নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যদি তরুণ প্রজন্মের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাদের আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তেমন পরিণতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার(১৪ জানুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি পুনর্বাসিত হবে কি না, তা এখন প্রাসঙ্গিক আলাপ নয় বরং আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচার না হওয়ার পর্যন্ত যারা তাদের পুনর্বাসিত হওয়ার কথা বলবে, যারা বলতে চাইবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, আমরা ধরে নেব তারা গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগে দেশে যে জাহিলিয়াতের রাজনীতি কায়েম করেছে সেখানে তাদেরও ইন্ধন ছিল।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। যেসব টকশোজীবী, মিডিয়াপাড়া, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী লীগের মানবাধিকারের জন্য সরব হয়েছেন, তারা ফ্যাসিবাদের তেল, নুন, ঘি খেয়ে এতদিন ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। ফ্যাসিবাদের পক্ষে যেসব কলমগুলো লিখবে আমরা সেই কলমগুলো ভেঙে দেব, যেসব মিডিয়া কথা বলবে সেসব মিডিয়ার বিপক্ষে আমাদের অবস্থান থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা তা ৫ আগস্ট চূড়ান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, একদিকে জুলাই আগস্ট বিপ্লবীরা বিপ্লবের লিখিত দালিলিক স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রতন্ত্র ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসিত করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত এখন নতুন করে নেয়ার কিছুই নেই।
এ ছাত্রনেতা বলেন, বিপ্লবের দালিলিক স্বীকৃতির জন্য আজকে বিপ্লবীদের রাস্তায় রাস্তায় পথসভা করতে হচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পরিণতি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের শাসন নিষিদ্ধ হবে কিনা সেটি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল ৫ আগস্ট। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজকে বিপ্লবীরা এ বিপ্লবের লিখিত দালিলিক স্বীকৃতির জন্য যেখানে অপেক্ষা করছে, অন্যদিকে আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র এ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্নভাবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তরুণদের মাইসান করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে অতীতে যারা রাজনীতি করেছে তাদের অভিজ্ঞতা ও তরুণ প্রজন্মের ভয়হীন মনোভাব এ দুটোর সংমিশ্রণে। কিন্তু এখানে যদি তরুণদের মাইনাস করার কোনো ধরনের চিন্তা থাকে, গণঅভ্যুত্থানের একক এজেন্ডার প্রবণতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তরুণদের অর্জনের কথা উল্লেখ হাসনাত বলেন, আমাদেরকে রক্ত দিতে হয়েছে, ভয়কে জয় করতে হয়েছে। কারণ আমাদের যে দুর্বৃত্তায়ণের রাজনীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতির সংস্কৃতি, তা আমাদের তরুণদেরকে আশাহত করেছে। আমরা জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারিনি। আমরা রাষ্ট্রের মধ্যে নাগরিক হয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের অতীতের যে রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে সেটা আমাদের নাগরিক অধিকার থেকে ইতিহাসের স্তরে স্তরে বঞ্চিত করেছে। এ বঞ্চিতের ক্ষোভ থেকে ক্ষোভের আগুন দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়েছি।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি হয়ে যেসব উপদেষ্টা সরকারে গিয়েছে, আমরা আপনাদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনারা যদি কোনো কারণে মনে করেন প্রোক্লেমেশন দিতে এবং জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে আপনাদের রাষ্ট্রীয় কোনো বাধা রয়েছে সেটি আপনারা জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। আমরা যেভাবে আগস্ট মাসে রাস্তায় নেমে এসেছিলাম ঠিক একইভাবে আবার রাস্তায় নেমে আসব। এই প্রোক্লেমেশন দিতে আপনাদের বাধা কোথায়? কারা বাধা দিচ্ছে সেগুলো আপনারা জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। যদি আপনারা ব্যর্থ হন তাহলে উপদেষ্টার কাতার থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসুন। আমরা একসঙ্গে মিলে যেভাবে হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, প্রয়োজন হলে সেভাবে আবার আমাদের প্রোক্লেমেশন আদায় করে নেব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমাদের আল্টিমেটাম ছিল। আজকের গণসংযোগের পর আমরা সরকারকে বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি করবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে—এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখিনি।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে মিশনপাড়া পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করে গণসংযোগ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে সেখান থেকে গাড়িযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুলাহ আল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, মুখপাত্র আরেফীন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী, তামিম আহমেদ।