নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচনী আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে এই আসনের ধানমন্ডি থানার নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার হওয়ার আবেদন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক।
সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বেলা ৩টায় ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কার্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। তিনি ধানমন্ডি থানার ভোটার হবেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে এই আসনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জসীম উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কয়েকদিন আগে জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই উপদেষ্টার পদ তিনি থেকে পদত্যাগ করবেন। তবে, উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের পর এনসিপিতে যোগ দেবেন, এমনটি ধরে নেওয়া উচিত নয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, আসিফ মাহমুদ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। আসিফের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। এই উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ আসন। তবে তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন।
আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-কলাবাগান-নিউমার্কেট-হাজারীবাগ) আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এনসিপির হয়ে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রেও এনসিপির সমর্থন থাকবে তার প্রতি। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ওই আসনে প্রার্থী দেবে না এনসিপি।
কয়েকদিন আগে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আছেন, এমন যে কারও রাজনীতি কিংবা নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলে তাদের সবার পদত্যাগ করা উচিত। যেন কোনোভাবেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। নির্বাচনে নিরপেক্ষতার স্বার্থে এমনটি করা উচিত।
আসিফ মাহমুদ বলেন, যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা বারবারই বলছেন যে, আমরা ইতিহাসের একটা শ্রেষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিতে চাই, আর সেটা আমরাও চাই। যেহেতু আমরা এই সরকারের অংশ। এই ঐতিহাসিক দায় তো আমাদের ওপরে থাকবে, যদি নির্বাচনটা সুষ্ঠু না হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সরকারে তো আরও অনেকে আছেন, যাদের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিচয় আছে। এখনো হয়তো আছে এবং সামনেও রাজনীতি করবেন কিংবা নির্বাচনও করবেন। সরকারের বিভিন্ন জায়গায় হয়তো আরও অনেকে এ রকম আছেন। আমি মনে করি যে, সবারই তপশিলের আগে পদত্যাগ করা উচিত—একটা স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু, কোনো প্রকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের জন্য।’
এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে যুক্ত। রাজনীতিতে আছে—এমন কারও নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা উচিত নয়। তাই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাব।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আন্দোলনের সময় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। অভ্যুত্থানের সর্বশেষ কর্মসূচি ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্টে আনার বিষয়টি তিনিই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। সব মিলিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা হিসেবে ব্যাপক আলোচিত হন আসিফ মাহমুদ। অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান কুমিল্লার ছেলে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
আসিফ মাহমুদ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেছিলেন। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতিতে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ। ক্যাম্পাসে নির্যাতনবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। পরে ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের একটি অংশের উদ্যোগে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে যে নতুন ছাত্রসংগঠন গঠিত হয়, আসিফ মাহমুদ ছিলেন এর অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের অধিকাংশই ছিলেন এই ছাত্রশক্তির নেতা।
অন্তর্বর্তী সরকারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন আসিফ মাহমুদ। সরকারি দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















