নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ট্রাম্পকে সামাল দিতে পারছেন না, তিনি আবার বাংলাদেশকে হুমকি দিচ্ছেন। কারও কথায় নির্বাচন হবে না, দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কে এলো আর এলো না তাতে কিছু আসে যায় না।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন আমরা করব, আমরা অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নিষেধাজ্ঞার কি হলো? ভিসানীতির কি হলো, আমার নির্বাচন আমি করব অবাধ সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করব, তুমি বুদ্ধি দেওয়ার কে? তুমি বলার কে? আমাদের গণতন্ত্র আমাদের সংবিধান ঠিক করবে। আমাদের নির্বাচন আমাদের সংবিধান নির্ধারণ করবে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক মানি না, ওটা এখন মরা লাশ। তত্ত্বাবধায়কের মরা লাশ আমাদের কাছে এনে লাভ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীন দেশের নির্বাচন নিয়ে অন্য কোন দেশের কথা বলার যৌক্তিকতা কি আছে? নির্বাচন নিয়ে কে কী বললো তাতে আমাদের আসে যায় না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তবে কেউ যদি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে তাদের প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পনেরো বছরের ব্যবধানে যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ সকল খাতের উন্নয়ন দেখেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলছে। আগামীতে সমৃদ্ধ বর্ণীল বাংলাদেশ নির্মাণে এখনো ক্লান্তিহীন সংগ্রাম করছে যাচ্ছেন শেখ হাসিনার। গত ৪৮ বছরে দক্ষ, সাহসী, জনপ্রিয়, দুর্বার নেতা শেখ হাসিনাকে কোনো ষড়যন্ত্র দমিয়ে রাখতে পারেনি।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন বলেন, ভিসা নীতির নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যখন ভিসা নীতি ওয়াশিংটনের তখন ভয় দেখায় মির্জা ফখরুল। দেশের মানুষ হলো আমাদের শক্তি, মানুষ চাইলে আমরা তাক থাকবো না চাইলে থাকবো না। কিন্তু কোনো দেশের ভিসা নীতি কে আমরা ভয় পাইনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বিরোধী অবস্থান ছিল তা আবার স্পষ্ট হলো।
কাদের বলেন, এমন দিন নেই, যেদিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। ওয়াশিংটন হিলে ৬ জানুয়ারি ৬টি প্রাণ ঝরলো, এ কেমন গণতন্ত্র? আপনাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাহলে আমাদের ভয় দেখান কেন? আবার দালাল লাগিয়েছেন ফখরুলকে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়কের নামে অস্বাভাবিক সরকার দেশে আর আসবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন ঠেকাতে কে আসবে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। যারা নির্বাচন বাধা দিতে আসবে তাদের উপর ভিসা নীতি। আমরা আগেও বলছি বাংলাদেশের নির্বাচন হবে যথা সময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ । দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমাদের স্বাধীন দেশের এসব নিয়ে অন্য কোন দেশের কথা বলার যৌক্তিকতা কি আছে?।
আওয়ামী লীগকে ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো ছাড় নেই, হুমকি দিয়ে লাভ নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন আর ভয় দেখায় মির্জা ফখরুল। কি অদ্ভুত কারবার।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, আমাদেরকে নিষেধাজ্ঞা ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বৃহৎ শক্তির হুমকিকেই বঙ্গবন্ধুকন্যা পরোয়া করে না আর আপনারা কি হুমকি দেবেন। ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন হতে দেবেন না দেখি কে নির্বাচন ঠেকাতে আসে!
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক চালু করে বাংলাদেশে আবার অস্বাভাবিক সরকার করবেন সেটা আর হবে না। অস্বাভাবিক সরকার মানি না, কে আসুক কে বলুক তাতে কিছু আসে যায় না। ভয় দেখায় শেখ হাসিনার অধীনে ইলেকশন হবে না। আমি আজ বলে দিতে চাই, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ৭১ সালে নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পেলে বাংলাদেশ কোনোদিনও স্বাধীন হতো না। নিষেধাজ্ঞাকে ভয় করলে বঙ্গবন্ধু এই দেশকে স্বাধীন করতে পারতেন না। আজকে নিষেধাজ্ঞাকে ভয় করলে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, যে সমৃদ্ধির সোনালি অর্জন, তা অব্যাহত রাখতে পারব না।
বিএনপির আল্টিমেটামের সমালোচনা করে কাদের বলেন, আটচল্লিশ ঘণ্টা শেষ, আল্টিমেটাম শেষ অতঃপর কি হবে? ফখরুল সাহেব এখন কি করবেন? আন্দোলনের ডাকে পাবলিক নাই। ভুয়া! বিএনপির একদফা ভুয়া, তত্ত্বাবধায়ক ভুয়া প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ভুয়া। খেলা তো হবে। ক্যাপ্টেন আমেরিকা আছেন। ক্যাপ্টেন এলে জোরদার খেলা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সামনে চ্যালেঞ্জ। এখন থেকেই নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত যদি আবারও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। ৭৫ আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার দায় নিয়ে ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের আরও বলেন,সাহসী ও সততা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কাদের বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ, ১৫ বছর পরে বাংলাদেশ, ১৫ বছর আগের এই ঢাকা শহর, ১৫ বছর পরের এই ঢাকা শহর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের আলোতে ঝলমল। কী পরিবর্তন তাকিয়ে দেখুন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চলবে। কী অপূর্ব সুন্দর ঢাকা শহর। এই রূপান্তরের রূপান্তর কে? সংকটকে সম্ভাবনা রূপ দিয়েছে কে? আমাদের সাহস, আমাদের স্বপ্নের বর্ণিল ঠিকানা, কে তিনি? শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আইন বিষয়ক সম্পাদক নাজিবুল্লাহ হিরু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপি প্রমখ।