Dhaka শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন লক্ষ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : 

নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কথা বলতে ৩২ সদস্যের মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফে পৌঁছেছেন। সেখানে পৌঁছে তারা রোহিঙ্গা ১৮০ পরিবারে সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি কাঠের ট্রলারে করে টেকনাফ পৌরসভার বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে এসে পৌঁছায়।

সেখানে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মুহাম্মদ সামছু দ্দৌজা।

এরপর জেটিঘাট থেকে গাড়িতে করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে নেওয়া হয় টেকনাফ পৌরসভার নেটংপাড়ার নাফ নদীর তীরের নদী নিবাস বাংলোতে। সকাল ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

মুহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, প্রতিনিধিদলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একটি দল নদী নিবাস রেস্টহাউসে, অপর দলটি গণপূর্ত বিভাগের রেস্টহাউসে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত, প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আছে কি না এবং রোহিঙ্গাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আজ বিকেলে নাফ নদী অতিক্রম করে প্রতিনিধিদলটির মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

উপস্থিত রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনভাবে বসবাসের নিরাপত্তা ও সুযোগ দেওয়া হলে তাঁরা ফিরে যেতে রাজি হবেন। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের কোনো আশ্রয়শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করলে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, এর আগে রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল টেকনাফে এসেছিলে দুবার। প্রথমবার গত ১৫ মার্চ টেকনাফ এসে শতাধিক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমারের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ মে টেকনাফে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকগুলোতেও রোহিঙ্গারা একই মতামত তুলে ধরেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখাতে গত ৫ মে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে রাখাইন রাজ্যে নেওয়া হয়।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

টেকনাফের চলমান দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান আশা করছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের আগে যেকোনো মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। এ জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে।

চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট কেন্দ্রে আনা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার শেষে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের কারিগরি প্রতিনিধি দল বুধবার ফিরে যায়। তালিকা যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের কারিগরি প্রতিনিধি দল ১৫ মার্চ টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাট হয়ে বাংলাদেশে আসে। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তাদের থেকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে জন্ম নেওয়া ওই পরিবারের শিশুদেরও নথিভুক্ত করেছে কারিগরি প্রতিনিধি দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় আবারও এসেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কারের ভবিষ্যৎ পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেব না : নাহিদ ইসলাম

টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন লক্ষ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল

প্রকাশের সময় : ০৪:০৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : 

নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কথা বলতে ৩২ সদস্যের মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফে পৌঁছেছেন। সেখানে পৌঁছে তারা রোহিঙ্গা ১৮০ পরিবারে সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি কাঠের ট্রলারে করে টেকনাফ পৌরসভার বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে এসে পৌঁছায়।

সেখানে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মুহাম্মদ সামছু দ্দৌজা।

এরপর জেটিঘাট থেকে গাড়িতে করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে নেওয়া হয় টেকনাফ পৌরসভার নেটংপাড়ার নাফ নদীর তীরের নদী নিবাস বাংলোতে। সকাল ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

মুহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, প্রতিনিধিদলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একটি দল নদী নিবাস রেস্টহাউসে, অপর দলটি গণপূর্ত বিভাগের রেস্টহাউসে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত, প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আছে কি না এবং রোহিঙ্গাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আজ বিকেলে নাফ নদী অতিক্রম করে প্রতিনিধিদলটির মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

উপস্থিত রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনভাবে বসবাসের নিরাপত্তা ও সুযোগ দেওয়া হলে তাঁরা ফিরে যেতে রাজি হবেন। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের কোনো আশ্রয়শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করলে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, এর আগে রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল টেকনাফে এসেছিলে দুবার। প্রথমবার গত ১৫ মার্চ টেকনাফ এসে শতাধিক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমারের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ মে টেকনাফে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকগুলোতেও রোহিঙ্গারা একই মতামত তুলে ধরেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখাতে গত ৫ মে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে রাখাইন রাজ্যে নেওয়া হয়।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

টেকনাফের চলমান দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান আশা করছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের আগে যেকোনো মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। এ জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে।

চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট কেন্দ্রে আনা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার শেষে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের কারিগরি প্রতিনিধি দল বুধবার ফিরে যায়। তালিকা যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের কারিগরি প্রতিনিধি দল ১৫ মার্চ টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাট হয়ে বাংলাদেশে আসে। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তাদের থেকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে জন্ম নেওয়া ওই পরিবারের শিশুদেরও নথিভুক্ত করেছে কারিগরি প্রতিনিধি দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় আবারও এসেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল।