মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইতোমধ্যে দুটি টিকা আবিষ্কারও হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা থাকায় টিকাগুলো ব্যবহার হচ্ছে না।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলা গড়পাড়া তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতমবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চার ধরনের ডেঙ্গু আছে, ভাইরাস আছে। টিকা নিলে দেখা যায় কিছু ভাইরাস দমনে হচ্ছে, কিন্তু সব ভাইরাস দমন হয় না। আর যারা একবার ডেঙ্গুর টিকা নিয়েছে তাদেরকে অন্য ভাইরাসে আক্রমণ করলে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, দেশের এসেই শুনতে পারলাম আইসিডিডিআরবি একটি পরীক্ষামূলকভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে। সেটি এখনও পরীক্ষায় রয়েছে, তারা বলছে, তাদের এ টিকাটি বেশ কার্যকর। আমাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নেবো এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। যখন পরীক্ষাগুলো শেষ হবে যাবে তখন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আমাদের দেশেও ব্যবহার করত পারবো। কিন্তু এ মুহূর্তে বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গুর কার্যকর টিকা তৈরি হয়নি।
ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু স্থিতি আছে, আর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন প্রায় নয় হাজার রোগী চিকিৎিসাধীন। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এখন স্যালাইনেরে কোনো ঘাটতি নেই। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সাত লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। বাকি চার লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চালানও দ্রুত চলে আসবে। প্রতিদিনি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন রিসিভ করছি এবং হাসপাতালগুলোতে দিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া বেসরকারি ওষুধ উৎপাদন কোম্পানিগুলো স্যালাইনের উৎপাদন এখন অনেকগুণ বাড়িয়েছে। আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তারা মাসে ৫৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করত পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর জন্য প্রয়োজন হলো ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন। ডেঙ্গু আক্রান্তের হার যদি বর্তমানের চেয়ে বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে স্য্লাাইনের প্রয়োজন হবে ৩০ লাখ ব্যাগ। সে কারণে আমি মনে করি, এখন আর সেভাবে হাহাকার ঘাটতি নেই। আমরা চাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাক।
দেশবাসীর উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু রোগী তো আছে, তবে জনসাধারণকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দেরি করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে তখন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলাও কঠিন হয়ে যায় এবং অনেক সময় রোগী মারাও যান। সেজন্য তড়াতাড়ি ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। তবে আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে আমাদের দেশে ডেঙ্গু কমে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যে যক্ষা, চক্ষু ও কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটি উদ্যোগ, সেটি জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে, যেটির নাম শেখ হাসিনা ইনিসেয়েটিভ।
তিনি বলেন, অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। গ্লোবাল হেলস্থ ফোরামের কোচ চেয়ারম্যান হিসেবে আহ্বান করা হয়েছে তিনি এখন এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন।
মন্ত্রী বলেন, জাতি সংঘের এবারের সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ের অনেক দিক নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা মহামারি হয়েছে, আগামীতে কোনো ধরনের মহামারি আসলে তা কি উপায়ে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশ যাতে শতভাগ যক্ষা নির্মূলকরতে পারে। সে তুলনায় আমাদের দেশে আগের চেয়ে এখন প্রায় ৫০ ভাগ যক্ষা রোগী কমে গেছে। যক্ষার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য আছে, আমারাও ২০৩০ সালের মধেই যক্ষা শতভাগ নির্মূল করবো। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জাহিদ মালেক বলেন, কিউবাতেও আমরা গিয়েছিলাম আপনারা জানেন। সেখানে ৭৭টি দেশের সঙ্গে সভা হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করা যায়। জাতি সংঘের এ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ ভালোভাবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিতে পেরেছে।
আগামী নির্বাচনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ তিনবার ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এবং সামনেও আশা করি জনগণ তাকে নির্বাচিত করবে। গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশের বড় বড় সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার পূরণ করেছে। সরকার করোনাকালীন দেশের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, খাদ্যের অভাব হয় নেই, পেট্রোলের অভাব হয় নেই।
মন্ত্রী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে আমি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। ১০ বছর আগে কি ছিল তা আপনারা জানেন। জনগণ সবসময় উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তিও চায়। আমার সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা নেই। আপনারাই ভালো জানেন আমি কতটুকু ভালো কাজ করছি। জনগণ ভালোবেসে আমাকে ভোট দিয়েছে। আশা করছি সামনের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দেবে।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানিকগঞ্জ-৩ আসনে পুনরায় আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিলে আমি খুবই খুশি হব। আমি মনে করি, দেশবাসী আমাকে আপন করে নেবে, আমাকে মূল্যায়ন করবে এবং ভালোবাসবে। ইনশাআল্লাহ বিপুল ভোটে আমরা নির্বাচিত হব।