Dhaka মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিন বছরেও শেষ হয়নি ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু নির্মাণ

ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি : 

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ফয়রা বোনমাইল খালের ওপর প্রায় ৪ কোটি টাকার সেতু নির্মাণ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। তিন বছর আগে কাজ শুরু হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে খালের দুই পাড়ের পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

কাজ শুরুর পর তিন বছর পার হলেও অগ্রগতি মাত্র ১০-১৫ শতাংশের মতো। ফলে কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ওই এলাকার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ-কাঠের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

২০২২ সালের ৭ জুলাই ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০৯ টাকার ব্যয়ে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লিগের অর্থ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম (মনির হুজুর) এর মালিকানাধীন মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২২ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলমান ২০২৫ সালে শেষে নির্মাণকাজের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নাই।

নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই ধীরগতিতে কাজ এগোতে থাকে বলে জানায় এলাকাবাসী। পরে প্রকল্প এলাকার শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন অংশে লোহা ও রডে মরিচা ধরে গেছে। দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে প্রকল্প এলাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থায় ঢালাই সম্পন্ন হলে সেতুর স্থায়িত্ব ও নির্মাণমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানের মালিক জেলা আ’লীগের নেতা এবং আ’লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর আস্থাভাজন হওয়ায় নির্মাণকাজের তদারকিতে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন বা অগ্রগতির কোনো রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি। ফলে কাজের মান, গতি এবং বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে ওই এলাকার সচেতন মহলে।

ঝালকাঠিসহ নলছিটির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যে আমির হোসেন আমু’র ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম (মনির হুজুর)। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিদেশে চলে যান। তার অধীনে থাকা ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু প্রকল্পও তখন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে গোপনে একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে সদ্য বিদায়ী উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিদেশ থেকে নিয়মিত তদারকি ও নজরদারি চালাতেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে । এভাবে অনুমোদন ছাড়া গোপনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত চলাচল রেকর্ড করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের শামিল এবং আইনত অপরাধ বলে দাবী স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খালের দুই পাড়ে অবস্থিত ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সাঁকো ভেসে গেলে একাধিক দিন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না, রোগী পরিবহনে বাধা ও বাজারে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।

এই সেতুটি নির্মিত হলে ফয়রা-বোনমাইল হয়ে নলছিটি উপজেলঅ সদর ও ঝালকাঠি জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এতে স্থানীয় কৃষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতেন। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা, তদারকির অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু প্রকল্পটি প্রশাসনিক অদক্ষতা ও সরকারি নজরদারির অভাবের স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয়ে শুরু হওয়া এই সেতু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

ঠিকাদার বিদেশে পলাতক থাকায় তার ম্যানেজার জানান, আমি এতদিন নলছিটির কাজ দেখাশোনা করিনি সোহেল নামে একজন দেখাশুনা করতো সেও পলাতক! দ্রুত কাজ শুরু করা হবে হবে বলেও জানান। গোপন ক্যামেরা কোথা থেকে মনিটরিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা পিডি অফিস ও বিদেশে বসে ঠিকাদার মনিটরিং করতে পারেন এর বেশি কিছু জানিনা।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা অফিসিয়ালি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

গোপন ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্যামেরা আমাদের এখান থেকে লাগানো হইছে নাকি তারা লাগাইছে সে বিষয়টি আমার জানা নাই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

তিন বছরেও শেষ হয়নি ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু নির্মাণ

প্রকাশের সময় : ০১:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি : 

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ফয়রা বোনমাইল খালের ওপর প্রায় ৪ কোটি টাকার সেতু নির্মাণ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। তিন বছর আগে কাজ শুরু হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে খালের দুই পাড়ের পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

কাজ শুরুর পর তিন বছর পার হলেও অগ্রগতি মাত্র ১০-১৫ শতাংশের মতো। ফলে কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ওই এলাকার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ-কাঠের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

২০২২ সালের ৭ জুলাই ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০৯ টাকার ব্যয়ে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লিগের অর্থ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম (মনির হুজুর) এর মালিকানাধীন মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২২ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলমান ২০২৫ সালে শেষে নির্মাণকাজের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নাই।

নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই ধীরগতিতে কাজ এগোতে থাকে বলে জানায় এলাকাবাসী। পরে প্রকল্প এলাকার শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন অংশে লোহা ও রডে মরিচা ধরে গেছে। দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে প্রকল্প এলাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থায় ঢালাই সম্পন্ন হলে সেতুর স্থায়িত্ব ও নির্মাণমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানের মালিক জেলা আ’লীগের নেতা এবং আ’লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর আস্থাভাজন হওয়ায় নির্মাণকাজের তদারকিতে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন বা অগ্রগতির কোনো রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি। ফলে কাজের মান, গতি এবং বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে ওই এলাকার সচেতন মহলে।

ঝালকাঠিসহ নলছিটির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যে আমির হোসেন আমু’র ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম (মনির হুজুর)। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিদেশে চলে যান। তার অধীনে থাকা ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু প্রকল্পও তখন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে গোপনে একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে সদ্য বিদায়ী উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিদেশ থেকে নিয়মিত তদারকি ও নজরদারি চালাতেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে । এভাবে অনুমোদন ছাড়া গোপনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত চলাচল রেকর্ড করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের শামিল এবং আইনত অপরাধ বলে দাবী স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খালের দুই পাড়ে অবস্থিত ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সাঁকো ভেসে গেলে একাধিক দিন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না, রোগী পরিবহনে বাধা ও বাজারে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।

এই সেতুটি নির্মিত হলে ফয়রা-বোনমাইল হয়ে নলছিটি উপজেলঅ সদর ও ঝালকাঠি জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এতে স্থানীয় কৃষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতেন। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা, তদারকির অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে ফয়রা বোনমাইল খালের সেতু প্রকল্পটি প্রশাসনিক অদক্ষতা ও সরকারি নজরদারির অভাবের স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয়ে শুরু হওয়া এই সেতু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

ঠিকাদার বিদেশে পলাতক থাকায় তার ম্যানেজার জানান, আমি এতদিন নলছিটির কাজ দেখাশোনা করিনি সোহেল নামে একজন দেখাশুনা করতো সেও পলাতক! দ্রুত কাজ শুরু করা হবে হবে বলেও জানান। গোপন ক্যামেরা কোথা থেকে মনিটরিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা পিডি অফিস ও বিদেশে বসে ঠিকাদার মনিটরিং করতে পারেন এর বেশি কিছু জানিনা।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা অফিসিয়ালি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

গোপন ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্যামেরা আমাদের এখান থেকে লাগানো হইছে নাকি তারা লাগাইছে সে বিষয়টি আমার জানা নাই।