Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝুলে গেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার সেতু নির্মাণকাজ

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামের পাশে খালের ওপর একটি সেতুর কাজ থমকে গেছে। দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। যে কারণে কাজ বন্ধ করে দেয় এলজিইডি। এখনও ২০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার বিকেলেও জেলা প্রশাসন, জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে একাধিক আবেদন জমা পড়ে।

সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। মঙ্গলবার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন দড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক কামাল, জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, দড়িকান্দি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির, ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তার ও শাহ আলী।

তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের তথ্যমতে, জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের পাশে খালের ওপর ২০২২ সালে ৫০ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজের অনুমোদন হয়। জিসিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ টাকার সেতুটি নির্মাণকাজ পায় গ্রিন এম কে (জেবি) কোম্পানি। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ অসমাপ্ত থাকায় প্রথম দফায় ১ বছর এবং দ্বিতীয় দফায় ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্ধিত সময়েও সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় গত ২৬ জুন চুক্তি বাতিল করেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০২২ সালে কাজটি শুরু হলেও পরের বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ১৪টি পিলারের পাইলিং বাকি থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ফসলি জমিতে পানির প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে খালের বাঁধ কেটে দেয়। বর্ষা পরবর্তী সময়ে প্রায় ৬ মাস সেতুর কাজ বন্ধ থাকে। পিলার নির্মাণের সময় কাজের মান খারাপ হওয়ায় একাধিকবার ভেঙে যায়। কখনও শ্রমিক সংকট, কখনও কোম্পানির যথাসময়ে সাইটে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ না করা, নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের বৈরী আচরণ, সাইডে নির্মাণসামগ্রী রাখা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে একাধিকবার বাগবিতণ্ডার কারণে কাজে ধীরগতি চলে আসে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রধান ঠিকাদার নাজমুল হাসান সবুজ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় আরও জটিলতা দেখা দেয়। গ্রামবাসীর একাধিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অংশীদারি আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সাইটের দায়িত্ব নেন। চলতি বছরের ৬ জুন পর্যন্ত সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। এখনও বাকি ২০ শতাংশ কাজ।

দড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক কামাল, প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তার জানান, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে গ্রামবাসীর অর্থায়নে একটি সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে শুধু লোকজন আসা-যাওয়া করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে এখান দিয়ে প্রায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে। গ্রামটিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, একটি কিন্ডারগার্টেন, একটি হাট রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র। সব মিলিয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কোনো কারণে কাজ থেমে গেলে গ্রামবাসীর তাগাদায় তা আবার শুরু হতো। চলতি বছরের ২৬ জুন কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তির জন্য মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ফাহিম সরকার বলেন, আমি জুনের ২৩ তারিখে অ্যাপ্রোচে (সংযোগ সড়ক) ভরাটের জন্য সাইটে বালু এনেছিলাম। দুই দিন অপেক্ষার পর ঠিকাদার জানালেন বালু ফেললে নির্বাহী প্রকৌশলী বিল দেবেন না। তাই আমি বালু অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছি।

গ্রিন এম কে (জেবি) কোম্পানির একজন অংশীদার রাজিব হোসেন। তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী কাজটি বাতিল করে দিয়েছেন এবং বিল দেবেন না বলে জানিয়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে কাজটি বন্ধ রাখতে হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী খোয়াজুর রহমানের ভাষ্য, গত সপ্তাহে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি আলোচনায় থাকায় আগের কর্মকর্তা থেকে জেনেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়াতে কাজটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে অবশিষ্ট কাজের প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

২০০ মিটার কাঁচা রাস্তায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানে চলাচলে দুর্ভোগ

ঝুলে গেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার সেতু নির্মাণকাজ

প্রকাশের সময় : ০১:০৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামের পাশে খালের ওপর একটি সেতুর কাজ থমকে গেছে। দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। যে কারণে কাজ বন্ধ করে দেয় এলজিইডি। এখনও ২০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার বিকেলেও জেলা প্রশাসন, জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে একাধিক আবেদন জমা পড়ে।

সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। মঙ্গলবার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন দড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক কামাল, জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, দড়িকান্দি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির, ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তার ও শাহ আলী।

তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের তথ্যমতে, জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের পাশে খালের ওপর ২০২২ সালে ৫০ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজের অনুমোদন হয়। জিসিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ টাকার সেতুটি নির্মাণকাজ পায় গ্রিন এম কে (জেবি) কোম্পানি। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ অসমাপ্ত থাকায় প্রথম দফায় ১ বছর এবং দ্বিতীয় দফায় ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্ধিত সময়েও সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় গত ২৬ জুন চুক্তি বাতিল করেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০২২ সালে কাজটি শুরু হলেও পরের বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ১৪টি পিলারের পাইলিং বাকি থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ফসলি জমিতে পানির প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে খালের বাঁধ কেটে দেয়। বর্ষা পরবর্তী সময়ে প্রায় ৬ মাস সেতুর কাজ বন্ধ থাকে। পিলার নির্মাণের সময় কাজের মান খারাপ হওয়ায় একাধিকবার ভেঙে যায়। কখনও শ্রমিক সংকট, কখনও কোম্পানির যথাসময়ে সাইটে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ না করা, নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের বৈরী আচরণ, সাইডে নির্মাণসামগ্রী রাখা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে একাধিকবার বাগবিতণ্ডার কারণে কাজে ধীরগতি চলে আসে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রধান ঠিকাদার নাজমুল হাসান সবুজ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় আরও জটিলতা দেখা দেয়। গ্রামবাসীর একাধিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অংশীদারি আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সাইটের দায়িত্ব নেন। চলতি বছরের ৬ জুন পর্যন্ত সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। এখনও বাকি ২০ শতাংশ কাজ।

দড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক কামাল, প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তার জানান, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে গ্রামবাসীর অর্থায়নে একটি সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে শুধু লোকজন আসা-যাওয়া করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে এখান দিয়ে প্রায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে। গ্রামটিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, একটি কিন্ডারগার্টেন, একটি হাট রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র। সব মিলিয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কোনো কারণে কাজ থেমে গেলে গ্রামবাসীর তাগাদায় তা আবার শুরু হতো। চলতি বছরের ২৬ জুন কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তির জন্য মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ফাহিম সরকার বলেন, আমি জুনের ২৩ তারিখে অ্যাপ্রোচে (সংযোগ সড়ক) ভরাটের জন্য সাইটে বালু এনেছিলাম। দুই দিন অপেক্ষার পর ঠিকাদার জানালেন বালু ফেললে নির্বাহী প্রকৌশলী বিল দেবেন না। তাই আমি বালু অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছি।

গ্রিন এম কে (জেবি) কোম্পানির একজন অংশীদার রাজিব হোসেন। তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী কাজটি বাতিল করে দিয়েছেন এবং বিল দেবেন না বলে জানিয়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে কাজটি বন্ধ রাখতে হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী খোয়াজুর রহমানের ভাষ্য, গত সপ্তাহে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি আলোচনায় থাকায় আগের কর্মকর্তা থেকে জেনেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়াতে কাজটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে অবশিষ্ট কাজের প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।