Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝড়ের সময় জন্ম নেওয়া শিশুর নাম রাখা হলো ‘মোখা’

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষায় সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ প্রসূতি জন্ম দিয়েছে পাঁচজন সন্তান। এদের মধ্যে হাসপাতালে আসার সময় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবকালে সবচেয়ে ভোগান্তি পাওয়া প্রসূতি নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন ‘মোখা’।

রোববার (১৪ মে) মোখা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পেকুয়ার এয়ার আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে আশ্রয় নেওয়া জয়নব বেগম (১৯) এই শিশুটির জন্ম দেন। তিনি রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলা পাড়ার মো. আরকানের (২২) স্ত্রী।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ায় তাণ্ডবের ভয়ে অন্যদের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা জয়নবকেও গত শনিবার রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।

আশ্রয়কেন্দ্রে আসার কয়েক ঘণ্টা পর রাতের ১টার দিকে জয়নবের প্রসববেদনা শুরু হয়। বেদনায় কাতরাতে শুরু করলে হাসপাতালের নিচে গাড়ি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বামী আরকান। কিন্তু মধ্যরাতে তিনি কোনো গাড়ি পাচ্ছিলেন না।

ঠিক ওই সময় আশ্রয়ণকেন্দ্র পরিদর্শনে যান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার। দুর্গত দম্পতির অসহায়ত্ব দেখে সরকারি গাড়িতে তুলে নেন তিনি। দিয়ে আসেন ১২ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। সেখানেই রোববার (১৪ মে) ভোরে জয়নব এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পরে সকাল ১০টার দিকে জয়নব তার সন্তানকে নিয়ে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেমে গেলে সন্ধ্যায় তারা বাড়ি ফেরেন। পরে ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের নাম রাখেন মোকাম্মেল হোসেন মোখা।

মো. আরকান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে রাত ১টার দিকে প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছিলেন আমার স্ত্রী। মধ্যরাতে কোথাও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। ঠিক ওই সময় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন পেকুয়া থানার ওসি। আমাদের অসহায়ত্ব দেখে তিনি নিজের গাড়িতে তুলে ১২ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যান।

প্রথম সন্তান জন্ম দিয়ে উচ্ছ্বসিত জয়নব বেগম বলেন, ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। স্যার না থাকলে আমার কী অবস্থা হতো, জানি না।

জয়নবের স্বামী মো. আরকান বলেন, স্ত্রী জয়নবের প্রসবযন্ত্রণা হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তখন পেকুয়া থানার ওসি স্যার নিজের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। আমাদের কোলজুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলেসন্তান আসে। আমি খুশি হয়েছি এবং দুর্যোগকালীন সময়ে বিপদে এগিয়ে আসায় ওসি ও পুলিশের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ওসি ওমর হায়দার বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রসব বেদনায় কাতরানো ওই নারীকে আমি দুর্গত এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওই মুহূর্তে আমার সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না। পুলিশের কাজ তো জনকল্যাণ। আমি সে কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। ওই নারীর ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না : গয়েশ্বর

ঝড়ের সময় জন্ম নেওয়া শিশুর নাম রাখা হলো ‘মোখা’

প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষায় সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ প্রসূতি জন্ম দিয়েছে পাঁচজন সন্তান। এদের মধ্যে হাসপাতালে আসার সময় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবকালে সবচেয়ে ভোগান্তি পাওয়া প্রসূতি নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন ‘মোখা’।

রোববার (১৪ মে) মোখা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পেকুয়ার এয়ার আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে আশ্রয় নেওয়া জয়নব বেগম (১৯) এই শিশুটির জন্ম দেন। তিনি রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলা পাড়ার মো. আরকানের (২২) স্ত্রী।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ায় তাণ্ডবের ভয়ে অন্যদের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা জয়নবকেও গত শনিবার রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।

আশ্রয়কেন্দ্রে আসার কয়েক ঘণ্টা পর রাতের ১টার দিকে জয়নবের প্রসববেদনা শুরু হয়। বেদনায় কাতরাতে শুরু করলে হাসপাতালের নিচে গাড়ি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বামী আরকান। কিন্তু মধ্যরাতে তিনি কোনো গাড়ি পাচ্ছিলেন না।

ঠিক ওই সময় আশ্রয়ণকেন্দ্র পরিদর্শনে যান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার। দুর্গত দম্পতির অসহায়ত্ব দেখে সরকারি গাড়িতে তুলে নেন তিনি। দিয়ে আসেন ১২ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। সেখানেই রোববার (১৪ মে) ভোরে জয়নব এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পরে সকাল ১০টার দিকে জয়নব তার সন্তানকে নিয়ে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেমে গেলে সন্ধ্যায় তারা বাড়ি ফেরেন। পরে ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের নাম রাখেন মোকাম্মেল হোসেন মোখা।

মো. আরকান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে রাত ১টার দিকে প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছিলেন আমার স্ত্রী। মধ্যরাতে কোথাও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। ঠিক ওই সময় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন পেকুয়া থানার ওসি। আমাদের অসহায়ত্ব দেখে তিনি নিজের গাড়িতে তুলে ১২ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যান।

প্রথম সন্তান জন্ম দিয়ে উচ্ছ্বসিত জয়নব বেগম বলেন, ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। স্যার না থাকলে আমার কী অবস্থা হতো, জানি না।

জয়নবের স্বামী মো. আরকান বলেন, স্ত্রী জয়নবের প্রসবযন্ত্রণা হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তখন পেকুয়া থানার ওসি স্যার নিজের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। আমাদের কোলজুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলেসন্তান আসে। আমি খুশি হয়েছি এবং দুর্যোগকালীন সময়ে বিপদে এগিয়ে আসায় ওসি ও পুলিশের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ওসি ওমর হায়দার বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রসব বেদনায় কাতরানো ওই নারীকে আমি দুর্গত এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওই মুহূর্তে আমার সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না। পুলিশের কাজ তো জনকল্যাণ। আমি সে কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। ওই নারীর ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি।