পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, কোনো কিছুই কখনো থেমে থাকে না। আমাদেরকে কেউ যদি অনৈতিক বা অযৌক্তিকভাবে কোনো সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে, দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অপশন খুঁজে নেবে। সব কিছুরই বিকল্প রয়েছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকায় জেলা প্রশাসন ইকোপার্কে জেলা প্রশাসন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রশিক্ষণের শেষ দিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সারজিস। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, বড় বড় পরাশক্তি অনেককেই চেপে ধরার চেষ্টা করেছে, সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনশেষে ওই ছোট ছোট শক্তিগুলো আরো অসংখ্য বিকল্প পথের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়েছে।
সারজিস আলম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা বলেছি কিন্তু, বাংলাদেশ-ভারত দুটি পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ। কখনো এই দুটি দেশের সম্পর্ক এমন হয়ে যাবে না যে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে, আমরা এটা প্রত্যাশাও করি না। কিন্তু ভারতের কাজ, তারা বাংলাদেশকে কীভাবে ডিল করছে, কোন চোখে দেখছে এই জিনিসগুলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কগুলো নির্ধারণ করবে। একটা জিনিস কি, কোনো কিছু কখনো থেমে থাকে না।’
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশ যদি তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক চুক্তি বা অন্য সুযোগ–সুবিধার জায়গায় আমাদের এ রকম চেপে ধরার চেষ্টা করে, আমরা মনে করি পুরো বিশ্ব আমাদের জন্য খালি রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে ভারত রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় বরং ভারত একটা দেশ হিসেবে ফাংশন করবে এবং দেশ হিসেবে আরেক দেশের সঙ্গে তার যে বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো সেগুলো করবে এবং বজায় রাখবে।’
সারজিস আলমের প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত—সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর এমন এ মন্তব্যের জবাবে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে আমরা মনে করি যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দুদু ভাই (শামসুজ্জামান দুদু) যে মন্তব্যটি করেছেন, এটি হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্য, এটি দল হিসেবে বিএনপির নয়, প্রথমত। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রত্যাশাও করি না।’
সারজিস আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে তাঁরা আমাদের সিনিয়র, আমরা চাই তাঁদের দেখে আমরা শিখব, সামনের দিকে এগিয়ে যাব। তাঁরা যদি যাঁরা বয়সের দিক থেকে অন্তত অনুজ রয়েছেন, তাঁদের সামনে রেখে প্রতিহিংসামূলক বা ছোট করে কথা বলার কালচারটা আবার তৈরি করেন, যেটা আমরা দেখতাম, শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে নিয়ে ছোট করে বিভিন্ন কথা বলতেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছোট করে বিভিন্ন কথা বলতেন। এটা কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক যে ব্যক্তিত্ব তাঁদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে ফেলেছে। তো আমরা তো একই কালচার আর তাঁদের কাছে বা তাঁদের মাধমে দেখতে চাই না।’
সারজিস আলম বলেন, গতানুগতিক কৃষি করতে করতে কৃষকরা এখন ক্লান্ত। এখানে ঠিকমতো না আছে উপার্জন, না আছে কোনো নিশ্চয়তা। তাই কৃষির পাশাপাশি আমাদের বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। এই এলাকার অনেক মানুষ আছে, যারা জমি বিক্রি করে হলেও ১০ লাখ টাকা দিয়ে পিয়নের চাকরি করতে চাইবে। একদিকে এটা ঘুষ, দ্বিতীয় মেধার লড়াই থাকছে না। তৃতীয়ত, এখান থেকে সৎপথে কখনো সচ্ছল জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। আমরা যদি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মূলধন নিয়ে কোনো ব্যবসায় যাই, তাহলে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগটা এখানে বেশি।
সারজিস বলেন, লেখাপড়ার পরিবেশ একেবারে শেষ হয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে তা ঠিক নয়। তবে কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যারা কথা বলছেন, এই মানুষগুলো আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন কি না তার নিশ্চিয়তা ছিল না। এই ছাত্রদের এত ত্যাগ, এত রক্তের পরেই কিন্তু এই অভ্যুত্থান এবং এই মানুষগুলো এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারছে। আগামীতে যেই রাজনৈতিক দল নেতৃত্বে আসুক না কেন, যে ছাত্ররা এই অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের প্রতি এতটুকু শ্রদ্ধা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গের থাকা উচিত। বিএনপি বড় দল হিসেবে এই প্রত্যাশা আরো বেশি।
নববর্ষ নিয়ে সারজিস বলেন, শো অফের জন্য যেন বাইরের যে অপসংস্কৃতিগুলো রয়েছে, তা সংস্কৃতির অংশ না বানিয়ে দিই। একজনের সংস্কৃতি অন্যজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কাজও যেন আমরা না করি। সবার সংস্কৃতির ওপর আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। নববর্ষে আমাদের এলাকায় হালখাতা হতো, উৎসবের মতো আমেজ থাকত। আমাদের এলাকায় ইলিশ এত সহজলভ্য ছিল না। আমি বাড়িতে পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেয়েছি এমন হয়নি। তবে বাড়িতে পান্তা ভাত, সিঁদলের ভর্তা, পেলকা ও তিতারি শাক রান্না হতো।
জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, মুক্তা চাষ কর্মশালার প্রশিক্ষক ড. নজরুল ইসলাম, পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, পঞ্চগড় জজ কোর্টের পিপি আদম সুফী প্রমুখ বক্তব্য দেন।