নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকায় শিগগিরই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টার বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কার্যালয় হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটা কার্যালয় চালু হবে। অফিসটা চালু হলে যে সুবিধাটা আমাদের সবচেয়ে বেশি, সেটা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ক্ষেত্রগুলো, ওরা সরাসরি তদন্ত করতে পারবে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার টুর্ক।
প্রথম দিনে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আয়োজনে যোগ দেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তার।
বিকালে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে সপ্তদশ দেশ হিসেবে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের এমন কার্যালয় হতে যাচ্ছে।
বর্তমানে ১৬টি দেশে মানবাধিকার পরিষদের এ ধরনের কার্যালয় রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন ও সিরিয়া।
এ ধরনের কার্যালয়ের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, কান্ট্রি অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসারে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দেনদরবার করে থাকে জাতিসংঘ।
এ ম্যান্ডেটের মধ্যে সাধারণত মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, সুরক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার, নাগরিক সমাজ, ভিকটিম এবং অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও কারিগরি সহায়তা থাকার কথা বলছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।
ঢাকায় মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ।
তিনি বলেন, ওরা তদন্ত করলে, আমাদের যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসেন, চলে যান, তারা যদি নিজেদের অপরাধের তদন্ত করে, সে তদন্ত তো হয় না। আমরা নাগরিক সমাজ থেকে যখন তদন্ত করি অথবা সত্যটা যখন তুলে ধরি, তখন আমাদের ওপর নির্যাতন আসে এবং আমার নানা চাপের ভেতরে থাকি। এবং সেই কথাগুলো ব্যক্ত করা যায় না, রিপোর্টও করা যায় না।
শিগগির এই কার্যালয় চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শারমীন মুরশিদ বলেন, মানবাধিকারের জাতিসংঘ কার্যালয় থাকা মানে, এখানে মানবাধিকারের জায়গা থেকে একটা বড় শক্তি আমাদের বাড়ল।
বৈঠকে আলোচনার অন্যান্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বলেন, ওরা যেটা জানতে চাইল আামাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে, সেটা হচ্ছে যে, আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী দেখছি এবং আমরা কীভাবে বর্তমান অবস্থাটা দেখছি। এবং আমরা প্রত্যেকে যার যার ক্ষেত্র থেকে আমরা বলেছি, চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং কোথায় তারা আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।
শারমিন মুরশিদ বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের দফতর খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় বিষয়টি ইতিবাচক দেখছে সরকার।
জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে প্রাথমিক তদন্ত করেছে তারা, ঢাকায় দফতর খোলার বিষয়ে সে প্রতিবেদনের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
এর আগে, ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত অন্তর্র্বতী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। তারা হলেন: শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।