Dhaka বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ আগামী ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনকালীন পদায়ন শুরু হবে। তবে এবারের নির্বাচনে গত ৩ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের রাখা হবে না।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে দেশের ভেতরে-বাইরে থেকে ‘এআই’ দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা অপপ্রচার হতে পারে। উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তা ঠেকানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশনের জন্য কমিটি করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বরাতে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর ও বাহির থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয় বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে, এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে, যত ঝড়ঝাপ্টা আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে— এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি সংখ্যক টিভিসি, ডকুমেন্টারি বা ভিডিও তৈরি করা এবং তা যেন খুব দ্রুত ইউটিউবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে, সেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সবাই যেন এটা দেখে নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে প্রস্তুত হতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রেস সচিব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে সতর্ক করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।

নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, নির্বাচনি নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে— এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে সুন্দর, উৎসবমুখর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

প্রেস সচিব বলেন, আজকের প্রায় দুই ঘণ্টার এই সভায় মূলত চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। প্রথমত সোশ্যাল ডিসইনফরমেশন বা এআই-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার, ভুল তথ্য (মিসইনফরমেশন/ডিসইনফরমেশন) দ্রুততার সঙ্গে মোকাবিলা করা। দ্বিতীয়ত পদায়ন ও বদলি বিষয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠ প্রশাসনে যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের পদায়ন। তৃতীয়ত, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কার্যকর প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং চতুর্থত নির্বাচনের আগে ও পরের ৭২ ঘণ্টাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা (বিশেষ করে ডিসি, এডিসি, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার হিসেবে) কোনো ভূমিকায় থাকলে তারা এবারের নির্বাচনে পদায়ন পাবেন না। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, কর্মদক্ষতা, শারীরিক ফিটনেস, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্বচ্ছতা এবং পূর্বেকার পোস্টিং ও কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট আছে কি না, এসব বিষয় যাচাই করে যোগ্যতম ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হবে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, নিজ জেলায় বা শ্বশুরবাড়ি রয়েছে এমন কোনো এলাকায় পদায়ন হবে না। কোনো আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেক্ষেত্রেও পদায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।

প্রেস সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন যে পুলিশ বাহিনীও একই মানদণ্ডে ৬৪ জেলায় একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অপপ্রচার মোকাবিলার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজ (বিশেষ করে এআই-জেনারেটেড ছবি ও ভিডিও) মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিসইনফরমেশনের জন্য সেন্ট্রাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিটি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপপ্রচার ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠেকানো যায়।

‘যেহেতু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ফেক নিউজ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও নিবিড় আলোচনার জন্য বলা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রায় ৯২ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এর মধ্যে ৯০ হাজার আর্মি সদস্য। সেনাবাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি করে থাকবে। নির্বাচনের আগের ও পরের ৭২ ঘণ্টার পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে টিভিসি, ডকুমেন্টারি ও ভিডিও দ্রুত তৈরি করে বিটিভি, সংসদ টিভি (নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে) এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

প্রবাসীদের জন্য অ্যাপ ও ব্যালট সুবিধার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের জন্য এবং আরও তিনটি বিশেষ গ্রুপের (আইনের আওতায় থাকা বা জেলে থাকা ব্যক্তি, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা) জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুবিধাসহ একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছে। খুব দ্রুত এই অ্যাপটি নির্বাচন কমিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—যত ঝড় যাই থাকুক আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে এবং ‘বেস্ট প্রিপেয়ারড’ হয়ে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এর আগে সকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার হোসেন, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান, কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। সরকারও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জুলাই সনদ ইস্যুতে গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। যদিও সেই গণভোট আলাদাভাবে হবে নাকি নির্বাচনের দিন হবে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরোধ।বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট চায়। তবে জামায়াতসহ তাদের মিত্ররা নভেম্বরের মধ্যে আলাদাভাবে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে সুপারিশ পেশ করেছে সেখানে আলাদা এবং নির্বাচনের দিন দুইভাবেই গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে। এবার গণভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এদিকে গণহত্যায় অভিযুক্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে দলটির পলাতক নেতারা দেশের বাইরে অবস্থান করে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। সরকার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই ভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ আগামী ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনকালীন পদায়ন শুরু হবে। তবে এবারের নির্বাচনে গত ৩ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের রাখা হবে না।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে দেশের ভেতরে-বাইরে থেকে ‘এআই’ দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা অপপ্রচার হতে পারে। উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তা ঠেকানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশনের জন্য কমিটি করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বরাতে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর ও বাহির থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয় বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে, এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে, যত ঝড়ঝাপ্টা আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে— এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি সংখ্যক টিভিসি, ডকুমেন্টারি বা ভিডিও তৈরি করা এবং তা যেন খুব দ্রুত ইউটিউবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে, সেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সবাই যেন এটা দেখে নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে প্রস্তুত হতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রেস সচিব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে সতর্ক করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রচনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।

নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, নির্বাচনি নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে— এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে সুন্দর, উৎসবমুখর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

প্রেস সচিব বলেন, আজকের প্রায় দুই ঘণ্টার এই সভায় মূলত চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। প্রথমত সোশ্যাল ডিসইনফরমেশন বা এআই-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার, ভুল তথ্য (মিসইনফরমেশন/ডিসইনফরমেশন) দ্রুততার সঙ্গে মোকাবিলা করা। দ্বিতীয়ত পদায়ন ও বদলি বিষয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠ প্রশাসনে যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের পদায়ন। তৃতীয়ত, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কার্যকর প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং চতুর্থত নির্বাচনের আগে ও পরের ৭২ ঘণ্টাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা (বিশেষ করে ডিসি, এডিসি, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার হিসেবে) কোনো ভূমিকায় থাকলে তারা এবারের নির্বাচনে পদায়ন পাবেন না। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, কর্মদক্ষতা, শারীরিক ফিটনেস, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্বচ্ছতা এবং পূর্বেকার পোস্টিং ও কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট আছে কি না, এসব বিষয় যাচাই করে যোগ্যতম ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হবে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, নিজ জেলায় বা শ্বশুরবাড়ি রয়েছে এমন কোনো এলাকায় পদায়ন হবে না। কোনো আত্মীয়স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেক্ষেত্রেও পদায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।

প্রেস সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন যে পুলিশ বাহিনীও একই মানদণ্ডে ৬৪ জেলায় একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অপপ্রচার মোকাবিলার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজ (বিশেষ করে এআই-জেনারেটেড ছবি ও ভিডিও) মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিসইনফরমেশনের জন্য সেন্ট্রাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিটি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপপ্রচার ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠেকানো যায়।

‘যেহেতু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ফেক নিউজ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও নিবিড় আলোচনার জন্য বলা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রায় ৯২ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এর মধ্যে ৯০ হাজার আর্মি সদস্য। সেনাবাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি করে থাকবে। নির্বাচনের আগের ও পরের ৭২ ঘণ্টার পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে টিভিসি, ডকুমেন্টারি ও ভিডিও দ্রুত তৈরি করে বিটিভি, সংসদ টিভি (নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে) এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

প্রবাসীদের জন্য অ্যাপ ও ব্যালট সুবিধার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের জন্য এবং আরও তিনটি বিশেষ গ্রুপের (আইনের আওতায় থাকা বা জেলে থাকা ব্যক্তি, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা) জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুবিধাসহ একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছে। খুব দ্রুত এই অ্যাপটি নির্বাচন কমিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—যত ঝড় যাই থাকুক আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে এবং ‘বেস্ট প্রিপেয়ারড’ হয়ে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এর আগে সকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার হোসেন, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান, কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। সরকারও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জুলাই সনদ ইস্যুতে গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। যদিও সেই গণভোট আলাদাভাবে হবে নাকি নির্বাচনের দিন হবে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরোধ।বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট চায়। তবে জামায়াতসহ তাদের মিত্ররা নভেম্বরের মধ্যে আলাদাভাবে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে সুপারিশ পেশ করেছে সেখানে আলাদা এবং নির্বাচনের দিন দুইভাবেই গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে। এবার গণভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এদিকে গণহত্যায় অভিযুক্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে দলটির পলাতক নেতারা দেশের বাইরে অবস্থান করে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। সরকার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই ভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।