স্পোর্টস ডেস্ক :
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আর আন্তর্জাতিক ফরম্যাটটিতে দেখা যায়নি নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনকে। ফলে টি-টোয়েন্টিতে তার ভবিষ্যৎ কী হবে সেই জল্পনা চলছিল। আরেকটি বিশ্বকাপ (২০২৬) শুরুর মাত্র তিন মাস বাকি থাকতেই অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন উইলিয়ামসন। একইসঙ্গে বাকি দুই ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
এমনিতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার পর এই দেড় বছরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি তিনি। নেতৃত্বও ছেড়েছেন বেশ আগেই। তরুণ ও আগ্রাসী বেশ কজন ব্যাটসম্যানের উত্থাতে তার জায়গাও ছিল চ্যালেঞ্জের মুখে। তার পরও তিনি খেলা চালিয়ে গেলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে উপমহাদেশের বিশ্বকাপে তার অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগাত নিউ জিল্যান্ড।
বিশ্বকাপে তাকিয়েই গত কয়েক মাসে তাকে টি-টোয়েন্টি দলে রাখতে চাইছিল দল। কিন্তু জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে না যাওয়ার পর গত মাসে দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তিনি খেলেননি চোট ও ব্যক্তিগত কারণ মিলিয়ে। তাকে নিয়ে তাই অনিশ্চয়তার মেঘ জমা হয়েছিল বেশ। অবসরের সিদ্ধান্তে এবার সবকিছুর অবসান।
শুধু সাম্প্রতিক মাসগুলোতেই নয়, নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেছে বেছে খেলেন তিনি অনেক দিন ধরেই। এজন্যই প্রায় ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন কেবল ৯৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। খুব আগ্রাসী ব্যাটসম্যান না হলেও এই সংস্করণে কার্যকর হওয়ার পথ তিনি বের করে নিয়েছিলেন। ১৮টি ফিফটিতে রান করেছেন ২ হাজার ৫৭৫, কিউইদের হয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ব্যাটিং গড় ৩৩.৩৩, স্ট্রাইক রেট ১২৩.০৮। সেরা ইনিংস ৯৫ রানের।
নিউ জিল্যান্ডের রেকর্ড ৭৫ ম্যাচে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখানে জয় ৩৯টি। তার নেতৃত্বে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে দল, সেমি-ফাইনালে খেলেছে ২০১৬ ও ২০২২ বিশ্বকাপে।
তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই দেশকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিচেল স্যান্টনার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন উইলিয়ামসন। সবশেষ তাকে দেখা গেছে ইংল্যান্ডের দা হান্ড্রেড ও টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে মিডলসেক্সের হয়ে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। তার আগে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে উইলিয়ামসন বলছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে যার (টি-টোয়েন্টি) অংশ হতে পেরে ভালো লাগার অনুভূতি ছিল এবং এখানে তৈরি হওয়া স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। নিজের এবং দলের কথা বিবেচনায় নেওয়ার এটাই সঠিক সময়। এটি আসন্ন সিরিজ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সিদ্ধান্ত নিতে দলকে একটা নিশ্চয়তা দেবে।
জাতীয় দলে তরুণ উত্তরসূরী ও অধিনায়কের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এখন টি-টোয়েন্টিতে আমাদের অনেক প্রতিভা আছে, তাদেরকে নিয়ে ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মিচ (মিচেল স্যান্টনার) দুর্দান্ত অধিনায়ক এবং নেতা, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সে দলকে টেনে নিয়ে চলছে। এই ফরম্যাটে ব্ল্যাকক্যাপদের এগিয়ে নেওয়ার গুরুভার তাদের ওপর এবং আমি যতটা সম্ভব সমর্থন দিয়ে যাব।
নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান বলেও কোচ রব ওয়াল্টারকে জানিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। তবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী স্কট উইনিঙ্ক বলছেন, আমরা কেইনকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আমরা যতটা সম্ভব তাকে জাতীয় দলে খেলতে দেখতে চাই। ফলে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। তিনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী স্কট উইনিঙ্ক বলেন, খেলোয়াড় হিসেবে কেনের পারফরম্যান্স এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে তার অবদান অনন্য, বিশ্বের নানা প্রেক্ষাপটে তার রানপ্রবাহ প্রমাণ করে, তিনি কতটা বিশ্বমানের ব্যাটার। মাঠে ও মাঠের বাইরে তার নেতৃত্বের প্রভাবও সমানভাবে প্রশংসনীয়। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে কেন খেলবেন—এটা জেনে আমি সব নিউজিল্যান্ডবাসীকে আহ্বান জানাবো, আমাদের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারকে মাঠে খেলার সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না।
ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ খেলবে নিউজিল্যান্ড। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের জন্য উইলিয়ামসন প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উইনিঙ্ক। ওয়ানডের কথা উল্লেখ না করায় ধারণা করা হচ্ছে– সম্ভবত আসন্ন ক্যারিবীয়দের সফরে কেবল টেস্টে খেলবেন উইলিয়ামসন।
স্পোর্টস ডেস্ক 
























