নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ৫৮ হাজার ডেঙ্গুরোগী বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এসময় তিনি দাবি করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ডেঙ্গু আক্রান্তের যে সংখ্যা দিয়েছেন তা মনগড়া।
শনিবার (১৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেলা ১১টায় মিট দ্য প্রেসে এ কথা বলেন সাঈদ খোকন। এই মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
এর আগে ১৫ মে এক অনুষ্ঠানে তাপস বলেছিলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল।
এ তথ্য ‘মনগড়া’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। এরমধ্যে ঢাকা শহরে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৮১০, আর বাইরে ৪৯ হাজার জন।
সাঈদ খোকন বলেন, অন্যদিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে, তা আগের ২২ বছরে হয়নি। অর্থাৎ গত ২২ বছরের চেয়ে ২০২৩ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি।
ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সাবেক এই মেয়র বলেন, ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে আক্রান্ত হন এক লাখ ১০ হাজার আটজন। আর বাকি দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন আক্রান্ত হন ঢাকার বাইরে। এছাড়া গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই মারা যান ৯৮০ জন। সে হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৫৮ হাজার ১৯৮ জন রোগী বেশি ছিল। অথচ তার (তাপস) এমন তথ্য নাগরিকদের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
সাঈদ খোকন আরও বলেন, আমি দক্ষিণ সিটির মেয়র থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ব্যাপক হারে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। তখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এ চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখিনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত নগরবাসীকে রেখে পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করিনি।
ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ইঙ্গিত করে সাঈদ খোকন বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষের এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি কয়েকদিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। তিনি (মেয়র তাপস) বলেছেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজারের কম ছিল। পরে তার বক্তব্য যে ভুল ছিল, তা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র বলেন, আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন হয়তো আহামরি ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করতে পারিনি। কিন্তু নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে চেষ্টা করেছি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জনদুর্ভোগ কমানো ছিল আমার মূল দায়িত্ব। কিন্তু এখন নগর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায় বা সিটি টোলের নামে রিকশা, সিএনজি, সবজি বহনকারী ট্রাক-লড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে। আমার সময়ে এমনটা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, মেয়র থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। সে বরাদ্দ দিয়ে শহরের ১৯ পার্ক, ১২টি মাঠের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ৫০টির বেশি বড় ধরনের উন্নয়ন কাজ করেছি।
ঢাকার কাঁচাবাজারে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছি।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমার সংসদীয় এলাকার থানা-পুলিশ যখন চাঁদাবাজি বন্ধ করতে যায়, তখন চাঁদাবাজরা সংশ্লিষ্ট করপোরেশনের একটা কাগজ (সিটি টোল) দেখায় যে, তারা বৈধতা নিয়ে এই চাঁদাবাজি করছে। অর্থাৎ সিটি টোলের একটা প্রটেকশন তারা পায়। এই চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারের শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস কম দামে কিনতে পারবেন নগরবাসী।’
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিকের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হচ্ছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, এটি ব্যবসায়িক কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে রাজস্ব আহরণ করে জনগণকে সেবা দিতে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। আর সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা নিশ্চিত করার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। সে কারণে দৃষ্টিভঙ্গির একটি বড় পার্থক্য আছে।’
তিনি বলেন, সিটি টোল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদর্শ কর তফসিলে আছে। আমার সময়ে কিন্তু আমি সিটি টোল আরোপ করিনি। আজকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে দেখবেন, লাঠি হাতে বাঁশি বাজিয়ে রিকশা, টেম্পু, বাস, ভ্যানগাড়ি থামিয়ে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। আমার সময় কর্তৃত্ব থাকা স্বত্বেও আমি এই কাজটি করিনি, যাতে নাগরিকদের ভোগান্তি না হয়, বিভ্রান্তির মধ্যে না পড়েন, অসহায় হয়ে না পড়েন।
আগে দক্ষিণ সিটিতে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচুর বরাদ্দ দিয়েছেন জানিয়ে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, আমার সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জনদুর্ভোগ কমানো ছিল আমার মূল দায়িত্ব। মেয়র থাকাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনকে চাঁদাবাজি করতে হয়নি।
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাঈদ খোকন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি চান, তা হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















