নিজস্ব প্রতিবেদক :
চূড়ান্ত আন্দোলনে থাকা অবস্থায়ই বিএনপিকে নতুন পরামর্শ দিলেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তার মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মনোযোগ না দিয়ে বিকল্প উপায়ে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীতে নিজ বাসায় বনানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাফিজ উদ্দিন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মধ্যস্থতায় দেশের আগামী নির্বাচন হলে সেটা ভালো হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংলাপ, সমঝোতা দরকার।
তিনি বলেন, তিনি বলেন, রাজনীতির ওপর আগ্রহ হারিয়েছি। বিএনপির রাজনীতি থেকেও দূরে আছি। শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নই। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য দৃষ্টিতে এসেছে। আমি কোনো দল খুলছি না। বেগম জিয়া আমার নেত্রী, তিনি বাইরে থাকতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল থেকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তবে শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই থাকব।
মেজর হাফিজ বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই। খুব শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। তবে বিএনপি যদি এবার নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে বিএনপি থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি।
খুব শিগগির রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন জানিয়ে হাফিজ বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না, বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছি, আবারো যাবো। খুব শিগগির আমি আমার এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবো। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির কর্মী, সমর্থক হিসেবে থাকবো। গত ৩১ বছর এই দলে আছি। খন্দকার মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া স্থায়ী কমিটিতে যারা আছে সবাই আমার জুনিয়র। রাজনীতিতে আমার খুব একটা এখন গুরুত্ব নেই বিএনপিতেও গুরুত্ব নেই। তিন বছর আগে দল শোকজ করেছিল তার ব্যাখ্যার জবাব আজও পায়নি।
নিজেকে দেওয়া বিএনপির কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় ১১টি অভিযোগে। বলা হয়, দলের নির্দেশ ছাড়া সরকারবিরোধী মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শওকত মাহমুদের সঙ্গে কোনো মিছিলে যোগ দেইনি। তার সাথে কোনো যোগাযোগ আগেও ছিল না, এখনও নেই। তারপরও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ।
তিনি আরও বলেন, চিঠির জবাব দেওয়ার পর আমি জানি না, সে চিঠি গ্রহণ হয়েছে কিনা, না বাতিল হয়েছে। এমন আচরণ আমি ডিজার্ভ করি না। জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় সরকারের টালমাটাল অবস্থা ছিল। বুঝতে হবে কোন সময় সরকার এমন ধরনের অফার করে, এখন তো করছে না।
দলে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দলের হাইকমান্ডের সামনে সঠিক কথা বলার কোনো লোক নেই। সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলে। একমাত্র সাইফুর রহমানকে দেখেছিলাম তিনি ম্যাডামের সামনে সত্যি কথা বলতেন। দলের সংস্কার করার জন্য তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে আমি গুরুত্বহীন। খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। শারীরিক অবস্থার কারণেই রাজনীতি থেকে আগ্রহ হারিয়েছি, আমি যে নতুন দল করতে যাচ্ছি সেই তথ্য সঠিক নয়।
মেজর হাফিজ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে দলটি ক্ষমতার বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
এ সময় অর্থপাচার প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও অনুরোধ জানান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
বিএনপি ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন সম্পর্কে মুখ খুলেছেন তিনি। অসুস্থার কারণে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় আছেন এমনটা জানিয়ে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন করলে দলের সঙ্গেই নির্বাচন করব। বিএনপির সদস্য হিসেবেই রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চাই।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্যে তিনি বীরবিক্রম খেতাব পান। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুইবার জাতীয় পার্টি, একবার স্বতন্ত্র এবং তিনবার বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি। সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে কারাগারও যেতে হয়েছে তাকে।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ২০২০ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দল ভেঙে নতুন বিএনপি গড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।