যানজটে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করে রাজনৈতিক দল, আর ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বেসরকারি চাকরিজীবী ওমর ফারুক গাজীপুর থেকে সকাল ৯ টায় আজমেরী গ্লোরি বাসে করে পল্টন আসেন অফিস করার জন্য। তার প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে অফিস পৌঁছাতে। গাজীপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত তেমন একটা জ্যাম ছাড়াই আসতে পারলেও মহাখালী থেকে পল্টন পর্যন্ত আসতে তীব্র যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে। বিশেষ করে মহাখালী থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত তীব্র জ্যাম ছিল।
তিনি বলেন, ভাই এত গরম যে রোদের নিচে দাঁড়ানো যায় না। ঢাকা শহরে গাছও নাই যে একটু ছায়ার নিচে দাঁড়াব। তার ওপর রাস্তায় চললে মনে হয় কেউ যেন গরম বাতাস করছে। আর রাস্তায় বাস কিছুক্ষণ পরপর যাত্রী ওঠানামা করায় পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে।
এদিন অসহনীয় গরমে গণপরিবহনগুলোয় দেখা গেছে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা। ধারণ ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে বাসগুলো। পাশাপাশি সড়কের যানবাহনের নানা অব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে অসহনীয় গরম অসুস্থ করে দিচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
তীব্র গরমে খিলগাঁও রেলগেট থেকে ফকিরাপুল রিকশা চালিয়ে এসেছেন মো. শাহাদাত। তীব্র গরমের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে রিকশা চালানো বন্ধ রেখেছেন কিছু সময়ের জন্য। তিনি বলেন, যে গরম পড়ছে তাতে একটানা রিকশা চালানো কষ্টকর। তারপর রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। যে কারণে একটা ক্ষেপ মারতেই অনেক সময় লেগে যায়। দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা চালালেও বাজারের খরচের টাকা হয় না। তার ওপর রিকশার জমা দিতে হয় দেড়শ টাকা করে।
রাজারবাগ মোড়ে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, অফিসের সময়, পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা থাকার কারণে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাজারবাগ চার রাস্তার মোড়ে প্রচণ্ড যানজট ছিল। এই গরমে ডিউটি করতে কষ্ট হয়। তার ওপর গাড়ির চাপও থাকে প্রচুর।
বিভিন্ন সময় যানজট থেকে নিস্তার মিললেও গরম থেকে এত সহজে মিলছে না। রাস্তায় বেরোলেই বোঝা যায় গরমের তীব্রতা। একে তো প্রখর রোদ, তার ওপর রাস্তা থেকে বের হওয়া তাপে সড়কের সবাই চরম অতিষ্ঠ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে তাপদাহ আরও বাড়বে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।
এঅবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত নানা রোগ প্রতিরোধে প্রচুর পরিমাণে পানি ও খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।