Dhaka শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রেনেযাত্রী কিশোরীকে গণধর্ষণের মূলহোতা গ্রেফতার

প্রতিকী ছবি

লালমনিরহাটে ট্রেন ধরতে না পরায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা রকিকে গ্রেফতার করেছে পুলি। শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ফরহাদ হোসেন মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে শুক্রবার (০৯ অক্টোবর) দিনগত রাতে উপজেলার তালুক বানিনগর এলাকা থেকে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রকিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার রকি একই উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগর এলাকার রজব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ০৫ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া এলাকার মামার বাড়ি থেকে বাবার সঙ্গে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে এক কিশোরী (১৫)। সেখান থেকে পরদিন ০৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে কাউনিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় সে।

ট্রেন কালীগঞ্জের কাকিনা স্টেশনে দাঁড়ালে ওই কিশোরী নাস্তা করতে নামে। সে সময় রকি (২২) নামে পরিচয় দিয়ে এক যুবক কিশোরীর কাছে জানতে চান সে কোথায় যাচ্ছে। তখন মেয়েটি তাকে কাউনিয়া যাচ্ছে বলে জানায়। রকিও নিজেকে কাউনিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। এরই মধ্যে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেলে রকি অটোরিকশায় করে কাউনিয়া যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি অটোরিকশায় রকি ওই কিশোরীকে নিয়ে কাউনিয়া যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মধ্য রাতে একটি সেচ পাম্পের নির্জন ঘরে নিয়ে যান।

সেখানে রকি ও তার তিন বন্ধু মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করেন। পরদিন ০৭ অক্টোবর সকালে মুখ না খোলার শর্তে কিশোরীকে মুক্তি দেন বখাটে ওই চার যুবক। পরে অসুস্থ অবস্থায় কিশোরী পথ ভুলে চলার পথে স্থানীয়রা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেয়েটি তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলে।

আরও পড়ুন : ট্রেন ধরতে ব্যর্থ কিশোরীকে গণধর্ষণ : গ্রেফতার ১

তারপর স্থানীয়দের সহায়তায় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় মেয়েটি। ০৮ অক্টোবর রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করেন। তবে কিশোরীর অভিযোগ, টাকাগুলো তাকে না দিয়ে নিজেদের পকেটেই রাখেন মাতব্বররা।

জরিমানার টাকা কিশোরীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বররা তাকে পাঠিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করে মেয়েটি। পরে ০৯ অক্টোবর দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে কিশোরী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়।

প্রেসক্লাবে ঘটনার লোমহর্ষক এ বর্ণনা শুনে সাংবাদিকরা থানায় জানায়। এর পরপরই কিশোরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং পরে মেয়েটির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে শুক্রবার দিনগত রাতে মূলহোতা রকিকে আটক করে।

রকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই কিশোরী বাদী হয়ে সাতজন ধর্ষক, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও চার/পাঁচ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা নেয় পুলিশ।

এ মামলায় রকিকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকেও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম।

কালীগঞ্জ থানার ওসি, তদন্ত ফরহাদ হোসেন বলেন, ভিকটিমের দায়ের করা মামলায় প্রধান হোতা রকিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার রকি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, সাতজন ধর্ষক, মাতব্বর, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সব আসামিদের নাম প্রকাশ না করতে আহ্বানও জানান তিনি।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ট্রেনেযাত্রী কিশোরীকে গণধর্ষণের মূলহোতা গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০

লালমনিরহাটে ট্রেন ধরতে না পরায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা রকিকে গ্রেফতার করেছে পুলি। শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ফরহাদ হোসেন মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে শুক্রবার (০৯ অক্টোবর) দিনগত রাতে উপজেলার তালুক বানিনগর এলাকা থেকে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রকিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার রকি একই উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগর এলাকার রজব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ০৫ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া এলাকার মামার বাড়ি থেকে বাবার সঙ্গে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে এক কিশোরী (১৫)। সেখান থেকে পরদিন ০৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে কাউনিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় সে।

ট্রেন কালীগঞ্জের কাকিনা স্টেশনে দাঁড়ালে ওই কিশোরী নাস্তা করতে নামে। সে সময় রকি (২২) নামে পরিচয় দিয়ে এক যুবক কিশোরীর কাছে জানতে চান সে কোথায় যাচ্ছে। তখন মেয়েটি তাকে কাউনিয়া যাচ্ছে বলে জানায়। রকিও নিজেকে কাউনিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। এরই মধ্যে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেলে রকি অটোরিকশায় করে কাউনিয়া যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি অটোরিকশায় রকি ওই কিশোরীকে নিয়ে কাউনিয়া যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মধ্য রাতে একটি সেচ পাম্পের নির্জন ঘরে নিয়ে যান।

সেখানে রকি ও তার তিন বন্ধু মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করেন। পরদিন ০৭ অক্টোবর সকালে মুখ না খোলার শর্তে কিশোরীকে মুক্তি দেন বখাটে ওই চার যুবক। পরে অসুস্থ অবস্থায় কিশোরী পথ ভুলে চলার পথে স্থানীয়রা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেয়েটি তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলে।

আরও পড়ুন : ট্রেন ধরতে ব্যর্থ কিশোরীকে গণধর্ষণ : গ্রেফতার ১

তারপর স্থানীয়দের সহায়তায় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় মেয়েটি। ০৮ অক্টোবর রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করেন। তবে কিশোরীর অভিযোগ, টাকাগুলো তাকে না দিয়ে নিজেদের পকেটেই রাখেন মাতব্বররা।

জরিমানার টাকা কিশোরীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বররা তাকে পাঠিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করে মেয়েটি। পরে ০৯ অক্টোবর দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে কিশোরী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়।

প্রেসক্লাবে ঘটনার লোমহর্ষক এ বর্ণনা শুনে সাংবাদিকরা থানায় জানায়। এর পরপরই কিশোরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং পরে মেয়েটির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে শুক্রবার দিনগত রাতে মূলহোতা রকিকে আটক করে।

রকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই কিশোরী বাদী হয়ে সাতজন ধর্ষক, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও চার/পাঁচ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা নেয় পুলিশ।

এ মামলায় রকিকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকেও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম।

কালীগঞ্জ থানার ওসি, তদন্ত ফরহাদ হোসেন বলেন, ভিকটিমের দায়ের করা মামলায় প্রধান হোতা রকিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার রকি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, সাতজন ধর্ষক, মাতব্বর, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সব আসামিদের নাম প্রকাশ না করতে আহ্বানও জানান তিনি।