নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় ইশরাক হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর ইশরাক হোসেন বলেন, আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। এটাই আজকের বড় বিষয়। মেয়র হিসেবে শপথ নেব কিনা সেটি আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দল সিদ্ধান্ত নিবে। কারণ আমি দলের প্রার্থী ছিলাম। দল যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবে কাজ করে যাব।
ইশরাক আরও বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে ধানের শিষে ২০২০ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলাম। পরে সারা জাতি দেখেছেন দিন দুপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছে। নির্বাচনের প্রথম থেকেই আমাদের আশ্বস্ত করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়। আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, মাইক ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমার উপর মিছিলে হামলাও করা হয়। বহু নেতাকর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। আমি তখন থেকেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে আসছি।
তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনের দিন সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলে নাই। পরে দুই ঘণ্টা ভোট চলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময়েও আমি যে ভোট পেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি ভোট দেখানোর জন্য দিনব্যাপী তারা কারচুপি করে। এসব বিষয় নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছিলাম। সকল নথি পত্র দাখিল করেছি। আদালত আজ রায় ঘোষণা করলেন।
এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে মন্তব্য করে ইশরাক বলেন, আমি বলতে চাই এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সামনে ন্যায় বিচারের ধারা আবার ফিরে আসুক। সর্বস্তরের সব মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার আমাদের মূল লক্ষ্য।
নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশকে ধ্বংস করার যে চক্রান্ত হয়েছিল, ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম হয়েছিল, সাংবিধানিক পদে যারা ছিল তার এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ সাংবিধানিকভাবে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হুদা কমিশন, রকিব কমিশন ও সর্বশেষ আউয়াল কমিশন সেটা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আদেশে নৌকা প্রতীক নিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র হিসেবে সরকারের জারি করা গেজেট বাতিল করা হয়। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন।
অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসি নির্বাচন ও ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আটজনকে বিবাদী করা হয়।
ইশরাকের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে আমরা নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলাম। তাঁকে (ইশরাক) মেয়র হিসেব ঘোষণার আবেদন করেছিলাম। আদালত আজ আমমাদের পক্ষে রায় দিলেন। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম উত্তরে ও ফজলে নূর তাপস দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করেন। তাঁরা শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতবছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তাঁদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ১ অক্টোবর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ঘোষণা করেন। চসিক নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ফলাফল বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলেন বিএনপির এ নেতা।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। যদিও ওই সময় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।