Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
খন্দকার মোশররফ

‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে পরে এমন ষড়যন্ত্র হবে যে নির্বাচন দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে পরে এমন ষড়যন্ত্র হবে যে নির্বাচন দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে।’

রোববার (১ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) সভার আয়োজনে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা কেউ কেউ গোপনে বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তো বিএনপি টু-থার্ড মেজরিটি নিয়ে সরকার গঠন করবে। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা গিয়েছিলাম। আমরা কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই, তার ব্যাখ্যা আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছি, ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য একটি উপযুক্ত সময়। আমরা মনে করি, নির্বাচন দিতে যত বিলম্ব হবে, পতিত সরকার নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকবে। কিছু ষওযন্ত্রের নমুনাও আমরা দেখেছি। সুতরাং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া উত্তম। অন্তর্বর্তী সরকারকে তো একটা সময় বিদায় নিতে হবেই। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যে বিদায় নিলে সসম্মানেই বিদায় নেওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের পক্ষে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে সেসব সংস্কার বাস্তবায়নও করবো। জাতীয় ঐক্যমত্য তৈরি করতে আগামীকাল থেকে আলোচনা শুরু হবে, আমরা তাতে যাবো। তবে আমরা চাই, সংস্কার প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে নির্বাচনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়া হোক। দেশে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, তা কিন্তু নির্বাচনের কারণেই হচ্ছে। আমরা কিন্তু অনেক বিশ্বাস করে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। কিন্তু উনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা তাতে হতাশ। তিনি বলেছেন একমাত্র বিএনপিই নাকি নির্বাচন চায়। অথচ আমরা বোঝাতে চেয়েছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিলে সবদিক দিয়েই তা ভালো হবে। আমি আশা করবো, প্রধান উপদেষ্টা দেশের মধ্যে আর কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।

জাপানে সফরে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে বিএনপি হতাশ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে আমরা সবাই সম্মান করি। কিন্তু তিনি বিদেশে গিয়ে বললেন, শুধু বিএনপি নাকি নির্বাচন চায়, আর কেউ চায় না। তার এই বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। ৫৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চেয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘১৬ বছর যাবত জনগণ ভোটের অধিকার পায় না। ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে যেতে পারেন।’

তিনি বলেন, ঐক্যমতের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আবারও দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনা শুরু করবেন। বিএনপি যাবে, কিন্তু গেলেই বা কি করা যাবে। মিনিমাম যে সংস্কারে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত আছে, তা নিয়ে নির্বাচনমুখী হন।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিদেশের নাগরিকদের ভুলপথে পরিচালিত করবেন, জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করবেন। যারা বিতর্কিত উপদেষ্টা তাদের বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে ছোট উপদেষ্টা পরিষদ করা গেলে নির্বাচন দিতে সুবিধা হবে। সেটা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বিশ্বাস করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই পদে বসিয়েছি। কিন্তু তিনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিলেন তাতে আমরা খুব বেশি হতাশ। উনি বলেছেন, “একমাত্র নাকি বিএনপিই নির্বাচন চায়।” আমিতো বলছি, কে নির্বাচন চায় না?’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ এর ক্ষমতায় যারা ছিলেন, বাকশাল কায়েম করে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। রক্ষীবাহিনী তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। এমন একটা অবস্থার পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করেছিলেন। বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীকে এক করেছিলেন। তিনি বাকশাল বাতিল করে গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এভাবেই তিনি সফল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠেছিলেন।

বিএনপির প্রবীণ এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর অনেকে বলেছিল তিনি ছাড়া বিএনপি ইজ জিরো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সাহসিকতার সঙ্গে বিএনপির হাল ধরেছিলেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শিকতায় তিনি দেশ পরিচালনা করেছিলেন। এই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু এতো নির্যাতনের পরও বিএনপিকে দমানো সম্ভব হয়নি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসপিপির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এমন জাহিদ হোসেন। সংগঠনের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতারা বক্তৃতা করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

খন্দকার মোশররফ

‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে পরে এমন ষড়যন্ত্র হবে যে নির্বাচন দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে’

প্রকাশের সময় : ০৫:০৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে পরে এমন ষড়যন্ত্র হবে যে নির্বাচন দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে।’

রোববার (১ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) সভার আয়োজনে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা কেউ কেউ গোপনে বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তো বিএনপি টু-থার্ড মেজরিটি নিয়ে সরকার গঠন করবে। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা গিয়েছিলাম। আমরা কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই, তার ব্যাখ্যা আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছি, ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য একটি উপযুক্ত সময়। আমরা মনে করি, নির্বাচন দিতে যত বিলম্ব হবে, পতিত সরকার নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকবে। কিছু ষওযন্ত্রের নমুনাও আমরা দেখেছি। সুতরাং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া উত্তম। অন্তর্বর্তী সরকারকে তো একটা সময় বিদায় নিতে হবেই। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যে বিদায় নিলে সসম্মানেই বিদায় নেওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের পক্ষে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে সেসব সংস্কার বাস্তবায়নও করবো। জাতীয় ঐক্যমত্য তৈরি করতে আগামীকাল থেকে আলোচনা শুরু হবে, আমরা তাতে যাবো। তবে আমরা চাই, সংস্কার প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে নির্বাচনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়া হোক। দেশে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, তা কিন্তু নির্বাচনের কারণেই হচ্ছে। আমরা কিন্তু অনেক বিশ্বাস করে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। কিন্তু উনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা তাতে হতাশ। তিনি বলেছেন একমাত্র বিএনপিই নাকি নির্বাচন চায়। অথচ আমরা বোঝাতে চেয়েছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিলে সবদিক দিয়েই তা ভালো হবে। আমি আশা করবো, প্রধান উপদেষ্টা দেশের মধ্যে আর কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।

জাপানে সফরে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে বিএনপি হতাশ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে আমরা সবাই সম্মান করি। কিন্তু তিনি বিদেশে গিয়ে বললেন, শুধু বিএনপি নাকি নির্বাচন চায়, আর কেউ চায় না। তার এই বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। ৫৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চেয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘১৬ বছর যাবত জনগণ ভোটের অধিকার পায় না। ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে যেতে পারেন।’

তিনি বলেন, ঐক্যমতের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আবারও দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনা শুরু করবেন। বিএনপি যাবে, কিন্তু গেলেই বা কি করা যাবে। মিনিমাম যে সংস্কারে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত আছে, তা নিয়ে নির্বাচনমুখী হন।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিদেশের নাগরিকদের ভুলপথে পরিচালিত করবেন, জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করবেন। যারা বিতর্কিত উপদেষ্টা তাদের বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে ছোট উপদেষ্টা পরিষদ করা গেলে নির্বাচন দিতে সুবিধা হবে। সেটা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বিশ্বাস করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই পদে বসিয়েছি। কিন্তু তিনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিলেন তাতে আমরা খুব বেশি হতাশ। উনি বলেছেন, “একমাত্র নাকি বিএনপিই নির্বাচন চায়।” আমিতো বলছি, কে নির্বাচন চায় না?’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ এর ক্ষমতায় যারা ছিলেন, বাকশাল কায়েম করে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। রক্ষীবাহিনী তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। এমন একটা অবস্থার পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করেছিলেন। বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীকে এক করেছিলেন। তিনি বাকশাল বাতিল করে গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এভাবেই তিনি সফল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠেছিলেন।

বিএনপির প্রবীণ এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর অনেকে বলেছিল তিনি ছাড়া বিএনপি ইজ জিরো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সাহসিকতার সঙ্গে বিএনপির হাল ধরেছিলেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শিকতায় তিনি দেশ পরিচালনা করেছিলেন। এই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু এতো নির্যাতনের পরও বিএনপিকে দমানো সম্ভব হয়নি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসপিপির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এমন জাহিদ হোসেন। সংগঠনের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতারা বক্তৃতা করেন।