নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু’ ঢাকায় সফর করায় আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে চাঙা বিএনপি। আরে বেকুবের দল, লু আসছেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে। বিএনপির স্বপ্ন পূরণের জন্য আমেরিকাও আর আসবে না, কেউ আসবে না।
শনিবার (১১ মে) বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গয়েশ্বর রায় কোথায় পালিয়ে ছিলেন, ভারতে? মাথায় তো একটা গান্ধী টুপি দিয়েছেন। তিনি আমাদের বলেন ভারতের দালাল। এই অপবাদ আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সময় থেকে অনেক শুনেছি। দালালি কারা করে? ভারতে নরেন্দ্র মোদির বিজয়ের পরে ভোর হওয়ার আগে ফুল আর মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। দালালি কারা করে? ভারত সফরের সময় খালেদা জিয়া তিস্তা চুক্তির কথা ভুলে গিয়েছিল। দালাল কারা?
বিএনপিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ভারতে যখন নির্বাচন হয়, বন্ধের দিন ভারতীয় হাইকমিশনারের সামনে দাঁড়িয়েছিল দালাল কারা? ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলো— আপনি ভারত সফর করলেন, গঙ্গার পানির কী হলো? তিনি বললেন— ‘আমি তো ভুলে গেছি।’ দালাল কারা?
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের সঙ্গে ২১ বছর (১৯৭৫-১৯৯৬) শত্রুতা করে আমাদের লাভ হয়নি। বিএনপি শত্রুতা করে সংশয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল। সে কারণে (দুই দেশের মাঝে) সম্পর্কের উন্নতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা (ক্ষমতায় এসে) সে অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু, কারও দাসত্ব করি না। আমাদের শক্তির উৎস দেশের মানুষ, জনগণ। ভারতের কাছে আমরা ক্ষমতা চাই না, বন্ধুত্ব চাই। কারণ, এটা আমাদের স্বার্থেই দরকার। শত্রুতা করে আমাদের ক্ষতি করেছে ২১ বছর। আমরা সে অবস্থায় আর ফিরে যেতে চাই না।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, গঙ্গার পানি শেখ হাসিনাই এনেছেন। পানির চুক্তি কে করেছেন? শেখ হাসিনা। সীমান্ত সমস্যার (সমাধানে) চুক্তি কে করেছেন? শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মতো আরেকটি বাংলাদেশ (সমুদ্রসীমা) পেয়েছি আদালতের মাধ্যমে।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশের ৪২ শতাংশ ভোটার। এই নির্বাচনে আজকে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। উপজেলা নির্বাচন জনগণ নাকি প্রত্যাখান করেছে! তাহলে ৩৬ থেকে ৪০ শতাংশ লোক ভোট দিলো, তারা কারা? তারা এই দেশের জনগণ। তারা উন্নয়নে, অর্জনে মুগ্ধ।’
তিনি বলেন, কত নাটক, জর্জ মিয়া নাটক, মিয়া আরেফি নাটক। বাইডেনের উপদেষ্টা বানিয়ে নয়াপল্টনে কি নাটকই না তারা বানিয়েছিল। মনে আছে? মিয়া আরেফি ইংরেজিতে কথা বলে, হঠাৎ পুলিশ দিল পিটুনি, পিটুনি খেয়ে বরিশালের স্থানীয় ভাষায় কথা বলে। আবারও নাটক শুরু করছেন, খেলা কিন্তু আবারও হবে, জনগণের জানমালের সুরক্ষায়, এ অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা আবারও হবে।
‘আপনারা (নেতাকর্মী) প্রস্তুত আছেন? প্রস্তুত থাকেন। এমন এক শিক্ষা দেব এবার, পালাতে পালাতে অলিগলি পার হয়ে বুড়িগঙ্গার পচা পানি খাবে ডুবে ডুবে। বিএনপি এখন সেদিনের অপেক্ষায় আছে। জনগণ না থাকলে আন্দোলন হবে নাকি? বিএনপি হলো ভুয়া দল, ভুয়া দলের ভুয়া আন্দোলন জনগণ বিশ্বাস করে না। ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন।’
কাদের বলেন, আইএমএফের কর্মকর্তারা সেদিন বলে গেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত খুব মজবুত। এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ভারত আমাদের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকবে। এমনকি চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের কম প্রবৃদ্ধি হবে। আইএমএফ এটা ঘোষণা করে গেছে। তাই শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন। অনেকেই অপবাদ দেবে, মিথ্যাচার করবে, তাদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না, কান দেবেন না। এই সংকট কেটে যাবে। আবারও সুদিনের অপেক্ষায় আমরা থাকতে পারব।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, অ্যাড. আফজাল হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, কৃষি ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সারোয়ার। শান্তি সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।