ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে জামায়াত নেতা এনামুল হক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কাওসার লস্করকে (৫৫) গভীর রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার চাঁদপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কাওসার লস্কার একই এলাকার লুৎফর লস্কারের ছেলে।
জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রায় ২০-৪০ জন চানপাড়া গ্রামে কাওসার লষ্করের বাড়িতে যায়। পুলিশ পরিচয়ে তারা কাওসারকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী রেললাইনের পাশে বন্ধগেট এলাকায় তার পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মামলা দেওয়া, পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া ছিল কাওসারের প্রতিদিনের কাজ। তার অত্যাচারে এলাকাবাসী ঘরে থাকতে পারতো না। বিনা কারণে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন সাধারণ মানুষকে। তার বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এনামুল হত্যার অভিযোগে মামলাও রয়েছে থানায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। কয়েকদিন হলো বাড়িতে এসে বসবাস করছিলেন।
স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জন মুখোশধারী লোক কাওসার লস্করের বাড়িতে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরে বাড়ির পাশের রেলগেট এলাকায় তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়। পরিবারের লোকজন কাওসার লস্করকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী ওজুলা বেগম জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ২০ থেকে ৪০ জন ব্যক্তি বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলে এসে পুলিশ পরিচয় দেয়। পুলিশের কথা শুনে বাড়ির দরজা খুলে দিলেই বাড়িতে ঢুকে কাওসারকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে চানপাড়া গ্রামের মাঠে রেললাইনের পাশের রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। তবে কারা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে চিনতে পারেননি। তাদের সবার মুখ বাধা ছিল বলে তিনি বলেন।
কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, ২০১৪ সালে উপজেলা জামায়াত নেতা এনামুল হক মাস্টার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্টের পর কোটচাঁদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। কওসার সেই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, তার বাড়িতে রাতে পুলিশের কোনো টিম যায়নি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।