নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা দেয়া হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে এই জাতির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দফাগুলো রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ্যযোগ্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর জাতীয় কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শুধু রাজনৈতিক মত থাকার কারণে অনেক চিকিৎসককে জেলে দেয়া হয়েছিল। আমাদের দেশে যে পারস্পরিক হিংসা-জিঘাংসার মাধ্যমে আমরা যে কালচার তৈরি করেছি তা আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, দেশে শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা নয়, ভোটের অধিকার নয়, স্বাস্থ্য আর ভাতসহ সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের চিকিৎসকরা উপমহাদেশে সেরা, সমস্যা সিস্টেমে। পারস্পরিক হিসেবের যে সংস্কৃতি, তা আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শুধু ভোটের অধিকারই নয়, স্বাস্থ্যসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাও আমাদের কর্তব্য।
মির্জা ফখরুল ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের সময় ডাক্তারদের অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবাদানে কাজ করেছেন।
ওষুধ শিল্পে ভয়াবহ ক্রাইসিস চলছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন সব নীতি করছে, যাতে ওষুধ শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়র উপক্রম দেখা দিয়েছে।
যারা ওষুধ তৈরি করে তাদের দেয়া অভিযোগের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য শিল্পের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশে ওষুধ রফতানি করি। তবে বর্তমানে যারা ওষুধ বানাচ্ছেন তারা বলছেন, বর্তমানে এই খাতের এতই ভয়াবহ অবস্থা যে, ওষুধ তৈরির ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপদেষ্টা এমন কিছু নিয়মনীতি করছেন যার কারণে এই শিল্প ধ্বংসের পথে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওষুধ তৈরির কারখানাগুলো। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের বেশিরভাগ নীতিই আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
নিজের বাবার চিকিৎসার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তখন একজন চিকিৎসককে বলেছিলাম আমাদের ভারতে আসতে হয় কেন? আপনাদের চিকিৎসকের মান কি আমাদের চেয়ে বেশি? উত্তরে তিনি বলছিলেন— কোনোমতেই না, আপনাদের চিকিৎসকের মান আমাদের সমান তো বটেই; কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে বেশি। সমস্যাটা সিস্টেমে, যার ফলে আপনাদের চিকিৎসকরা নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না।
ওষুধনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা ওষুধ তৈরি করেন ম্যানুফ্যাকচারারস তারা দুদিন আগে আমার কাছে এসেছিল। তারা বলেছে, সিরিয়াস ক্রাইসিস যে বর্তমান সরকারের যিনি সহকারী উপদেষ্টা আছেন চিকিৎসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, তিনি এমন কতগুলো ব্যবস্থা-আইন দিচ্ছেন যাতে করে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এই যে বিষয়গুলো এগুলো কিন্তু আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে আজকে। যেখানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল। বাইরে রপ্তানি করছিল। এখন তারা বলছে যে আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে। অর্থাৎ এই সরকারের নীতিগুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে যে ৩১ দফা দিয়েছেন, জাতির সবচাইতে প্রয়োজনীয় দফাগুলো দিয়েছেন, যেটাকে ম্যাগনা কার্টা (ঐতিহাসিক দলিল) বলি আমরা। সেখানে কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তিনি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার করেছেন।
জুলাই আন্দোলনকালে অনেক চিকিৎসককে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা ওই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা করেছেন, এটা জাতি কোনোদিন ভুলবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অনুরোধ রাখতে চাই যারা (জুলাই আন্দোলনে) আহত আছে তাদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা যেন এই সরকার গ্রহণ করে। এটা আমাদের অত্যন্ত বড় একটা চাওয়া এই দেশের মানুষের।
ড্যাবের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আমি আশা করি এরপরে আপনাদের সংগঠনকে আপনারাই (ড্যাব) পরিচালনা করবেন। নিজেরাই নির্বাচন করবেন। হয়তো এটা আপনাদের অনেকের পছন্দ হবে না। আরেকটি কথা বলতে চাই, ড্যাবকে অন্যান্য সাধারণ সংগঠনের সঙ্গে এক করে ফেলবেন না। একদিকে আপনারা মানুষের সেবা দিচ্ছেন অন্যদিকে এই দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবেন, স্বাস্থ্যনীতি তৈরি করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা করবেন।
কারাগারে নিজের অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি যখন কাশিমপুর জেল থেকে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ি, যখন পিজিতে রেফার করল জেল কর্তৃপক্ষ। আমি আসলাম হুইলচেয়ারে তো বটেই, অত্যন্ত অসুস্থ ছিলাম। আমাদের চিকিৎসকরা যারা তখন পিজিতে ছিলেন তারা দেখেছেন যে আমি উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না, বসেছিলাম। আমাকে সারাদিন ওই হুইলচেয়ারে ডিরেক্টরের রুমের সামনে বসিয়ে রাখলো। তাদের ন্যূনতম সেই সৌজন্যটুকু হয়নি যে আমাকে ভেতরে গিয়ে বসিয়ে চিকিৎসা করাবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় আমার তখন ক্যারোটিড আর্টারি ব্লক হয়ে গিয়েছিল। সেই আর্টারি চিকিৎসার জন্য আমাকে পিজির চিকিৎসক রেফার করলেন বিদেশে পাঠানো দরকার। সরকার অনুমতি দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ৩ বার রিট করে মেডিকেল বোর্ড তৈরি করে বাইরে যেতে হয়েছে। এটা কেন? আমরা পারস্পরিক হিংসা জিঘাংসার একটা কালচার তৈরি করেছি, এটা আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।