নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারতে জি-২০ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দীর্ঘ তিন দশক পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেন।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ১০ মিনিটে একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এসময় বিমানবন্দরে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাখোঁকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
বিমানবন্দরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার এবং লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গার্ড পরিদর্শন করেন।
ইমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে ১৯ ঘণ্টা অবস্থান করবেন। ৩৩ বছর পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তখনকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশে এসেছিলেন।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। এরপরই রাত ১০টার দিকে তিনি ধানমন্ডি লেক ও ব্রিজ ঘুরে দেখবেন। এরপর তিনি যাবেন বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির ধারক জলের গান ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দের ওয়ার্কশপে। সেখানে শুনবেন রাহুল আনন্দের গান। পরে তিনি হোটেলে ফিরে যাবেন।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এরপর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই শেষে উভয় নেতা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে তার সঙ্গে থাকছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী কেথেরিন কলোন্না। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকারের আশা, ম্যাক্রোঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হবে ও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সময় কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হবে। সবশেষে দুদেশের একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হতে পারে। এরপর আধাঘণ্টা একান্তে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। সফর শেষে দুপুর ২টা ৩০মিনিটে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।
বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনাও উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিত্রান্দের বাংলাদেশ সফরের পর ম্যাক্রোঁই প্রথম নেতা যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। মিত্রান্দের ওই সফরের পর থেকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে ও ফ্রান্স রপ্তানির ক্ষেত্রে পঞ্চম দেশ। ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশের প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ ও পানিসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত।