নিজস্ব প্রতিবেদক :
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সোয়া এগারোটায় ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এ মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তার স্মৃতিকৃত্য।
বিএনপির শোক
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে দলটির সহ দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বার্তায় শোক জানানো হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শোক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল, স্বাধীনতা পরবর্তীতে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারে ও বিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সব সংকটে তিনি এগিয়ে এসেছেন অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার বলিষ্ঠ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম তাকে প্রথম স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। আওয়ামী সরকারের গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ এবং ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শোক বিবৃতিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ওবায়দুল কাদের মরহুম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার শোক
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ শোকবার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা ছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মানবিক চিকিৎসক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুধু নিজেকেই দেশের সেবায় নিয়োজিত করেননি, উদ্বুদ্ধ করেছেন আরও এক গুচ্ছ মানুষকে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সময় জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আজকের বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উজ্জ্বল অনেক মানুষই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রেরণা, তাগাদা ও দিশা ধরে দেশকে এগিয়ে দিয়েছেন। তার এ অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে।
বিরোধীদলীয় নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের শোক
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে জানানো শোক বার্তায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন প্রকৃত বীর। তাঁর সারাটা জীবনই বীরত্বগাঁথা। দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসা ছিলো তাঁর। যৌবনে অসীম সাহসিকতায় গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাহত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন দলবলসহ। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশ পরিচালনার সময় ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতেই ঔষধনীতি প্রণয়ণ করেন।
শোক বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, সেই ঔষধনীতির কারণেই এখন চাহিদার ৯৬ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করছে দেশ। আবার প্রায় দুইশো দেশে ঔষধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শোক বার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কেবল একজন চিকিৎসাবান্ধব মানুষই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক নির্ভীক ও প্রকৃত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ব একজন খাঁটি মানুষ। তিনি দেশের গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের সেবাদানে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। জাতির প্রতি তার এই অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও জানান জাহিদ মালেক।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুমের রূহের শান্তি কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তথ্যমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খপ্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইউরোপ সফররত তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তাঁর শোকবার্তায় একাত্তরে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে কম খরচে দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদানের কথা স্মরণ করেন। সমবেদনা জানান মরহুমের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম শোকবার্তায় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের চিকিৎসা সেবায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তার মৃত্যুতে দেশবাসী একজন অনুকরণীয় আদর্শ এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে হারালো বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
এ সময় জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে কম খরচে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদানের কথা স্মরণ করেন মো. তাজুল ইসলাম।
রেলমন্ত্রীর শোক
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, রেলমন্ত্রী তার শোকবার্তায় একাত্তরে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে কম খরচে দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদানের কথা স্মরণ করেন।
মন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শোক জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শোকবার্তায় এ কে মোমেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ড. মোমেন বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাজীবন কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদানও তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গণফোরামের শোক
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো দেশপ্রেমিক বিপ্লবীকে হারানো দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি সারাজীবন দেশের জনগণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এ দেশের মুক্তির সংগ্রাম মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১২ দলীয় জোটের শোক
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দরা বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে সবসময় যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি মজলুমের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে হাজির হতেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়া বলেন, আমাদের সময়ের নায়ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর আমাদের মাঝে নেই। প্রায় ৭ ঘণ্টার সফল ডায়ালাইসিস শেষে খুশি মন নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যুর খবর পেলাম।
জাফরুল্লাহ ভাই এ দেশের গণমানুষের সংগ্রামের মাঝে বেঁচে থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তারা শোকবার্তায় লিখেছেন, দু:খজনক হলেও সত্য যে, জীবনের শেষ মুহুর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাকে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিকট হতে অবহেলা ও অপমানের শিকার হতে হয়েছে। যদিও এ জন্য তারা কখনো তার কাছে দু:খ প্রকাশ বা ক্ষমা চেয়েছেন বলে জাতি জানে না। ব্যক্তিগত যশখ্যাতি ও সমৃদ্ধির জীবনকে পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাটির টানে দেশে ফিরে এসে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে।